চূর্ণ বিচূর্ণ রহস্যময় ভুবন-৪

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ১৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:৩৭:৫৬ দুপুর

(আগে কি লিখেছি তা ভুলার পর থেকে)

কি অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য?

আবিরের খুব ইচ্ছে করছে 'মা' বলে বলে জোরে চিত্‍কার করতে।

মৃত আবেগকে কবর দিয়েছে রহস্যপুরীর যন্ত্রমানবরা।

তাই কেউ শোনে না তার বোবা কান্নার চিত্‍কার।

হঠাত্‍ চমকে ওঠে ও....

~আসসালামুআলাইকুম কে বাবা তুমি?

-ওয়ালাইকুমসালাম

যেন সে শুনতে পেল তার ছোট্ট পৃথিবীর প্রিয় এক মধুর সুরেলা বানী অনেক অনেক দিন পর?

জ্বী আমি আবির বলছিলাম।

কেমন আছেন আপনি এই খড়খুটো ওয়ালা ছাউনির ঘরে বৃষ্টি বাদলেন দিনে?

~আলহামদুলিল্লাহ

ভাল আছি বাবা!তুমি বলেছিলে এই প্রশান্তি নগরীর রহস্যভেদ করতে চাও।জানতে চাও প্রতিটি সেক্টরে সেক্টরে কিভাবে সুখ শান্তির ঝড় উঠেছে এই নগরীতে।কিভাবে ঘরে বাইরে আমরা বিভেদহীন বন্ধনকে অটুট রেখেছি বছরের পর বছর।

তাই ত এতটুকুই।নাকি আবির তুমি আরও কিছু জানতে চাও?

-জ্বী আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন।আসলে আমি এসেছি রহস্যপুরী নামক এক স্থান থেকে তাদের ইচ্ছে আমি প্রশান্তি নগরীর রহস্যভেদ করি।

কিভাবে এই ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক বিশ্বে আপনারা এত এত ভাল আছেন।

তবে আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে একটু ভিন্ন আমি জানতে চাই আপনাকে।আমি আপনার জীবন ইতিহাস পড়তে চাই।আমি আপনার মুখের মুচকি হাসির রহস্য জানতে চাই?কিভাবে এত বছর ধরে একে জীবন্ত রেখেছেন?

~তুমি না একদম মানুষদের মত কথা বল।খুব আপন লাগছে তোমার প্রতিটি শব্দ।মনে হচ্ছে না যে,তুমি রহস্যপুরীর কেউ।

যান,

এই মুচকি হাসি আমার বউয়ের সবচেয়ে পছন্দ।ও যদি খুব কষ্টেও আমার এই মুচকি হাসি সম্মিলিত কোমল কন্ঠ শুনতে পায় তখন নাকি তার শত কষ্ট সব হারিয়ে যায়।এবার

বলত জীবনের কোন অংশ থেকে শুরু করি।এত বুড়ো হয়েছি যে ভাল ভাবে গুছিয়ে কথাও বলতে পারি না।তোমার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না ত বাবা।

-নাহ!একদম না।আপনি চমত্‍কার বলছেন।

আমি জানতে চাই আপনার শিক্ষাজীবন , বৈবাহিক জীবন,পেশাজীবনের প্রশান্তির রহস্য কি?

আপনি আপনার মত করেই বলুন।আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন,

আমার মোটেও বুঝতে সমস্যা হবে না

~আমি পড়াশুনা করেছি আর দশজনের মত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি জীবনের সর্বোচ্চ সুখ আর প্রাচুর্য্যের লক্ষ্যেই।আমাদের এই নগরীতে খুব অল্প বয়সেই পড়াশুনার পাঠ সম্পূর্ণ হয়। তারপর শুরু হয় কর্মজীবন।তুমি ত আমার পার্থিব জগতের পড়াশুনা সম্পর্কে জানতে আসোনি এসেছ কিভাবে আমি প্রশান্তি সন্ধান পেলাম।তাই ত।

- জ্বী ।সেটার প্রতি আমার একটু আকষর্ণ বেশি।

~আমার পরিবারে বাবা ছিলেন একজন সরল সহজ মনা।এবং ধৈর্যশীল মেধাবী ব্যক্তি।খুব কোমল স্বভাবের।

মা ছিলেন উচ্চ বংশের ব্যক্তিত্ববান নারী।পারিবারিক আদব কায়দা মুলত আমি ঘর থেকেই পাই।আর নানা বাড়িতে ছিল প্রচুর বই সেখানে রাতের পর রাত জেগে প্রচুর সাহিত্যচর্চা করি।গল্প নাটক উপন্যাস আর কবিতার রাজ্যে আমার পদচরণ ঘটে।

-দারুণ ত।তারপর..

~তবে আমার হৃদয় কেন যেন পরিপূর্ণভাবে ভরে উঠত না।

ডায়েরী পর ডায়েরি কবিতা লিখতাম তবে প্রকৃত শান্তি পেতাম না।এরপর একবার আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু মুসলমান নামক মানুষ ভর্তি হল।কি বলল ?ওদের দেখে আমার তীব্র রাগ হচ্ছিল।হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলাম।মনে হচ্ছিল আমাদের চারপাশকে ওরা গ্রাস করে খেয়ে ফেলছে।আমার জুনিয়ার ক্লাসে এক অতীব ভদ্র শালীন পোশাকের রমনী ছিল যার বাবা ছিলেন ঐ প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক।

মুলত তার পদক্ষেপেই মুসলমান নামক মানুষদের এই রাজ্য আগমন ঘটে।মেয়েটা ছিল অতীব ভদ্র।সবর্দা বাবার সাথে ঢুকত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বাবার সাথেই যেত চলে।মাঝখানে ক্লাস লাইব্রেরি অথবা ল্যাবে নাম মুখ ডুবে বসে থাকত।আমার শিক্ষাজীবনের শেষ বছর ছিল সেটা।

একবার কি হল জান?

একটা সেমিনারে আমাদের সামনে একটা প্রেজেন্টেশন করছিল ঐ মেয়েটি বিষয়টি ছিল "মেয়েদের শালীনতা, ভদ্র পোশাক আর সৃজনশীল মনমানসিকতা"

বিশদ আলোচনা শুনলাম।

এক রমনী ঐ মেয়েটাকে প্রশ্ন করল

"এত চমত্‍কার লেকচার দিচ্ছ বলত কোন যুবক তোমার রূপ সৌন্দর্য না দেখেই তোমাকে বিয়ে করবে"

মেয়েটার উত্তর ছিল

"আমরা নারীরা ছেলেদেরকে বাহ্যিক রূপে মগ্ন করার জন্যেই নিজেদেরকে অপূর্ব ঢং এ প্রদর্শন করি।যখন তারা আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে তাদের আবেগকে কোরবানী করে দেয়।তখন তাদের আমরা বিয়ে করি।এরপর আমরা এই নারীরা আবার মনও দাবী করি।কারণ সৌন্দর্য ত ধ্বংস হবে কিন্তু মনের চাহিদা ত আজীবন থাকবে।যখন কলুষিত মন পাই। কারণ ঐ যুবকরা তখনও চারিদিকে সৌন্দর্যই খুজে। তখন কাঁচের টুকরার মত ভেঙ্গে চুরমাচার হয়ে যাই আমরা অবলা নারীরাই।মুলত নারীদের বুঝতে হবে পবিত্র হৃদয়কে পেতে হলে নিজের হৃদয়ের পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে।চাল চলন পোশাক আশাকে অথাত্‍

শালীনতা বজায় রেখেই আমাদেরকে সন্মানের সাথে এই রাজ্যে মাথা উচু করে চলতে হবে।"

অনেকক্ষণ আমি বোবা হয়ে ছিলাম যান আবির।

আমি ত তখন প্রশান্তির চাবি হাতে পাইনি।তাই আমি বেশ আবেগীও হয়ে পরে ছিলাম ঐ কথা শুনে! যদিও পড়াশুনা ছাড়া আমার অন্য কোথাও মন দেওয়া মানেই হল আমার অঢেল সুখের প্রাচুর্যে চাকরী হারানোর ভয়।তাই আর নারীকুলকে নিয়ে ভাবার সময় পেলাম না।

-ও আচ্ছা।তার মানে ঐ রমনীই বর্তমানে আপনার বউ যদি আমি ভুল না বলি।

~তুমি ত বেশ বুদ্ধিমান।কিন্তু তুমি ত আমার শিক্ষাজীবনের এখন কিছুই শোননি কেন বৈবাহিক জীবনে উঁকি দিচ্ছ।ব্যাপারটা মোটেও আবেগের স্তরে ছিল না।অথবা আবেগের তাড়নায় পড়ে কাউকে আমি বিয়েও করিনি।

আমার এই প্রশান্তির শিক্ষণটি ছিল খুব ধীর স্থির বলতে পার সবার কাছ থেকে একটা একটা করে কিছু পছন্দের অনুভূতির মিলনমেলা ঘটেছে আমার মধ্যে।আর ঐ নারী ছিল নারী পুরুষ সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার একটা জলন্ত উদাহরণ।যেখানে আমি শিখে ছিলাম কার বাহ্যিকতা নয় বরং অন্তর দেখে ভালবাসুন।এরপর মুসলমান নামক মানুষরা আমার প্রিয় হতে শুরু করে।

(চলবে)

ইনশা আল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File