"ভালবাসার অর্থ অন্ধ আবেগবোধ নয় বরং দায়িত্ববোধ" (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৩০:০৭ রাত
আজ শুক্রবার।
ঝিরিঝিরি ইলশে গুড়ি হচ্ছে ভোর থেকে।প্রকৃতির কি খুব মন খারাপ! তাতে কিবা যায় আসে আবানের ওর কাছে ত দুনিয়াবী সবচেয়ে পছন্দের নিয়ামতপূর্ণ একটা সময় এই মুহূর্ত্বটি। খুব উপভোগ করে সে।ঘন্টার পর ঘন্টা বারান্দা গ্রিলে পা দিয়ে চেয়ারে বসে এই প্রকৃতি দেখে গভীর মগ্নে চিন্তা করে।পুরো জীবনকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে রিকল করে মনে মনে আর ভুলগুলোকে কারেন্টজালে আটকে ফেলে।
আর ঠিক এই মুহুর্ত্বে যদি ধোয়া উড়ানো কেউ এক কাপ চা এনে দেয় তার জন্য দিল খুলে দোয়া করতে মন চায় ওর।ঠিক এই মুহুর্ত্বে
আবান মায়ের জন্য দোয়া করছে আপন মনে টেরও পাচ্ছে না মা,
প্রকৃতি দেখছে,আর তার প্রিয় রং চায়ে চুমুক দিচ্ছে।স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির গভীর বন্ধন তার হৃদয়কে দোলা দেয় বার বার।
হঠাত্ লাফ দিয়ে ওঠে আরে আজ ত শুক্রবার।দ্রুত গোসল সারতে হবে দেরি না করে নামাযে গিয়ে পুরো খুতবা শুনবে সে।বাংলাদেশ আর মিশরের খুতবার পার্থক্য ধরতে চায় ও।
(আবান)আম্মু আমার কাপড়গুলো কোথায়... ল্যাগেজে খুজে পাচ্ছি না যে।আম্মুও....
(আম্মু)কি ব্যাপার?হল কি তোর।এখনও তুই ছোট্ট বালকের মত চিত্কার করিস।
(আবান)আমি ত ছোট্ট বালকেই আছি আম্মু।এখন বল আমার কাপড় চোপড় কই? নামাযে যাব।
(আম্মু)হ্যা তুই ত পিএইসডি করে এসেও ছোট আছিস।তোর কাপড়গুলো
ধুয়ে পরিস্কার করলাম।তবে খুব অবাক হয়েছি এত পরিস্কার কেন তোর কাপড়।
(আবান)অবাক হওয়ার কিছু নেই সব ত ধুয়ে রেখেছিলাম।আম্মু আমি রান্নাও চমত্কার পারি একদিক রেধে খাওয়াবো।দাও এখন আমার কাপড় দাও।
(আম্মু)দাড়া আনছি।
আবান খুতবা শোনার জন্য তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চলে গেল মসজিদে।
খুতবা শুনে নামায শেষে কয়েকজন বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত্ করে একটু দেরিতে বাসায় ফেরে।মন খুব বিষণ্ন।এক সমুদ্র অভিমান আর প্রশ্ন।
ঘরে ঢুকেই মায়ের কাছে বসে পড়ে।মা নামাযে মগ্ন।
তার মা ছোট্টবেলা থেকে একজন উত্তম শিক্ষক তার বন্ধু,
পাশে বসেই সে খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবছে
আম্মুর মাঝে পাঁচটি ব্যক্তিত্ব সে পেয়েছে আল্লাহ ভীরুতা, ঈমান, সুন্নাহ জানা আর মানার চেষ্টা, দুনিয়াবী মোহ শূন্যতা আর মেধা।
(আম্মু)চল বাবা।অনেক ক্ষুধা লেগেছে খেতে চল।
(আবান)একটু বসবে মা।আমার মন খুব ভারাক্রান্ত।ভাবছি বিদেশেই চলে যাব আবার।এদেশে ত মান সন্মান নিয়ে ঈমানের উপর দৃঢ়ভাবে চলা কঠিন।
(আম্মু)মুছকি হাসি হেসে মা বলল,ঠিক আছে বাবা তোকে কেউ বাধা দিবে না।অভিযোগ কি তোর?
(আবান)হু।অনেক অভিযোগ।ইমাম খুতবা দিচ্ছেন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারছেনা।আমিও পারিনি।
বল তুমি সমাজে পরিবর্তন আসবে কি করে।তারপর কি
সর্বনাশ আসার সময় দেখলাম গুটি কয়েক লোক বাইয়্যিয়াতের নামে মুরিদ হচ্ছে আবার ঐ হুজুরের পায়ের কাছে মাথা নত করছে।ভাবছ,
হুজুর মানুষজনকে মাজারে যেতে উত্সাহ দিচ্ছে।
(আম্মু)হুজুর সম্পর্কে অভিযোগ শেষ তোর।আর শুনতে ভাল লাগছে না।আর নতুন কোন ঘটনা।
(আবান)ঠিক আছে ওটা পয়েন্ট না হয় বাদ দিলাম।ভার্সিটির দুই ফেন্ডের সাথে মিট হল।
কিছুক্ষণ কুশল বিনিময়ের পর জানলাম একজন ভাসির্টির টিচার আরেকজন ব্যাংকার।আমি ওদেরকে অভিনন্দন জানালাম।মুল ঘটনা শুনলে ত তুমি থ বনে যাবা
ব্যাংকার বলল,বিদেশ থেকে ত পিএইসডি করে আসলি।এখন ত বিয়ে করবি।একটা অফার দেই।আমার ছোটবোনকে কর সুন্দর পাশাপাশি দোতলা একটা বাড়ি আছে ওর নামে সেটাও তোর হয়ে গেল।
আমি ত বোবা হয়ে গেলাম।কষ্ট করে মুখে হাসি টেনে বললাম এখন ভাবিনি
কি যে করা যায় আরেকটু ভাবি।ও চলে যাবার পর টিচার সাহেব বলে কি শোন,আরে ও ত ছোটলোক তোকে টাকা দিয়ে কিনতে চাচ্ছে।তুই বরং আমার শালীকে দেখতে পারিস।তোর ত পছন্দের একটা ব্যাপার আছে।অপ্সরীর মত সুন্দরী।আর যদি এদেশে থাকতে চাস।তাহলে ভার্সিটিতে চাইলেই তোকে ঢোকাতে পারব।
ভেবে দেখ সামনা সামনি কত গলাগলি করে কথা বলছিল ওরা,তারায় পিছনে স্বার্থের কারণে আরেকজন অপর জনকে অপমান করছে।আম্মু তুমি হাসতে পারছ এই ঘটনা শুনে।আমার ত মাথার চান্দি গরম হয়ে গিয়েছে।
(আম্মু)আর কিছু?
(আবান)এটা শুনলে তুমি হাসতেও ভুলে যাবে।এরপর বাসার গেট পেরিয়ে মাথা নিচু করে উপরে উঠব।হঠাত্ একটা বাচ্চার কন্ঠ শুনে ঘাড় ঘুরালাম।
হেসে সালাম দিলাম ছোট্ট মেয়েটা ত সালামের উত্তর দিল না বরং বলে
হায় স্মার্টবয় তুমি কি বিদেশ থেকে আসা চার তলার আবান।
কষ্ট করে হাসি ধরে রেখে বললাম হ্যা আমি।
পিচ্চি বলে উঠল,তোমার কয়টা গার্ল ফেন্ড।
মা এ কথা শুনার সঙ্গে বাজ পড়ল মাথায়।বললাম তোমার আছে নাকি।
ঐ বলে আমার চার চারটা বয়ফেন্ড।শেষে কষ্ট করে প্রশ্ন করলাম কোন ক্লাসে পড়?
বলেঃ টুতে।
ভাবছ এদেশে থাকলে আমার পরবর্তী প্রজন্মের কি হবে?আমি বাইরেই চলে যাব।
(আম্মু)হাসতে হাসতে বলল ঠিক আছে অনেক ঘটনা ঘটেছে তোর সাথে আগে খাওয়া দাওয়া করি পরে না হয় বিদেশ চলে যাস।
প্রচন্ড ক্ষুধার্ত আমি।অনেক বক বক করলি তোর পেয়েছে|
এখন ওঠ খেতে বসি..
(চলবে)
ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন