খুন... রক্ত... নেশা... ভালবাসা

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:২৬:০৫ রাত

[একটা কাহিনী লিখব ভাবছি।তবে সর্বপ্রথম একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করিঃ

খুব সকালে একটা রিক্সা নিয়ে ভার্সিটির একটা হলে রওনা হলাম...

উদ্দেশ্য ভাইয়াকে নিয়ে আমার এক শিক্ষকের কাছে কাউন্সিলিং জন্য নিয়ে যাওয়া।

ওর ধারণা ও ভয়ানক বাই পোলারে আক্রান্ত।ইন্টারনেট ঘেটে অজস্র তথ্য জেনেছে।সে অনুসারে ঔষধের প্রয়োগ নিজেই করে থাকে।

সব সমস্যার বড় সমস্যা ওর স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত

সৃষ্টি ধরছে।

খুব সুন্দর করে বললামঃ

ভাই তোর যত সমস্যা আছে সব কিছু সুন্দর করে গুছিয়ে স্যারকে বলবি ।কিন্তু স্যারকে কনফিউসনে রেখে আসবি না।আমার কেন যেন মনে হয়েছে ও ওর সমস্যা সমাধান নয় বরং স্যারের মাথায় উল্টো সমস্যা ঢুকানোর জন্যে যাচ্ছে।

যাইহোক,

যখন স্যারের রুম থেকে বের হল।

ইচ্ছে ছিল প্রশ্ন করব না তাও বললাম সব ঠিক আছে।

চোরা হাসি হেসে বললঃ

ধুরও এই স্যার সাইকোলজির কিচ্ছু জানে না।

বোঝ ঠ্যালা।ধারণা করেছিলাম,যাইহোক নিজে নিজে যারা অনেক বেশি বুঝে তাদের না বুঝানো ভাল।

পরে স্যারকে বললাম কি সমস্যা?

স্যার বলল ওকে দ্রুত একজন সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাও অবস্থা ভাল না।

বুঝলাম না আমি, স্যার নিজে কিছু বুঝেছেন কিনা। ভ্যাবাচেকায় ফেলানো ওর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মনে হল।

কিন্তু বেচারা সত্যিই বাইপোলার না হলেও কোন না কোন সমস্যায় আক্রান্ত।বুদ্ধিমান ছেলে অহেতুক নিজকে ধ্বংস করছে ধীরে ধীরে।

এমন পরিস্থিতিতে অসহায়ভাবে চেয়ে থাকতে হয়।

নিরব দর্শক।]

###অধিকাংশ সময় এখন আর অবাক হওয়া হয় না।তেমন কোন আশ্চার্যজনক ঘটনাও ঘটে না হয়ত।

প্রায় অনেকবার বাসে একা একা রংপুর গিয়েছি কখন একা আশা হয়নি।বর্ষাকালে যখন কাঁচের অপর পিঠে হালকা কুয়াশার জন্ম হয় ঠিক তখনই এই ঘটনাটি মনে পড়ে আফসা আফসা।মনে পড়ে একটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না ওটা।দুর্ঘটনা বলতে পারিনা।খুন...।

তপু পড়ত ঢাকায় একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।চমত্‍কার একটা ছেলে,দেখতেও সুন্দর।হাসিটাও সুন্দর।

ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা থেকে শুরু করে সবদিকেই তার কৃতিত্ব ছিল চোখে পড়ার মত।বাবা মা ভাই বোন গ্রামবাসী সবাই ওকে অনেক ভালবাসে।

একটা দল সব কেড়ে নিল জোর করে ওর কাছ থেকে।ছোট্ট একটা স্বপ্ন 'কুড়ে ঘর'।বাবা মার মুখে নিষ্পাপ হাসি।পুরো গ্রামের মানুষ ওকে ভদ্র আর নম্র তালুকদার বাড়ির বড় চঞ্চল ছেলেটা হিসেবে চেনে।চিনবে না ও ত ও রকমই চেনার মত।

কিছু সঙ্গ...

কিছু হেলুশন আর অলীক প্রত্যক্ষণ কেড়ে নিল ওর ছোট্ট পৃথিবীকে।পরিবারের সব সদস্য ওর ভয়ংকর শত্রু।একেকটা পিশাচ যেন কেউ ওর ভাল চায় না।রক্ত খেকো পশুঃ

যোগদিল ও লীগে।লীগের ওস্তাদরা ওকে সবচেয়ে ভাল বোঝে।অনাবিল আনন্দ কিছু নেশা অনেক মুক্ত স্বপ্ন, ভাষা, গল্প, গান চলে অবিরাম।আর অজস্র কার্ডের ইন্টারনেশনাল কলপ্রিজ খেলতে খেলতে রাতের পর রাত কাটানো জুয়ারি জীবন।খোলা মাঠ বিশাল অজস্র তারায় ঢাকা আকাশে এক প্রান্তে ও যেন নক্ষত্র চাঁদ বাবা মা ভাই বোনরা না বুঝলে কি হবে সবাই জানে।তার হাত বাড়ানো ওস্তাদরা ত বুঝে।অল্প কিছু অর্থ কড়ি ঠেলে দিলে ওর পা টাও টিপে দেয়।কি শান্তির পৃথিবী আহ!

