নিতু.....
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:০৯:৫৮ রাত
[গল্প শুরু করার আগে আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করিঃ
আব্বু আর আমার কথপোকথনঃ
আব্বু আমার .....এক আত্নীয় কি বলেছে আমাকে যান উনি না আমাকে খুব অপমান....
হঠাত্ আব্বু প্রচন্ড রেগে গেলেন আমার বাক্য শেষ করার আগেই।
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখি আব্বুর চোখ লাল হয়ে গেছে।
আব্বু বললেনঃতোমরা কি শুধু অন্যের দোষ খুঁজে খুঁজে বের কর।সবসময় দেখি অন্যের নামে গীবতে মুখরিত থাক।অন্যের সম্পর্কে খারাপ ধ্যান ধারণায় নিজেদের মন মগজকে ব্যস্ত রাখ।
বেশ কিছুক্ষণ অনেক কিছু বলেছিলেন।
মাথা নীচু করে ঝরঝর করে চোখের পানি ঝরার পর বললামঃ
এত দিন ধরে এত আত্নীয় স্বজনের বাসায় আছি তুমি বললে পার কয়জন আত্নীয় স্বজনের নামে তোমার কাছে অভিযোগ পেশ করেছি।তোমার কি মনে হয় আমরা কখনই কোন সমস্যায় সম্মুখিন হয়নি।ব্যাস,
আর কোন কথা হয়নি
সেই মুহুর্ত্বে।
তবে আব্বুর প্রতি আমার আরও শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গিয়েছিল।]
স্থির বসে বসে নিতু ভাবছে ত ভাবছে।এখন শরীরটা অনেক ক্লান্ত।মানসিক দুঃশ্চিন্তা আর শারীরিক দুর্বলতা যেন আঁকড়ে ধরেছে ওকে।অযাচিত চিন্তা বাসা বেধেছে,বার বার ওকে কষ্ট দিচ্ছে ভাবনারা।অনেক প্রশ্নের উত্তরই ও জানে না পৃথিবীর।নতুন করে নিজের জীবনের অপ্রাপ্তির কথা ভাবছে ও।কি হবে ওর ভবিষ্যত যদি হঠাত্ ননদটি তার জামাই এর ঘাড়ে এসে পড়ে।যদিও এত দিন একটি সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে শত শত নারীদের জীবন সম্পর্কে কত বিচিত্র ধরনের বিশ্লেষণে মুখরিত ছিল।কত বোনকে বলেছে শুধু গীবত করা নয় শোনা থেকেও বিরত থাকতে হবে।খুব সুন্দর করে ও বুঝিয়েছে এটা কোরআন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এটা কবীরাহ গুনাহ।কিন্তু তবুও ওর জীবনে
কি ঘটল কাজের মেয়েটি আর আপুরা নানান কথা বলছে বিয়ের পর থেকে তার ননদ সম্পর্কে।
তার মনে বার বার উঁকি দিচ্ছে "এত খারাপ কি ভাবে মানুষ হয়"।আসলেই কি নিরবের পরিবারটি বাইরে থেকে ইসলামিক আলোর একটা খোলস।
ও ভাবতেই পারছেন না এতটা উগ্র হতে পারে এই ইসলামিক খোলসে ঢাকা পরিবারের কোন সদস্য।
নাহ,নিতুর মাথায় কোন যুক্তিই যুক্তি সংগত মনে হচ্ছে না।ঠিক আছে, তার হাজবেন্ড পরিবারের মধ্যে অনেক ভাল
তার প্রতি অনেক দ্বায়িত্ববান,ধার্মিক দ্বীনদ্বার।এবং তাদের পরিবার খোঁজও নিয়ে ছেলের কোন নৈতিক সমস্যা পাইনি ওর চোখে এত দিনে কোন ত্রুটি ধরা পরেনি কিন্তু তাই বলে তারি পরিবারের আরেকটি সদস্যদের নৈতিকতা এতটা খারাপ হতে পারে সে ভাবতেই পারছে না।
শত শত অযৌক্তিক মনের প্রশ্নের তীর তার অন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করছে বারংবার।কোন উত্তরই তার যেন জানা নেই ।অজস্র অশ্রুপাত আর ভারাক্রান্ত মন খারাপ ছাড়া।
না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে হাজবেন্ডের সাথে কথা বলবে কিনা।না ভাবতে পারছে শাশুড়ির সাথে কথা বলা ঠিক হবে কিনা।
তাদের ঘরের একটা সদস্য সম্পর্কে এখন সে কত কথায় না শুনতে পারছে।কত কথায় না সেদিন আপুরা বললেন আর আজ কাজের মেয়েটা যা বলল।
অনেক জড়তা সত্ত্বেও ফোনটা হাতে তুলে নিল নিতু।
একবার নিজের আম্মুর সাথে কথা বলবে ভাবল।
নাম্বার ডায়েল করেও হঠাত্ থেমে গেল নিতু।
কি সর্বনাশ? কি করতে যাচ্ছে?
