অগোছানো কথনমেলা-৬

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৭:১৩ দুপুর

ছোট্ট বেলা থেকেই একটা দৃশ্যই সবচেয়ে আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছে তা হচ্ছে

আমার দাদা দাদী।

আমি দেখতাম তার ছেলে মেয়ে ছেলের বউ মেয়ে জামাতা

নাতি নাতনীরা এমন কি গ্রাম বাসী ভালবাসত।আমি অবশ্য দাদার লাঠিকে খুব পছন্দ করতাম।আমাদের গ্রামে ছিল তখন প্রচুর সাপ।সাপ প্রাণী বড়ই চমত্‍কার দেখতে তাই লাঠি নিয়ে পুকুর ঘাটে যেয়ে বর্শি ছোট্ট পুটি মাছ ধরার মজায় আলাদা।মাছ মুলত দাদীর সাথেই বসে ধরতে বেশি আনন্দের দাদী বর্শি ধরেন বড় মাছ আর আমি ছোট মাছ।ভদ্র মানুষের মত লাঠি জঞ্জলে ফেলে দিয়ে বাসায় আসতাম।কিছুপর দাদা খুঁজে না পেয়ে বিকল্প আরেকটি লাঠি বের করতেন।

দাদী হচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ট রাধুনী আর তার নাতনী মনে হয় ভাত রান্না করতে পারবে কিনা সন্দেহ।

আব্বু একটা মেসেজ ছিলঃ

তোমাদের অনেক উচ্চ শিক্ষিত হতে এটা আমি চাইনি কখন আমি চেয়েছিলাম তোমরা সবাই নৈতিক চরিত্রের উন্নত মানুষ হও।

আমরা সবাই সঠিকভাবে আব্বুর মেসেজকে ধারণ করতে পারিনি।

দাদা দাদী তার অধিকাংশ সন্তানের ক্ষেত্রে সম্ভবত পেরেছিলেন।

আমি দেখেছি তার প্রতিটি সন্তান তাদের গভীর ভাবে ভালবাসতেন ও যত্ন করতেন।

আমি দাদা দাদী দুই বছর বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন।

হ্যা দাদাকে হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হয়েছিল দুই তিন সপ্তাহ পরই।

HSC পরীক্ষা শেষ করে চলে আসতাম রঙ্গিন ঢাকা শহরে।বড় বড় বিল্ডিং গুলোর মত বছরে রং পাল্টায়।তেমনি অক্টোপাসের মত রং পরিবর্তনের ক্ষমতা মানুষের মধ্যে প্রকট।শুরু হল ভিন্ন পরিবেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী আত্নীয় স্বজনের বাসায় জীবন।আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ।খুব আধুনিকতা ঘেরা জগত সকাল শুরু TV আর বন্ধ হত হয়ত মাঝ রাতে।

সবচেয়ে একটা ভাল দিক ছিল ঐ আত্নীয়ের আর কাজিন সবাই আমরা মেয়ে ছিলাম।

দেখতাম কিভাবে কালচার গ্রাস করে ফেলে সমাজকে।

সবাই ধুমছে প্রেম করছে খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুরছে আর একটা ছ্যাকা খেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করছে।

দুটি ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিলাম একটায় চান্স পেলাম তবে ওয়েটিং এ ডাকা হল ভর্তি হলাম Psychology তে।মাইগ্রেশন করে পেলাম Physics।আব্বুর ইচ্ছা আমি Psychology তে পরি।আব্বুর সিদ্ধান্তগুলো যথার্থ ছিল আমার মনে HSC তে Physics এর একেকটা প্রশ্ন ৫০উর্ধ্বে লিখে লিখে মুখস্ত করেছি।

তবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই পূর্বের ভুল আর করলাম না প্রতিটি ক্লাসের মেয়েদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম।আমার বোসম ফেন্ডের দরকার নেই তবে সবার সাথেই একটা চমত্‍কার বন্ধন তৈরি হোক এটা আমার টার্গেট ছিল।

যেহেতু Psychology তে প্রচুর প্র্যাকটিক্যাল আর আমার অধিকাংশ সময় ছেলেদের পড়ত আমি ওদের সাথেও একটা তফাত্‍ রেখে ভাল আচরণ করার চেষ্টা করি।খুব কাছ থেকে দেখি আস্তিক নাস্তিক আর ড্রাগে আচ্ছন্ন অথবা মেনিয়া পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারসহ নানান Psychology সমস্যায় আক্রান্ত আত্নীয় স্বজন ব্যক্তিদের।তবে ঔ আত্নীয় সংগঠনে সংযুক্ত হওয়া পছন্দ না করলেও বছর খানের পর বুঝতে পারছি টিভি প্রতি আসক্ত হয়ে পরছি ভাল থাকতে হলে সংগঠন ছাড়া বিকল্প নাই।এটা একটা বিশাল নিয়ামত।

তবে আব্বু দূরে থাকতেও তার সিদ্ধান্ত কাছেই থাকত ভার্সিটি থেকে সীতাকুন্ডে যাবে সবাই আব্বুকে ফোন দিলাম।যাব কিনা বলতেন ওখানে না গিলে কি তোমার মার্ক কাটবে।নিষেধ করছেন সরাসরি।

বললাম স্যার ম্যাম সবাই মিলে যাচ্ছে।

আমার অনেক আত্নীয় স্বজনের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলেন পরামর্শ করে যাও।

সুতরাং পাচ দিতাম পর ফোন দিলাম ওখানে না গেলে মার্ক কাটবেনা আবার ছেলে মেয়ে একসাথে পরিবেশ ভাল নাও হতে পারে।যাব না।আমি এত্ত এত্ত অভিভাবকের অনুমতি নেওয়ার কোন দরকারই মনে করে নি।

কিন্তু আব্বু বেশ খুশিই হলেন।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১১৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File