কোন অশান্তি নেই।অশান্তি শুধু মা করে।টাকা টা না বুঝে দিলে খুব বিরক্ত লাগে।সবকিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করে।রাগ উঠলে ওর হিত বিপরীত কোন জ্ঞান থাকে না।কেন যে বুড়িটা বোঝে না ওর সুখের জন্য অল্প কিছু

টাকার আজ অনেক বেশি প্রয়োজন।

কাল ত ও অনেক টাকার মালিক হচ্ছেই নেতারা ত বলেছে।দোস্তরা আছে পাশে।তাও বুঝে না মা মাথা মোটা বাবা আর ভাইদের কথায় আঁচলে মুখ ডেকে কাঁদে মা।দুয়ারে দাড়িয়ে শুধুই ওকে পিছু ডাকে

'খোকা আয়।ওদের সাথে মিশে ধ্বংস হয়ে যাস না বাবা।'

প্রায় এই ডাকটি ও নেশা বুথ হয়ে পড়ে থাকার সময় কাতর কন্ঠে শুনতে পায়।

অনেকটা শূন্যতা ছাড়া ছাড়া বন্ধনগুলো।আশে পাশের পৃথিবীটা ওর কাছে অনেকটা ঝাপসা আর তিক্ত মনে হচ্ছে কেন?কতটা জীবন পড়ে আছে তবু মনে করে ওর সব শেষ জীবনের।কিছুই নেই যেন ওর চাওয়া এই পৃথিবীর বুকে।

অনেকটা সময় জুড়ে এই নেশায় আক্রান্ত যুবকের জীবনী বর্ণনা করছি।

আর ভাল লাগছেনা।

এখন সমাপ্তে দিকে এগিয়ে যাওয়া যাক।হয়ত অনেক কথায় অজানা পড়ে রইল।

থাক না তপুর অন্ধ জীবনের বন্ধ গল্পটি।অদেখা মায়ায় আটক দীর্ঘনিশ্বাসের করুণতা ঢেলে ডায়েরীটা বন্ধ করলাম।

তপুর পরিবার একটা মাদক নিবারক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করল।মুলত তপুর ভাই অপু আর বাবা এই উদ্দোগটি নিয়েছে।আর কোন উপায় নেই।কি করবে বলুন ত আপনি?

একটা সদা হাস্য উজ্জল ছেলেটাকে এ ভাবে শেষ দেখতে কেউ চায় না।ঈদের ছুটি।তপু অনেক বুদ্ধিমান একটা যুবক।প্রবল আত্নসন্মানবোধ।পুরো গ্রামে আজও ও ভদ্র ছেলে।

তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে কেবল রাত এল একটা ছোট্ট ব্রিজের উপর বসে আছে তপু।ব্রিজের নিচে কচুরিপানায় ঢাকা বয়ে চলছে ওর দেখা চিরচেনা খালের নোনা জল।

হঠাত্‍ ব্রিজের রেলিং এর উপর দাড়িয়ে পড়ল।টের পেয়ে গিয়েছে তপুটা হয়ত প্রিয় কোন সঙ্গীরা ওকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে।ওকে কোন নিবারক কেন্দ্রে ভর্তি করানো হবে।প্রচন্ড ধাক্কা লাগল ওর সন্মানবোধে ।দুরে সাদা মাইক্রোটা যে দাড়িয়ে।এর প্রাণ প্রিয় গ্রাম।মুক্ত খোলা আকাশ।

প্লিজ তপু না..

ভাই না.

বাবা না..

চারদিকে চিত্‍কার আসছে ত আসছে।সাতারু তপু মন কিছুই মানল না।

জ্বী, লাফ দিল তপু কচুরিপাণে ঢাকা খালে।

ঠিক তখনি অনেকেই খালে নেমে পড়ল।অন্ধকারে খোঁজাখুজি শুরু হল।পাক্কা দশ মিনিট।অতঃপর ফিরে এল তপু।মায়ের চোখের দিকে তাকাতে খুব কষ্ট হয় অপুর।এখন যেন অপু আর অপুর বাবা মায়ের চোখে খুনি।

মায়ের চোখে অশ্রু নয় প্রশ্ন থাকত না হয় আমার ছেলেটি পাগল হয়ে।নেশায় ও ওকে ধ্বংস করত।তবুও ত

হঠাত্‍ ডেকে উঠত কোন এক বিকাল বেলা ভরাট কন্ঠে বলে উঠত

"মা"।

(নতুন মস)

বি দ্রঃএটা একটা বাস্তব ঘটনা।

বিষয়: বিবিধ

২২৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File