অগোছানো কথনমেলা-১৩
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:৩৯:০০ রাত
গাছের সাথে আমার নিবির সম্পর্ক।
গাছের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন তাও বছর কত পেরিয়ে গেছে।গাছের ভাল দিক এটা সবসময় অদৃশ্য সাহস দেয়।
আমি আমার গ্রামের জীবনের প্রতিটি দিনই একটা করে স্মরণীয় স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।
পুকুর থেকে ধরা হত মাছ অনেক মজার সব স্মৃতি পুকুরকে ঘিরে।
পুকুরের ঠিক উপরে একটা কামড়াঙ্গার গাছ আছে আমার কাজই ছিল ঐ গাছের উপর উঠে বসে থাকা।ওটা আমার প্রিয় গাছ।আর পাতা ছিড়ে ছিড়ে একা কথা বলা আর খেলা।
কামড়াঙ্গার কাছে মাঝে মাঝে টিয়া পাখিসহ হরেক রকম পাখিরা আসত আমার খেলার সঙ্গী ওরা তবে নিরিবিলি থাকতে হত।
যেহেতু আমি একা একায় একটা জগত তৈরি করতাম এখনও সেই জগতে মাঝে মাঝে ডুব দেই।
সুতরাং বেশ চমত্কার সময় কাটত।
ঐ গাছের মাথা থেকে দেখা যেত কেউ বাড়ি থেকে পুকুর ঘাটে আসছে কিনা।
দাদা পাঁচ মিনিট আমাকে না দেখলেই খুঁজাখুজি শুরু করবেন এটায় দাদার অভ্যাস।
পুকুর পাড়ে এসে ডাকছেন ভাগ্য ভাল গাছের দিকে তাকান না।
চুপচাপ বসে থাকি যখনই দাদা চলে যাচ্ছেন আস্তে করে গাছ থেকে নেমে ভোঁ দৌড় তারপর দাদাকে ধরে ফেলি।
দাদাকে ধরতে পারলেই দাদার চমত্কার হাসিটা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।
যখনই দাদা বলতেন
তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে অস্তির তোমার দাদী।
আমি ত এখানেই আপনার পাশেই ছিলাম।
দাদী হচ্ছেন,
আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তিত্ববান এবং আদর্শবান নারী।বড় ফুপু সাথে গল্প করছিলাম সেদিন,
আমি বলছিলাম দাদীকে নিয়ে লিখতে পারছি না।আসলেই তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আরো জানা দরকার।
বড় ফুপু তার জীবনের কিছু স্মৃতি বর্ণনা করলেনঃতার ভাষ্যমতে,
একবার আরো কিছু বড় বাড়ির মেয়েদের সাথে দর্জির দোকানে কাপড় আনতে গেছি পুতুলের জন্য হয়ত তখন বয়স ১০ এর মত হবে হঠাত্ আমার হাতে দর্জির কাটা একটা জামার হাত উঠে আসে।যখন দর্জি খুঁজতে ছিলেন।
একটা মেয়ে বলছিল আমার হাতে
লজ্জা পেয়ে এমন দৌড় দিছি এক দৌড়ে বাড়িতে যখন বাড়ির গেটে কাছে আসছি দেখি মা দাড়িয়ে গেটে
মা যখন বলল কি হয়েছে?
তখন একটা মেয়ে বলল ও ত দর্জির জামার হাত নিয়ে আসছে।
সাথে সাথে আমাকে টাস টাস করে দুটি চাপ্পর দিলেন এমনি খুব লজ্জা পাইছিলাম।মার শাসনের পর কোন দিন আর কার জিনিস ধরিনি।তারপর যখন দাদী মা(ফুপির দাদী) কাপড় নিয়ে ইন্দ্রিরা(বিশাল কুয়া)তখন নাকি আমার দাদী ফুপুর মা বলতেন যাও মা তোমার দাদীর কাপড়গুলো ধুঁয়ে দাও ফুপি করত কি তখন যখন তার দাদী সব কিছু রেডি করত তখন বাতরুমে ডুকে ওনার দাদীকে বলতেনঃ
যাও যাও বহুত করছেন এখন আমাকে একটু কাজ করতে দাও
তিনি তার দাদীকে সবসময় সাহায্য করতেন।
[ইন্দ্রিরাঃআগের দিনে থাকত বাতরুমে খুবই মজার ব্যাপার ইন্দ্রিরা জিনিসটার মধ্যে বাতলিতে দড়ি দিয়ে পানিতে নামিয়ে পানি উঠাতে হয় যখন আমার দাদীর বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম তখন ইন্দ্রিরা থেকে পানি উঠাই এখনও আছে ফুলবাড়িতে]
বেশ ভাল লেগেছে আমার দাদীর ভুমিকা আসলেই মা সন্তানের জন্য প্রথম বিদ্যালয়।
হারিকেন আলোর মিট মিট আলোয় আমরা গল্প করতাম।দাদা দাদী আব্বু আমি ভাইয়া চাচা সবাই।
হুক্কা খেতেন একসময় দাদা
ত দাদীকে বললাম
আপনি টেনে ছিলেন কখনও।
তখন বললেন যখন তামাক সাজিয়ে আগুন ধরিয়ে চেক করতেন,তখন দুই একবার টেনে দেখতে হয়।ও আচ্ছা বলতাম আপনি নেশাও করতেন হা হা।কি মজা।বর্ষাকালে আমার কাজ ছিল দাদার সাথে ঘুরাঘুরি করা দাদা এত বার বের হতেন যে প্রতিবারই তার কাপড় চোপড় ভিজে যেত শেষ মেশ দাদীর শাড়ি পড়তে হত আর আমার জ্বর আসত
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে।যেহেতু পুকুর একবারে উচলে যেত সুতরাং বুষ্টিতে ভিজে ভিজে মাছ ধরার জন্য ফাঁদ পাতা হত।মাঝে মাঝে পাগাড়ে মাটি আর জাল দিতে হত।এছাড়া খুলিতে(বাড়ির সামনের অংশ) এত পানি হত যে ওখানে দাদা জাল ফেলাতেন আর আমার হাতে থাকত বালতি।শীতকালে আমরা কয়লার আগুনে আগুন পোহাতাম স্মৃতিরা জমা থাকে রংপুরে অনেক শীত পড়ে।
যখন দাদা ইন্তেকাল করেন তার মাস কয়েক পরে একদিন দাদীকে চিতই পিঠা করে খাওয়াচ্ছি ত
দাদী পিঠা দেখেই বললেন তোর দাদা খুব পছন্দ করে আগে তোর দাদাকে খাওয়া তারপর আমাকে দে।আমি বলি তিনি ত অনেক দামি খাবার খাচ্ছেন এখন আপনি খান।
দাদীর স্মৃতিতে ঠিক তখন নেই,দাদা দুনিয়ার বুকে নেই কিন্তু ঠিকই দাদার পছন্দের খাবার গুলো দাদীর মনে আছে।
কি গভীর টান?আমি ভাবি
কি অদ্ভুত
কি চমত্কার
কতই না চমত্কার দাদা দাদীর বন্ধন আর স্মৃতিরা ফ্রেমে আটকে রাখা অনুভূতিগুলো।
আমার মাঝে মাঝে লিখতে ইচ্ছে করে তখনই অগোছানো কখনমেলা নিয়ে বসি হয়ত তখন একবার দাদা দাদীকে সামনে দেখতে পাই।
খারাপ কি?
অনেক দুর থেকে ভালবাসারা হাতছানি দিয়ে ডাক দিচ্ছে।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন