"ভালবাসার অর্থ অন্ধ আবেগবোধ নয় বরং দায়িত্ববোধ" (শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪২:০২ রাত

চুপচাপ খাবার টেবিলে খাবার শেষ করল তারা।

তারপর মা বলল তুই ঘরে বস,আমি দু কাপ চা নিয়ে আসি।আবান ওল্টো মাকে বসতে বলে চা করে আনল।চা হাতে মায়ের পাশে বসল আবান।

কিছুক্ষণের মধ্যে মা ছেলের আলোচনা শুরু হয়ে গেল মা তার মত বলতে শুরু করলেন-

(আম্মু)

বাবা আমার তোর মত অত মেধা বা বুঝানোর ক্ষমতা নেই।তোর পুরো নাম আতিক আবান যার অর্থ বুদ্ধিমান ছেলে একটু কষ্ট করে শোন।আমি তেমন ব্যাখ্যা করে বুঝাতে পারব না।তবু বলি,

প্রথমতঃ তুই হুজুরদের সমালোচনা করলি।

এই ব্যাপারটা আমার মোটেও ভাল লাগে নি।হতে পারে প্রচুর সমস্যা আছে তাদের তবে তারা কুরআন মুখস্ত করেছে।

তোর মত শত শত মেধাবী ছেলেরা ভাবছে আর আবেগ তাড়িত হয়ে চিত্‍কার দিচ্ছে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই দেশ।তোদের ঝুলিতে হাজার হাজার সমালোচনা জমা হচ্ছে ত হচ্ছে দিনকে দিন তবে কেউ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয় আবার বলতে পারিস কেউ কেউ নিচ্ছেও।তবে অধিকাংশরা নিজের মেধা টুকু অন্য কোন দেশে খাটিয়ে নিজের ঈমান পরিবার নিয়ে একটা প্রশান্তির রাজ্য তৈরি করতে চায়।এটাকে আমি মোটেও খারাপ বলছি না।তবে একটু আগে বললি যে তুই,এই সমাজে পরিবর্তন আসবে কিভাবে?অবশ্যই

পরিবর্তন আসবে কিন্তু কোন মিথ্যা আবেগে না ভেসে,কার সমালোচনা না করে,নিজ দ্বায়িত্বটুকু সঠিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পালন করতে থাকলে তবেই ঠিক আসবে একদিন উজ্জল দিন দেখিস।অর্থাত্‍

তোর আঙ্গিনাটাকে তোকেই আলোকিত করতে হবে।নিজ দ্বায়িত্বটুকু পালন করতে থাকলে দেখবি ইনশাআল্লাহ ঐ স্থানটুকুতে কিছু পরিবর্তন আসবে।

(আবান)আলহামদুলিল্লাহ তারপরের টা বল...

(আম্মু)মায়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।হু দ্বিতীয়ত,খুব আগ্রহ দেখছি।থাকাটা খুব স্বাভাবিক।আল্লাহ তুই ত বেশ বড় হয়ে গিয়েছিস বাবা,তোর বন্ধুরা আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল

সন্তানের প্রতি পিতামাতার তিনটি হক

¡.সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখা।

¡¡.সঠিকভাবে দ্বীন ইসলামের শিক্ষা দেওয়া।এবং

¡¡¡.উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেওয়া।

তোর বন্ধুরা ত খারাপ কিছু বলেনি।তবে হ্যা তারা সামান্য যৌতুক ব্যাপারটাকে এনে ভুল করছে।

(আবান)আম্মু তুমি এটাকে সামান্য বলছ।

(আম্মু)শুধু সামান্য নয় অতি সামান্য বলছি এই নোংরা সামাজিক ব্যাধি টিকে।যার প্রতিফল ঘরে ঘরে নারী নির্যাতন।একটু ভেবে বল স্কুল কলেজ ভার্সিটির পাঠ্য বইয়ে কি শিখানো হচ্ছে।বল কয়টা পাঠ্য পুস্তকে পড়েছিস নারীর প্রতি কি আচরণ করতে হবে।মা,বোন,বউ,প্রতিটি নারীর প্রতি আলাদা করে একটা দ্বায়িত্ববোধ আছে কোন সমাজ আর পাঠ্যবই শেখাচ্ছে তোরে বল।

গভীরভাবে ভেবে দেখ সবখানে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পন্যঃএকটা বিলবোর্ড

