"তারা ভরা আকাশ" পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৫০:৫২ রাত
সাইয়ারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রোজ।ছোট্ট ছোট্ট দুটি পায়ে ইয়া বড় দুটি সেন্ডেল পরে।অপেক্ষা করে বাব্বার জন্য।নামায পড়ে বাব্বা যখন ঘরে এসে এক গ্লাস পানি পান করেন ঠিক তখন সাইয়ারা উপস্থিতি তার পাশে টের পান। মেয়েটা তার সাথে সক্কাল বেলার এই ভ্রমণটা খুব ভালবাসে।তিনিও উপভোগ করেন একান্তভাবে হেটে চলা কন্যার সাথে এই সময়টুকু।
একদম চুপচাপ মেয়েটি অপলক বাব্বার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।খুব কোমল কন্ঠে সালাম দিলেন রফিকুল সাহেব।
আসসালামুআলাইকুম বুড়ি।কেমন আছ তুমি?
ওয়ালাইকুম সালাম বাব্বা।আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।যান বাব্বা আমি সত্যি সত্যি বুড়ি হয়ে গিয়েছি।
তাই নাকি কিভাবে ?
আমার সামনের দাত পড়ে গিয়েছে।হি হি দেখ।
হাসতে হাসতেই মেয়েকে প্রশ্ন করেন আজকে কোন দিকে হাটতে যাব বলত।
বাব্বা আমি প্রথমে মসজিদের পুকুর ঘাটে ঐ গাছটির নিচে যাব।
আচ্ছা ঠিক আছে চল হাটতে শুরু করি।
সাইয়ারা আম্মাকে সালাম দিয়ে বাবার হাত ধরে গ্রামের প্রাকৃতিক সুধা পান করতে ছোটে।
মসজিদের পুকুর পাড়ে ফুলের বিশাল গাছটির নিচে অনেক ছোট্ট ছোট্ট সাদা ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।ফ্রকটি একটু একটু ভাঁজ করে ছোট দুটি হাত দিয়ে ফুল কুড়িয়ে ভাঁজে জমিয়ে রাখে ও।বাব্বা বসে ফুল কুড়াতে সাহায্য করে ওকে।
আচ্ছা বুড়ি এই চমত্কার ঘ্রাণের ফুলগুলোর নাম কি তুমি যান?
হুম...বাব্বা এগুলো ত বকুল ফুল।
ফুল কুড়নো শেষ হলে একমুঠো ফুল নাকে কাছে টেনে এনে সাইয়ারা আপন মনে চমত্কার ঘ্রাণ আশ্বাদন করে।
ফুল নাকের কাছে নিবা না বাব্বার কড়া কন্ঠ শুনে
সাইয়ারা।ও প্রশ্ন করে
কেন বাব্বা?
ফুলের মধ্যে ছোট্ট ছোট্ট পোকা আছে যেগুলো তুমি চোখেই দেখতে পারবে না।তুমি যখন এগুলো নাকের কাছে নিয়ে এসে নিঃশ্বাস নিচ্ছ তখন এগুলোর ভিতর যে পোকা থাকে সেগুলো তোমার নাকের ফুটো দিয়ে ফুসফুসে যেতে পারে।ফলে তোমার ক্ষতি হতে পারে।
ঠিক আছে বাব্বা তাহলে কি আমি ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারব না বাব্বা।
অবশ্যই পারবে ।তুমি হাতের মুঠোও অল্প কিছু ফুল নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ডেকে দাও।তারপর আঙ্গুলের উপর দিয়েই সহজে ঘ্রাণ নিতে বার।
শুকরিয়া বাব্বা।এখন কোন দিকে যাব আমরা।
সবুজ মাঠের দিয়ে চল যাই।
মাঠ প্রঙ্গনে যখন পৌছাল ওরা তখন সাইয়ারা হিমেল বাতাসের ছোঁয়ায় হালকা হালকা কাঁপছে।বাব্বা টের পেয়ে নিজের গলার মাফলার খুলে মেয়ের কানে পেছিয়ে দিলেন।
বুড়ি তোমার ঠান্ডা লাগছে, বাড়ি যাবে।
না বাব্বা।দাদা বলেছেন,যদি কান আর পা ঢাকা থাকে তাহলে আর ঠান্ডা জম থাকে না উধাও হয়ে যায়।তুমি ত আমার কান ঢেকেই দিলেছ।আচ্ছা বাব্বা এই সবুজ ধানের গাছগুলোর শীষের ঐ ঝিক ঝিক করা ঐ গুলো কি।
বুড়ি ও গুলো হচ্ছে বিন্দু বিন্দু জল।ওগুলোকে শিশির কণা বলে।
মাঠের দুই প্রান্তের মাঝখানে ছোট্ট সরু একটা রাস্তা।গ্রামের সকলেই আইল নামে চেনে।আইল ধরে বাবা কন্যা হাটতে থাকে।সাইয়ারা ত ধানের গাছের সবুজের মাঝে ডুবেই গিয়েছে ।হঠাত্ পা পিছলে সাইয়ারা বিশাল বড় বড় সেন্ডেল গুলো কাদার ডুবে গেল।আর কিছুতেই সেন্ডেল কাদা থেকে উঠতে চায় না।কিছুক্ষণ চেষ্টার পর সাইয়ারা খেয়াল করল বাব্বা বেশ দুরে চলে গিয়েছে। ওখানেই সেন্ডেল রেখে সাইয়ারা একটা ভো দৌড় দিয়ে বাব্বার পিছনে চলে গেল।খুব চুপচাপ সাইয়ারা।একটু আগে কিছুই ঘটেনি যেন।একটু পর বাব্বা যখন বলল চল ঐ রাস্তার মোড় ঘুরে বাড়িতে যাই আজকে।
না বাব্বা আমরা যে রাস্তা দিয়ে এসেছি।ঐ রাস্তা দিয়ে যাই।তাহলে কম হাটতে হবে।
আসলে কম রাস্তা বলে কথা নয়।সাইয়ারার পরিকল্পনা কিভাবে সেন্ডেল কাদা থেকে উঠাবে কম রাস্তা ত বাহানা।
সেন্ডেলের কাছাকাছি আসতেই সাইয়ারা মৃদু কন্ঠে বলে বাব্বা আমার না সেন্ডেলগুলো কাদার ডুবে গিয়েছে।
তাই বলি তুমি ত এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাবার বান্দা না।আসল ঘটনা তাহলে ইহাই।কোথায় তোমার সেন্ডেল।
ঐ যে বাব্বা ওখানে।
ওগুলো ত আমার সেন্ডেল ওগুলো এখানে আসল কিভাবে বুড়ি?
ঐ গুলো আমি পায়ে দিয়ে এসেছি বাব্বা।
কিন্তু এত বড় সেন্ডেল বুড়ি তুমি কেন পড়ে এসেছ।
দেখ বাব্বা,
ঐ সেন্ডেলগুলো পায়ে দিয়ে এসেছি বলেই আমার পায়ে কাদা লাগেনি।সেন্ডেল ডুবে গেলেও কিন্তু আমার পা মুক্ত।
বাবা কন্যার আলাপ আপাতত বন্ধ।
কন্যা রাস্তা দেখে দেখে হাটছে ।গন্তব্য এখন বাড়ি....
(চলবে)
ইনশাআল্লাহ
(গ্রাম্য পরিবেশ নিয়ে একটা গল্প লিখব ভাবছি।তবে সত্যি জানি না কয়টা পর্ব লিখতে পারব।)
বিষয়: বিবিধ
১২৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন