অগোছানো কথনমেলা-১৪

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩৫:২০ বিকাল

লাশবাহী একটা ট্রাক সামনে।একটা আত্নাহীন দেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু জীবিত আত্না অস্থিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ। অনেকক্ষণ ধরেই যানজটে আটকা ট্রাক টার দিকে গভীর আগ্রহে পর্যবেক্ষণ করছি।

লাশকে ঘিরে একটা আগ্রহ কাজ করে দাদীর ইন্তেকালের পর থেকে।

বাড়িতে পৌছায় ২৮শে অক্টোবর আর দাদী ইন্তেকাল করেন ২রা নভেম্বর।একদিন ঐ সোনালী মুহুর্ত্ব ক্ষণের বর্ণনা লিখব ভাবছি।কিভাবে একরাত বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন দাদী আর চাচাসহ আমরা মশারী তুলে আত্নাকে দেখছিলাম।

খুব কাজ থেকে দেখা একটি চমত্‍কার ব্যক্তির গমন

কেমন করে একটা শূণ্যতার চাদরে ঢেকে দিয়েছিল আমাদের।

আমি ভার্সিটির ছুটিগুলো কাটিয়েছি হসপিটালে দাদা দাদীর পাশে,

বেশির ভাগ সময় দেখা যেত বাড়িতে যাচ্ছি এক মাসের ছুটিতে পনের দিন থাকতাম হসপিটালে ১৫ দিন বাড়িতে।

মা বাবার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ববোধ আর কর্তব্য পালনের দৃশ্যগুলো আজ চোখে ভেসে ওঠে দাদা দাদীর প্রতি তাদের সন্তানদের ভালবাসার তারাও ভালবাসত সন্তানদের।

আজ যখন পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তখন পাশে বসা স্টুডেন্টটিকে জিঞ্জাস করলামঃঅনার্স কম্প্লিট করার পর কি করবা

ওর বক্তব্য ছিলঃ

বাড়ি যাব।আব্বা আম্মার কাছে থাকব ওখানে একটা চাকরী করব আর ব্যবসা করব।মা বাবাকে দেখা শুনার পাশাপাশি এলাকায় কিছু উন্নয়ন মুলক কাজে অংশ নিব।

আমি বললাম খুবই ভাল সিদ্ধান্ত মা বাবার পাশে থাকা ত সন্তানের দরকার।আসলে কে ভবিষ্যতে কি করবে তা আমরা বলতে পারিনা তবে ওর চিন্তা ধারা ভালই লাগল।আমার দাদা দাদীকে ফুপু চাচারা ভালবাসতেন তা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি বলব না যে প্রতিটি দ্বায়িত্ব ১০০%ই হচ্ছে তবে বাবা মার সন্তানের প্রতি সন্তুষ্টবোধ যে ছিল তা অনুভব করতাম।আমার চাচা খুব ভালবাসতেন দাদী মাকে।একবার দাদীকে কোলে করে বারান্দা থেকে কোলে করে ঘরে নেওয়ার সময় দাদীর প্রশ্রাব চাচার হাতে গায়ে লেগে যায়।এখন আমাকে দেখিয়ে বলছেন মায়ের প্রশ্রাব ধরার সৌভাগ্য কয়টা সন্তানের হয় হাসতে হাসতে বলছিলেন।আমিও ভেচিং কেটেই বলেছিলাম, গুনকীর্তণ চালাচ্ছেন।

দাদা দাদীকে আব্বু চাচা ফুপুরা খাওয়ায় দিতেন একদম ছোট্ট বেলার মত দুটি বাচ্চাকে দেখাশুনা করা।না খেলে চাইলে শাসন করা।রাতে মাথায় হাত বিলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ানো।এগুলো ছিল নিত্য দিনের রুটিন।আর রাহেনা ফুপু(আমার দাদীকে দেখাশুনা করতেন) যার প্রতি সারা জীবনে আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকবে অনেক সাহায্য করেছেন দাদী মাকে।

শেষ ভাগে দাদী খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকতেন খাবেন না ফেলবেন না কি যন্ত্রণা।

তখন দেখতাম আব্বু চাচা ফুপুরা কত কত বড় বড় মানুষগুলো খুব সুন্দর করে মিনতি করতেন খাও মা খাও।তারপর কেউ কেউ গল্প বলা শুরু করতেন।কি চমত্‍কার প্রতিটি দৃশ্য।এখনও হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়।

বিষয়: বিবিধ

১১২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File