নিজের সংসারের সমস্যা কষ্ট ও ওর আব্বু আম্মুর কষ্টে রূপান্তরিত করতে যাচ্ছে।
তারপর যদি তার জামাই শশুড়বাড়ি সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হয় তখন কিভাবে সে মাথা উচু করে জামাই বাড়ির প্রশংসা করবে।
লাভ কি?
বরং চুপচাপ থাকবে ও কিন্তু মানসিক কষ্ট যে কিছুতেই কাটছে না।
ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে আছে।
এই মানসিক যন্ত্রণার কারণে তার শরীর খারাপ হচ্ছে।
না জানি দুদিন পর ননদ এ বাড়িতে এসে পড়ে কিনা যে চরিত্রের কথা শুনেছে সে।দ্বিধা ছেড়ে
নিরবের বড় বোনকে ফোন করলঃ
আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট ধার্মিক।নিতুকে ভালবাসেও ওনি।হয়ত ভাল কোন পরামর্শ দিবেন।
সালাম বিনিময়ের পর নিতু তার সব কথা খুলে বলল।
নিতুঃআপু আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছিনা।
বড় আপুঃকেন তোমার কি বার বার মনে হচ্ছে একটা ইসলামিক পরিবারে এত নোংরা মেয়ে কিভাবে থাকে?
নিতুঃজ্বী আপু।
বড় আপুঃআচ্ছা।তুমি ত ভার্সিটি শেষ করেছ আর এত জীবন ধরে ইসলামের পিছনে ছুটেছ।
তুমি জান গীবতের চক্রে পড়েছ যে তুমি।যে বোনরা আজ এই কথাগুলো বলছে তোমাকে তারা কি তোমার বিয়ের পূর্বে এই কথা গুলো বলতে পারত না।কেন বলেনি?আর কাজের মেয়ের কথাটি আমাকে বেশি অবাক করছে।নির্দ্বিধায় একটা মানুষের দূর্নাম করে যাচ্ছে আর তুমি তাকে প্রশ্রয় দিয়ে ওর কথা শুনেই গেলে।তোমার কি একবারও মনে হয়নি তুমি গীবতে আক্রান্ত হয়েছ।সত্যি এটা তোমার পরিবারের সমস্যা তোমার জানারও হয়ত অধিকার আছে।তবে যে প্রক্রিয়ায় তুমি জানছ আর মানুসিক কষ্টে ভুগছ এটা সত্যি আমাকে অবাক করছে এত বুদ্ধিমতী হওয়া সত্বেও এটা ঘটল কিভাবে।
তুমি একবারও তোমার জামাই এর নামে অভিযোগ করলনা।কেন তার নামে তোমার কি কোন অভিযোগ নেই?
নিতুঃনা আপু,
আমার কোন অভিযোগ নেই।তিনি আমার দ্বায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন। বড় আপুঃনিতু তুমি ভেবে দেখ এটা তোমার পরিবার।তোমার যতটুকু হক আছে তুমি চোখ কান বন্ধ করে ততটুকু শুধু পালন করে যাও।আর শুধু মাত্র তোমার হকের হিসাব তোমাকে দিতে হবে?নিশ্চিন্ত আর কার হকের ব্যাপারে তোমাকে জিঞ্জেস করা হবে না।হয়ত তোমার ননদটা ও রকমই কিন্তু ওর এই বাস্তব পরিস্থিতির গল্পটা জান না তুমি।আর এটা জানাটাও খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।ওর হিসাব শুধু ওর জন্য নির্ধারিত আমাদেরকে দিতে হবে না।এ জন্য ওর সাথে সর্ব উত্তম আচারণ করা দরকার।কার সাথেই কথা বল না আর ।
হয়ত তোমার কষ্ট আরও বাড়বে।তাই আমি মনে করি তোমার ওর আচরণের ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তা ধরা অহেতুক।
এখন এটা তোমার পরিবার।তোমার পরীক্ষা ক্ষেত্র।তুমি সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা দিয়ে যাও।
ভালবাস ওকে।ও ওর পথে খুব কষ্টে আছে।ওকে যত ঘৃণা করে দুরে সরিয়ে দিবে ও ততই খারাপ কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিবে।
ভাল থেকো।
(নতুন মস)
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন