চূর্ণ বিচূর্ণ রহস্যময় ভুবন-৬

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ১৭ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৩৪:৪৩ রাত

(পুর্বের কথা মনে আছে)

-আবির তুমি কি আমার কথা শুনছ ।নাকি আমার দোস্ত সূর্যের মত কথা বলতে বলতে ঘুম।

~এই আর কি সামান্য একটু তন্দ্রা।রহস্যপুরীর যন্ত্রমানবরা মনে হচ্ছে নতুন একটা পার্ট যুক্ত করেছে।ঠিক আছে আপনি বলুন।কি যেন বলছিলেন?

-আমি ত সূর্যের কথা বলছিলাম।

~সূর্য! (আবির কি একটু চিন্তিত)

-হ্যা।ঐ গ্রুপে ও ছিল একটু অগোছানো সাহিত্যিক।ভাবুক ভাবুক ছেলে।কখনও সারা দিন লাইব্রেরিতে।কখনও খোলা আকাশের নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকত।তবে নামাযী ছিল। ও প্রায় প্রতি গভীর রাতেই নামায পড়ে কাটিয়ে দিত এবং সুন্দর চরিত্রের অপূর্ব মায়ার জড়িয়ে রাখত সারাটা দিন।নামায যে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে ওকে দেখলেই আমার মনে হত।

একদিন ওকে প্রশ্ন করেছিলাম তুমি রাতে যখন নামাযে দাড়াও তখন কি চাও?

ও বলল

"আমাকে চাই "

অবাক হয়ে বললাম আমাকে চাই মানে।

"আমাকে চাই মানে আমার আত্নাকে আজীবন(জন্ম প্লাস মৃত্যুর পর) প্রশান্তির সমুদ্রে ডুবিয়ে রাখতে চাই।

ধর! জন্মের পর থেকে আমার হাড়, গোস্ত, চামড়া ,চুল ,দাত তৈরি হয়েছে এগুলো ত প্রতিটি প্রাণীই তৈরি হয় আমারও হয়েছে।জন্মের পর থেকেই আমার আর প্রাণীর কিছু চাহিদা একই রকম রয়েছে ক্ষুধা, দৈহিক চাহিদা আর ঘুম।এর বাইরে আমি বাস করি সমাজে,পরিবারে ফলে আমার অনেক মানসিক চাহিদার প্রয়োজন পড়ে

বেঁচে থাকার জন্যেই বল অথবা সেই প্রশান্তির রিং পড়ার জন্যেই বল।

এগুলো আমি কিভাবে পাব বল এই গুলো ত আমাকে স্বত্বঃস্ফূর্তভাবে দেওয়া হয়নি।আমাকে এগুলো চেয়ে চেয়ে যার কাছে আছে তার কাছ থেকে অর্জন করে নিতে হবে।আর আমি জানি রাতে তিনি আমার কথা সাত আসমানের নিচে এসে শুনেন। তাই আমি তার কাছে চাই।যার দেওয়ার ক্ষমতা আছে তার কাছে চাওয়াটাই উত্তম নয় কি?তুমি বল।"

আমি কি বলল শুধু শুনতাম।

~এত হাই কোয়ালিটি সম্পূর্ণ দর্শন রে বাবা।তিনি দর্শনের ছাত্র ছিলেন নাকি?

-আরে নাহ।রসায়নের ছাত্র ছিল ও পড়ে যদিও পড়াশুনা শেষ করেনি।

এত বেশি ভালবাসতাম যে হঠাত্‍ একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র রাগের সাথে ঘৃণার জন্ম হয়েছিল ওর প্রতি।

~অদ্ভুত কেন বলুন ত?

-খুব হাস্যকর হলেও সত্য মাত্র দুই দিন কয়েক ঘন্টা ওর সাথে একটানা কথা বলিনি তবে রাগটি শুরু হয় কয়েক মাস আগে থেকেই।দু দিন ওর সাথে কথা না বলায় এবং দেখা না করায় খুঁজে বের করে ও আমাকে।হাসতে হাসতে বলল জানো একজন যদি অপর মুসলমানের সাথে পর পর তিন দিন একটানা কথা না বলে ঐ ব্যক্তি অহমিকার জন্য তবে সে কিন্তু বলে দিলাম মুসলমান থাকে না।

আমি ত ভয় পেয়ে ওকে সালাম দিলাম।

ও হেসে সালামের উত্তর দিল বললঃ মনের ভিতর প্রশ্ন রাখবে না।অহেতুক কষ্ট পেয়ে লাভ আছে বল বরং তোমার অসন্তুষ্টির কারণটি সুন্দরভাবে গুছিয়ে ব্যাখ্যা করবে, পরিস্কার বুঝিয়ে বলবে তোমার আপনদেরকে কারণ বন্ধন গড়তে অনেক সময় লাগে কিন্তু ভাঙ্গতে লাগে কয়েক মিনিট,সামান্য কিছু কথা আর আচরণ দেখে।

আমিও বললাম সাম্প্রতিক কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ করার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার সাথে আর যোগাযোগ নয়।

ও বললঃ কেন?

কারণ তুমি জান না নারী মানে ফিতনা ফেসাদের উত্‍স।পুরুষদের চরিত্রের ধ্বংসের মুলে রয়েছে এই নারী।আর সেখানে তুমি নারীদের কারিগরী শিক্ষা, ইসলামিক শিক্ষা এমনকি তুমি নারীদের ঘরে বসে এবং ঘরের বাইরে কর্মমুখী হতে বলছ।

হঠাত্‍ সূর্য বলল,

তুমি বিশ্বাস কর তুমি মায়ের ভিতরে বেড়ে ওঠা একটা মাংসপিন্ড।

আমি চমকে উঠে বললামঃহ্যা।

ও আবার বলতে শুরু করল একটা ভ্রুণকে তিন মাসের মধ্যে ঐ জরায়ুতে থাকা অবস্থায় রূহ দেয়া হয়।ও বাইরের কথা শুনে শুনে কয়েকটা মাস অতিবাহিত করে তারপর আসে আলোতে।

একবার কি চিন্তা করে দেখেছ ঐ শিশুটি শিক্ষা শুরু হয় জন্মের আগেই।এবং সেই সন্তানের শিক্ষিকা হচ্ছে একজন নারী।একজন মা।

~আবিরের মায়ের কথা খুব মনে পড়ে গেল।ওর চোখের কোণে নোনা জল উকি মারছে।হঠাত্‍ ও ক্ষীণ কন্ঠে ডাক দিল "মা"।

-সূর্য বলেই যাচ্ছে মুগ্ধ হয়ে শুনি।

"আজ আমি তোমাদের প্রশান্তি নগরীর মেয়েদের হাতে কোরআন তুলে দিতে আহ্বান করছি।আহ্বান করছি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে ।কারণ তোমাদের স্বার্থেও বলতে পার।

~মানে কি?

-ও মুলত যোগ্যতার সমতাকে বুঝতে চেয়েছে।

ও বলল "ধর তুমি উচ্চ শিক্ষায় আর ইসলামিক মেধায় পারদর্শী সাহ্যিতিক বটে অপর পক্ষে যাকে বিয়ে করছ তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তবে ইসলামিক নজেল কিছুই নেই।

তোমাদের কাজ হবে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে উভয়ের পড়াশুনা আর গবেষণা করা।

গোটা সমাজকে যদি পরিবর্তন করতে চাও নারীদের সঠিক পথে চলার জন্য মুক্ত অঙ্গন তৈরি না করে দিলে এটা অসম্ভব।চাকচিক্যময়তা গ্রাস করে খাবে তোমার ঘরের নারীকেও।তোমাদের দেশে ঘরে ঘরে নারীদের জেগে উঠতে হবে।"

~চমত্‍কার বলছেন কিন্তু তিনি।

-সূর্য একটা জীবনের উদাহরণ দেয়।

"নারীদের নিয়ে এই কর্মমুখী চিন্তা আমি তোমাদের দেশের মাজহার ভাইয়ের কাজ থেকে শিখেছি।হঠাত্‍ ভাইয়ের বউ এর বাম পাশ অবশ হয়ে গেল।ভাবী সিদ্ধান্ত নিলেন বাবা বাড়ি চলে যাবেন কাউকে কষ্ট দিবেন না।মাজহার ভাই যেতে দিলেন না তার একটায় যুক্তি তিন বছর ধরে সংসার করছি কার দেহ নয় বরং মনের সঙ্গে।ভাবী খুব গম্ভীরভাবে বললেন আপনাকে কোন সিদ্ধান্ত আবেগ নিয়ে নিতে দেখিনি আজ কেন নিচ্ছেন।মাজহার ভাই খুব জোর দিয়েই বললেন এটা আমার দ্বায়িত্ব এখানে আবেগ নয় বরং বিবেক ডাকে।এরপর মাজহার ভাই ভাবীকে বিভিন্ন বই পড়া এবং লেখালেখির প্রতি উত্‍সাহ দিয়েছিলেন।তোমাদের প্রশান্তির নগরীতে একজন বিখ্যাত শিশুসাহ্যিতিক তিনি।অনেক গল্প, উপন্যাস তিনি লিখেছেন।তোমার পছন্দের প্রথম সারির লেখিকা।শোন প্রতিভা শুধু ছেলে না মেয়েদের মাঝেও আছে।তোমার মা বোনদের মাঝেও আছে তুমি তাদের জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছ না তাই তাদের প্রতিভা জীবন ফিরে পাচ্ছে না।

তারপর থেকে আমি তাদেরকে উত্‍সাহ দিচ্ছি।বল আমি কি খারাপ কাজ করছি।"

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম সাথে ক্ষমা চেয়ে নিলাম ।

আবির তাকিয়ে আছে বৃদ্ধার চোখে জল।

(চলবে)

ইনশা আল্লাহ

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File