অবলা মনে সুরের ব্যাথা

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:৪১:৩৪ রাত

আজকে বাসায় কবরের মত নিস্তদ্ধতা।কারও আজ ভাব নেই।দীর্ঘ দিন পর মনে হচ্ছে আবার ঢাকায় আসছি যে বারই রংপুর থেকে ঢাকায় আসতাম এক রাশ অভিমান খেলা করত বেশ কিছু দিন।আজ ত বাসার প্রতিটা সদস্যের মনে আকাশের কালো মেঘ জমেছে।কারও যদি এখন চোখে বৃষ্টি নামেও তবুও কেউ খোঁজ নিতেও যাবে না ভুলেও।হয়ত এই ছোট্ট বাবুটি এমন মায়াবী জগত তৈরি করেছে।আমাদের কাছে এমন একটা নিয়ামত হিসেবে এসেছে এ কয় মাস জুড়ে ছিল যে সত্যি আমরা এখন খুব একা।যে ও যে ওর বাসায় চলে যাবে তাই আমরা মানতে পারছি না।

ধীরে ধীরে নয় মাস আগের চলে যায় এক বিকালে ছোট্ট একটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাচ্চাকে নার্স বের করে দিলেন।এত বেশি সদস্য তাকে দোয়া করতে এসেছে আমি বাচ্চাটি নেওয়ার কোন সুযোগ ঘন্টা খানেক পেলাম না।অপেক্ষা পর একবার ভাইয়া কানে আযান দিলেন তারপর আরেকবার আব্বুও আযান দিলেন।মনে হয় মেয়ে হলে কানে আযান দিতে হয়।

এত্ত ছোট্ট একটা বাবু যে কোলে নিতেই ভয় করত।একে একে সবাই যখন চলে গেল তখন সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর।এত্ত ছোট্ট বাচ্চাকে এভাবে কাছ থেকে কখন নেই নি আগে তাই সতর্ক থাকতে হচ্ছে বার বার।তার উপর পুরো দ্বায়িত্বই একা আমার ঘাড়ে পড়েছে যেখানে বাচ্চাটিকে নিতেই ভয় করছিল।

পোশাক পাল্টানো ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর একটা কাজ যেমন ছোট্ট বডি যেন রগ দেখা যাচ্ছে তার উপর ছোট্ট হাত আর পাগুলো ধরতেই মনে হয় এই বুঝি ব্যাথা পাবে।খুব ভয় করে যখন বাবুটি ঘুমিয়ে পড়ে।আমি বার বার মশারি সরিয়ে চেক করি আসতে নিশ্বাস ওঠা নামা করে কিনা। যেহেতু শীতকালে বাবুর জন্ম সুতরাং এই ছোট্ট বাবুটির ঠান্ডা লাগছে কিনা সে ব্যাপারে বারতি সতর্ক ত থাকতেই হত।

ওকে নিয়ে রোদে জানালার সাইডে দাড়িয়ে থাকতে হয় কারণ তখন তিনি হালকা হালকা হলুদ হয়ে যাচ্ছিলেন।তিন দিন পর আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়।ওর হওয়ার পর থেকে একটানা রাত দিন ডিউটি ক্লান্তিহীনভাবে।অবাক হই সেই সময় ক্লান্তিরা কোথায় ছুটি নিয়েছিল আল্লাহ ভাল জানেন।রাতেও ঘুমানো যেত না কারণ যদি ঠান্ডার মধ্যে পড়ে থাকে বাবু।আর সকালে ওঠেই ছাদে দৌড়াতে হত ওকে নিয়ে কারণ ডাক্তারের নিদের্শ।অদ্ভুত লাগত আব্বু আর আমি বাবুকে ছাদে নিয়ে যেতাম প্রায় প্রতিদিনই ।

আব্বু যেতেন আমার সাথে।এমন বাবা যে আমরা পেয়েছি সত্যি আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া।মাঝে মাঝে বাবু কাপড় চোপড় শুকাতে দিতেও আব্বু সাহায্য করত।

আর তিনি বাবু রোদে আরাম করে ঘুমাতেন।

এভাবে ধীরে ধীরে মাস কেটে যায়।এক মাস পরে আমরা ওকে গোসল করাই।

এর প্রতিটি দিনের বেড়ে ওঠা দেখতে দেখতে বাবুটি বাবলিং[অস্পষ্ট শব্দ মাঝে মাঝে দুই একটা স্পষ্ট বলে] করা শুরু করেছে।সেদিন ত বসতে পারত না এখন বাসাময় হামাগুড়ি দিয়ে গোটা বাসা মাতিয়ে রাখে।সব কিছু ধরে দাড়াতেও তার জুড়ি নেই।বাসায় আসব ভার্সিটি থেকে ও কেমন করে যেন চিনে ফেলে অবাক হয়ে যাই।ভাবছি ওর রাগ মান অভিমান অভিযোগগুলোর সাথে কিভাবে যেন মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি আমরা।বেশ কষ্টকর।মানতেই কষ্ট হচ্ছে ।কিন্তু পৃথিবী এত নিষ্ঠুর কয়দিন খুব মন খারাপ থেকে ধীরে ধীরে কেটে যাবে আবার স্বাভাবিকভাবে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ব হয়ত।এটায় জীবন।মন খারাপের সময়গুলো হয়ত বৃষ্টিতে ভিজে যাবে।আর কষ্টগুলো হয়ত মেঘের ভেলায় ভেসে যাবে।অনেক শূন্যতা ঘিরে ধরে আছে তবুও।(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File