গ্রাম্য বধুয়া-৩
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৩২:১২ রাত
নামায পড়ে বের হতে হতে নজীব বলে উঠল সাবিকভাই আপনি চলেন ঢাকায় এম বি এ জন্য ঢাবিতে একটা চেষ্টা চালাবেন।সাবিক মৃদু কন্ঠে উত্তর দিল,বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ডিগ্রি নিতে হবে যাতে আয় রোজগারের একটা পথ হয়।কিন্তু ওটাকে জীবনের চরম লক্ষ্য বানিয়ে নিতে চাই না।খুব ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল রেজাল্টের ধান্ধা করলে ক্যারিয়ার গড়ে তুলবার নেশায় পেয়ে বসবার আশস্কা রয়েছে যে।আমার যে স্বপ্ন অত দুর নয়।
হঠাত্ দেখা হল,
সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় পর নজীবের বাবাকে সাবিক বুঝিয়ে বলল,চাচা মেডিক্যালে পড়াশুনা অনেক জটিল দুদিন পর পর পরীক্ষা থাকে।অনেক পড়াশুনার চাপ।শুনলাম আপনি ওকে বড় আপার আপার বাসায় থাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন বরং হোস্টেলে থাকলেই ভাল হবে আপার বাসার চেয়ে।অনেকের সাথে
দল বেধে পড়বে সেটায় বরং ভাল হবে আপনি অহেতুক চিন্তা করবেন না ও হোস্টেলেই উঠুক।
যেন একটা দুঃচিন্তা কেটে গেল নজীবের বাবার আর নজীবের।সাবিক
মুলত গ্রামের একটা অভিভাবকে পরিনত হয়ে গিয়েছে।সবার চিন্তাগুলো তার কাধেই যেন অজান্তে এসে পড়ে।ধৈর্য সহকারে সেগুলো সে বই এর নাক ডুবে পড়তে পড়তে খুঁজে বের করার অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যায়।ওর ঘর যেন একটা বই এর লাইব্রেরি।
পথে পথে হাটতে হাটতে নজীব বলে উঠল,সাবিক ভাই এখন আমাদের "বাতিঘর" একজন শিক্ষক কমে যাচ্ছে যে।
হুম নজীব,চিন্তার কিছু নেই একজন নতুন টিচার ঠিক হয়েছে শুনলাম।
সাবিলার কাছে।
এই "বাতিঘর" প্রকল্পটি বয়স প্রায় ছয় বছর।
গ্রামের একদম হত দরিদ্র আর নিম্ন মধ্যবিত্তের পরিবারের যেন স্বপ্ন তৈরি আর গড়ার একটি স্বপ্নের কারখানা।মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তরাও এরূপ নৈতিকচরিত্র সম্পূর্ণ সন্তানের স্বপ্নে ভর্তি করাচ্ছেন সন্তানদেরকে।
এ পর্যন্ত প্রায় প্রায়৩৫০ ছাত্র ছাত্রী এই চমত্কার প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠ্য শেষ করে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে ক্লাস সিক্সে।এখনও প্রায় ১৫০জন ছাত্র ছাত্রী আছে।
একথা গুলো সাবিলা বলছিল তার সেই প্রিয় আপুমনি তাহমিদাকে।
হুম বুঝলাম এটা একটা কোচিং সেন্টার।ঠিক আছে ত
এই শিক্ষার নতুনত্ব কি?
এখানে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ১৪০০বছরের আগের জ্ঞান প্রতিনিহত দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভাল ত।কয় ঘন্টা ব্যাপী চলে।কজন শিক্ষক?
প্রতিদিন তিন ঘন্টা।মোট ছয়জন।একজন চলে যাচ্ছে।তাই ত আপনাকে এত অনুরোধ করছি।
ওকে কি লক্ষ্য এই স্কুলের শুনি সাবিলা বুড়ি?
বাঁশকে মুলত কাচা অবস্থায় বাকাতে হয় কারণ কচি অবস্থায় কোমল ডালকে বাকানো অতি সহজ।পেকে গেলে ঢাস করে ফেঁটে যায়।বুঝতে পেরেছেন আপুমনি।
গোল গোল অবাক চোখে তাকিয়ে তাহমিদা বলল এটা কি মঙ্গল গ্রহের ভাষা।প্লিজ এক্সপ্লেইন।
এই ভাষা ত আমি বলিনি ভাইয়া বলছে,
আমরা মুলত তিনটি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েছি,
তৃতীয়,চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেনী ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গিয়ে ডেকে এনে ছয় বছর আগে এই চমক কৃত প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছে ভাইয়া।
তিন ঘন্টার ক্লাসে ৪টা বিষয় দুই ঘন্টা পড়ানো হয়।বিজ্ঞান, অংক, ইংলিশ এবং সাধারণ জ্ঞান। তারপর তাদের টানা এক ঘন্টা ১৪০০বছর আগের সোনালী স্বর্ণ যুগের ঘটনাকে সুন্দর গল্পের আকারে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়।নবী রাসূল সাহাবা থেকে শুরু করে যুগ যুগ ধরে আদর্শ ব্যক্তিদের ইতিহাসকে স্পষ্ট তুলে ধরার প্রাণপন চেষ্টা করা হয় যাতে কচি মনগুলোতে পবিত্র আলো ঢোকে।ওরা নৈতিকতা আর বাস্তবিকতার জ্ঞান দ্বারা নিজেদেরকে একান্তভাবে মানুষ রূপে চিনতে পারে ছোটবেলা থেকে এটায় হচ্ছে আমাদের বাতিঘরের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।
এবার ঠিক আছে।
অসাধারণ।এমন একটা প্রতিষ্ঠানে আমার ডাক এসেছে।অবশ্যই জয়েন করা উচিত।
দুজনের প্রানেই যেন প্রশান্তি আর মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে ছুটে চলা শুরু হল।সামনে দেখা যাক কি হয়।
[নতুন মস]
(মুলত 'বাতিঘর'এর স্বপ্ন আমাদের ছিল এখনও আছে আমাদের গ্রামে এই স্কুলটি শুরু করেছিলাম আমরা কিন্তু এক বছর পর শিক্ষকের অভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।তবে আমাদের বিশাল পরিকল্পনাটি এখন আছে।
ইনশাআল্লাহ একদিন আমাদের বাতিঘরে আবার বাতির আলো জ্বলবে।)
(চলবে)
ইনশাআল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন