"কোমলতা কি শুধুমাত্র মেয়েদের ভুষণ ছেলেদের নয়"
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:২১:৩৬ রাত
রুহীর মাঝে মাঝে খুব লিখতে ইচ্ছে করে।
ইচ্ছে করে আকাশটাকে ছুঁতে।নীল সমুদ্রে অথবা পাহাড়ের বিশাল চূড়ায় হেরি পটারের মত কোন কাঠির পিঠে ভর করে গোটা পৃথিবী ঘুরতে।তবুও যদি কোন কিছুই সম্ভব না হয় তাহলে সব মানুষগুলোর হৃদয়ে কোমলতা,বিনয় আর ক্ষমাসুলভ মনোভাব একটু জাগ্রত করতে যদি ও পারত।তেমন ক্ষমতা যদি তার হাতে থাকত।সে যানে সেটা কখনও সম্ভব নয় প্রতিটি মানুষ একদম আলাদা,তাদের বেড়ে ওঠা পরিবেশ আলাদা,নিজস্ব মনোজগতটা আলাদা,
ক্ষণে ক্ষণে মনের পরিবর্তন সন্দেহ লোভ লালসা ধরণটাও একদম আলাদা,
আর একেক জনের পৃথিবী কেমন যেন একেক রকম বৈচিত্রময়।
উদাস নয়নে ভাবছে আর তরকারী কাটছে ও হঠাত্ অসচেতনায় ওর আঙ্গুল একটু কেটে যায়।সঙ্গে সঙ্গে হাতটা লুকিয়ে ফেলে কারণ দুয়ারে দাড়িয়ে ছিল ওর জামাই মুসা।
রুহী ভেবেই নিয়েছে যদি
মুসা দেখে তবে হয় ধমক দিবে নয়ত তিরস্কার করবে।যদিও এমনটা মুসা কখন করেনি তবুও তার অজানা ভয় আর অবাঞ্ছিত অপমানবোধের ভয় জাগে মনে।
যদিও মুসা প্রথমে বুঝতে পারেনি পরক্ষণে রক্তের ফোটা চোখে পড়ায় দ্রুত কাছে এসে রুহীকে প্রশ্ন করে,
কি হয়েছে তোমার?
রুহী থতমত খেয়ে বলেই ফেলে না ত কিছু না।পরিবার থেকে দেখা ভীতি তার এখনও কাটছে না।নারীদের এই সামান্য হাত কাটার ঘটনা খুব মামুলি এই ব্যাপারটা গোপন রাখতে হয়।শুধু এই ব্যাপার নয় বরং নারীদের রোগ ব্যাধি কষ্ট শত নির্যাতন মুখ বুজে মেনে নেওয়াই নারীদের সংসার সুখে থাকার সবচেয়ে বড় গুন।
বিয়ের আগে পই পই করে তাকে কত শতবার মা বুজিয়েছেন।সে চুপ করে শুনে গিয়েছে।
মুসা হাত টেনে এনে দেখে বেশ অংশ কেটে গিয়েছে রুহীর এবং তখনও রক্ত ঝরছে।হঠাত্ রুহী তার জামাই এর মুখমন্ডলে বিষাদের কালো মেঘ দেখতে পেল।ও যতই মুসার কোমল আচরণ দেখে ততই অবাক হয়।
ও তার ছোট্ট জীবনে যত পরিবার দেখেছে কোথাও এত কোমল আর বিনয়ী পুরুষ দেখেনি।
অজান্তে তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল।
মুসা আরও বিচলিত হয়ে যায় করুণ স্বরে বলতে থাকে তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
রুহী দ্রুত চোখ মুছে হেসে বলে ফেলে,
হু,অজস্র ঋণ বাড়ছে।এখন আমি আছি মহাবিপদে।কিভাবে যে এত এত ঋণ শোধ করব?