একটা নাটক সিনেমায় গান গল্প কবিতা উপন্যাসে ব্যবচ্ছেদ করা হচ্ছে।নারীরা হচ্ছে সহজলোভ্য পণ্য।এটা কিন্তু প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে শেখানো হয় আর অলিতে গলিতে পার্লারে মুখে চুন মেখে কপালে তিলক দিয়ে আমরা শিখছি নারীরা।যখন আর উপায় নেই তখন একমাত্র যৌতুক দিয়ে কন্যা দান করতে বাবা মারা সর্বশেষ বাধ্য হয় বলতে পারিস।ওদের দোষ কোথায় তুই বল।

(আবান)তবুও একটা শিক্ষিত ভার্সিটির থেকে পাশ করা ছেলের মুখে যৌতুক কথাটি মেনে নেওয়া যায় না।এর পরেরটা বল।

(আম্মু)আমাদের ছোট্ট পাকনা বুড়ি তিতলীর কথা বলছিস।ওর কোন দোষ খুঁজে পাইনি তাই বুড়িটাকে আমি খুব ভালবাসি।সকালে ওঠে স্কুলে যায় আর রাত ৮টার আগে বাবা মা কাউকে পায় না।দুজনে চাকুরি জীবি।রাত ৯.৩০মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে বল কতটুকু সময় বাবা মাকে পায়।আর বন্ধের দিনগুলো বাবা মার সাথে হিন্দী ইংলিশ মুভি সিরিয়াল আর পার্টিতে ঘোরে যেখান থেকেই হয়ত প্রেম ভালবাসা বয়ফেন্ড গার্লফেন্ড শিখছে।

আমরা কত নিয়ামত পূর্ণ পরিবেশ পেয়েও আবেগে ভেসে যাই আর ওর কথাটিকে না হয় একটা কষ্ট বলে ওর সাথে উত্তম ব্যবহার করার মাধ্যমে মেনে নে।

(আবান)আলহামদুলিল্লাহ মা তিতলীর সাথে না হয় তোতলা তোতলাভাবে কথা বলব।

আস্তে আস্তে ১৫টা দিন আবানের একটা দুঘর্টনার মধ্যে কেটে গেল সেখানে প্রবল আবেগ পাশাপাশি শতভাগ দ্বায়িত্ববোধ ছিল।আবানের মা হঠাত্‍ অসুস্থ হয়ে বিছানায় রান্নাবান্না মাকে খাইয়ে দেওয়ার কাজ আবান আর তার বাবা যত্ন সহকারে করল।তিতলী বুড়ি প্রতিদিন এক গ্লাস ডাবের পানি নিয়ে তার প্রিয় নানুকে দেখতে আসত আর আবানকে কাজে সাহায্য করত।তাদের পুরো বিল্ডিং জুড়ে একটা প্রশান্তি ঢেউ বইতে শুরু করল।আবানের দ্বায়িত্ববোধকে সবাই সন্মানের সাথে দেখছে।এই বোধটা আবানকে তীব্র বিব্রত আর লজ্জিত করছে।বার বার মায়ের অমর বানী মনে পড়ছে

"ভালবাসার অর্থ অন্ধ আবেগবোধ নয় বরং দায়িত্ববোধ"

সে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।ভাল ভাবে পৃথিবীতে বাঁচার অর্থ কখন এটা নয়ঃ অঢেল সম্পত্তি,রুপসী নারী অথবা নেশার পিছনে অজীবন ছুটে চলা।বরং অন্য কিছু।এখন আম্মু অনেক সুস্থ তবুও সবাই মিলে ঘরের কাজটুকু চটপট করে ফেলে।

আজও শুক্রবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে আবান তিনকাপ চা বানিয়ে বারান্দায় এল।চায়ে চুমুক দিতে দিতে কথা শুরু হল-

(আবান)আম্মু কাল ত পহেলা জানুয়ারীর ।

(আম্মু)মা মুখে হাসি টেনে তোর কি বিদেশে যাওয়ার সময় হল বাবা।কবে যাবি?দে দেখি তোর পাসপোর্ট।

(আবান)মাকে একটা খাম দিল।

মা চিঠিটা হাতে নিয়ে নিশব্দে কেঁদে ফেললেন।আবানও আবেগ ধরে রাখতে পারল না।মাকে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

আমি আমার মা।

আমার দ্বায়িত্ব আমার এই ছোট্ট ভালবাসার পৃথিবীকে রেখে কোথাও যাব না।

আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি।

(আলহামদুলিল্লাহ

অবশেষে শেষ হল)

নতুন মস

বিষয়: বিবিধ

১৬৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File