মুসা রুহীর অনেক কথায় বোঝে না।মাঝে মাঝে ওর মনে হয় বাংলাদেশের ছয় ঋতুর মত তার বউয়ের কথা বার্তা আর চাল চলন দ্রুত বদলীয়ে ফেলতে পারে ।মুসা কখনও পুকুর হয় না কারণ পুকুর শুকিয়ে যায় ও চলন্ত নদীই থাকে ঋতু যেদিকেই পরিবর্তন হোক না কেন মুসা ছুটতেই থাকে নিজ গতিতে ।
কঠিন সুরে রুহীকে নির্দেশ দিল মুসা কোন কাজ নয় অনেক রক্ত ঝরেছে যান এখন ঘরে যেয়ে বসে থাকুন।
রুহী ভদ্র বালিকার মত ঘরে চলে যায়।
একটু পর রান্না ঘরের দুয়ারে দাড়িয়ে থেকে রুহী বলতে থাকে
আপনাকে দেখলে আমি প্রতিদিন অবাক হয়ে যাই।
মুসা হেসে বলে
তাই নাকি ভাল আর আমি ত অবাকের মাঝেই থাকি এত দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় দেখে।
আমি আমার চৌদ্দগুষ্টিতে এত কোমল বিনয়ী আর ক্ষমাশীল যুবক দেখিনি।
আমি মাঝে মাঝে খুব চিন্তা করি কিভাবে আপনাকে সন্মান করব।কারণ দুনিয়াতে পাওয়া একটা বিশাল নিয়ামত আপনি।
হা হা খুবই অদ্ভুত যুগ পাল্টে গেছে দেখি রুহী।সবসময় ছেলেদের বলতে শুনেছি আমার বউ আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া একটা শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।যাই বল "কোমলতা কি শুধুমাত্র মেয়েদের ভুষণ ছেলেদের নয়"
এটা ভাবা তোমার মোটেও ঠিক না।বরং আমার মনে হয় সুখি সংসারের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের উভয়ের কোমল হওয়া উচিত।
রুহী লজ্জা পেয়ে বলেই ফেলে আমিও সারা জীবন দেখে এসেছি ছেলেরা কঠোর
নির্দয় আর অবিচারকারী হয়।আপনি ত জানেন না নারীদের লাই দিলে মাথায় বসে হয়ত তাই এমন কথা বলে ফেললাম।আচ্ছা আপনি কি সব সময় এমন কোমল ব্যবহার দেখেই বড় হয়েছেন।
নাহ কখনই না।
দুই বছরের জন্য আমি আমার বোনের বাসায় ছিলাম ওখানে আমি এম এ কম্প্লিট করি।
আমি দেখলাম ভাইয়া আমার বোনের সাথে সবসময় কোমল আচরণ করত।ওর ছোট খাট মতামত অভিযোগ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করত।হঠাত্ আমার বোন ভুল করে বসলে কখনই ধমক দিতে দেখিনি।খুব রেগে গেলে আস্তে ঘর থেকে বের হয়ে যেত তারপর রাগ পড়ত যখন তখন ধীরে ধীরে কৌশলে ভুল ধরিয়া দিত।
আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমার বোনটা সবসময় চেষ্টা করত খুব খুশি মনে শাশুড় শাশুড়ি হক সন্তানের হক যথাযথ পালন করার অপ্রাণ চেষ্টা।এত প্রশান্তি চারিদিকে।আমিও ওখান থেকে ফিরার সময় সিদ্ধান্ত নিলাম যাকেই বিয়ে করি আমি আমার বিনয় কোমলা আচরণ আর ক্ষমাশীল মনোভাবকে ধরে রাখব ইনশাআল্লাহ।
আপনি ত হেরে যাবেন।আপনাকে ত সমাজ পরিবার বিদ্রুপ করতে পারে।কত কিছুই বলছে পারে।
আমার সংসার আমি করব।না আমার পরিবারের অন্য সদস্য করবে না এই সমালোচক সমাজ করবে।সুতরাং আমি আমার বুদ্ধি খাটিয়ে মরতে রাজি আছি।তবুও কার চামচাগিরি করতে রাজি না।আমি জানি ইসলামিক নিয়মগুলো জীবনে বাস্তবায়নের মাঝেই প্রকৃত প্রশান্তি
আমি একটু একটু জেনে বুঝে খুজে নিব ইসলামের আলোকে।
যদি আল্লাহ সাহায্য করে আমিও আপনার পিছনে পিছনে হাটতে চাই।আর অনুগ্রহপূর্বক আমার হাত ছেড়ে দিবেন না।আমি সরাসরি খাদে পড়ে যাব।
এভাবে হয়ত একটা সীসা ঢালা প্রাচীর উপরে উঠতে একটা বিশাল বিল্ডিং মজবুত করে তৈরি করবে ইনশাআল্লাহ।
(নতুন মস)
বিষয়: বিবিধ
১১৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন