অগোছানো কথনমেলা-৫

লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:১৫:২১ রাত

আমার স্কুল জীবনটি বড়ই আশ্চার্য একটা জগত ছিল।

ক্লাস ত্রীতে আমি ফাস্ট হয়েছিলাম।কিন্তু ফোর এর ফাস্ট টার্ম পরীক্ষায় হঠাত্‍ সেকেন্ড হলাম।তারপর থেকে ঐ স্কূলে যাওয়া বন্ধ।স্যারেরা বাড়িতে এসে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আব্বু চাচ্ছিলেন না আর আমারও প্রচন্ড অভিমান ছিল।পরীক্ষা খারাপ দিয়েছি বলেই সেকেন্ড হয়েছি তারপর থেকে কোন স্কুলের সাধারণ পরীক্ষায় ফাস্ট হয়নি আমি।

ঐ সময় কিছু দিন যাওয়া শুরু করি প্রাইমারী স্কুলে কিন্তু আব্বু হঠাত্‍ করেই আমাদের ছোট দুই ভাই বোনকে পাঠিয়ে দিলেন রংপুরে ছোট্ট ফুপির বাসায়।ক্লাস ফোর আর আমি কম্লিট করিনি।ক্লাস ফাইভে ভর্তি হলাম তাও আবার ফাস্ট টার্মের পরীক্ষা শেষে একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে।বলা যায় ঐ শহরের দশটা স্কুলের তালিকাতেও নেই যার নাম।

এই সময়টি কাটিয়েছি এতিম সন্তানের মত।আব্বু আম্মুকে ছেড়ে থাকতে যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়েও বেশি পেয়েছিলাম আমার গ্রামকে আমার জানের জান দাদা দাদীকে ছেড়ে এসেছি বলে।প্রায় এক বছর মত আমি মনে হয় প্রতিদিন কেঁদেছি।এক বছর পর আম্মু চলে এসেছিলেন রংপুর শহরে।সবার ইচ্ছে রংপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করি।এর মধ্যে ক্লাস সিক্সে ক্লাস করা বন্ধই বলা চলে।টানা প্রায় অনেক কয় মাস কোচিং করার পর ভর্তি পরীক্ষার দুই তিন দিন আগে আব্বুর সাথে এক শিক্ষকের বাড়ি গেলাম পরীক্ষা কি পদ্ধতিতে হবে সঠিকভাবে জানার জন্য।ঐ স্যার বলেছিলেন দুই হাজার টাকা দিন শুধু ভর্তি পরীক্ষা দিলেই চান্স পেয়ে যাবে।

শান্ত ভাবেই বাসায় আসলেন।এবং ঠিক পরীক্ষা দেওয়ার আগের দিন আব্বু আমি ত ঘুষ দিয়ে ভর্তি করাব না।

কিন্তু সবাই বুঝাচ্ছে পরীক্ষা অন্তত দিক চান্স পেলেই ভর্তি হবে।

কিন্তু তা আর হল না আব্বু আমাকে গ্রামের বাড়ি দাদা দাদীর কাছে নিয়ে গেলেন।আমিও বেশ আনন্দের সাথে গেলাম।কারণ আমার মনটা অলটাইম গ্রামেই পড়ে থাকত আর আমরা কেউ গেলেই দাদা দাদী কি খুশি হয় মনে হয় যেন ঈদের দিন।

ঐ স্কুলেই থাকলাম।তবে মজার ব্যাপার ক্লাস সিক্সে সবগুলো তিন টার্ম পরীক্ষা দিয়েছি তেমন ক্লাস করাই হয়নি।আর ক্লাস সেভেন মনে হয় ক্লাস করিনি শুধু পরীক্ষা দিতাম।আর পাশ করে পরের ক্লাসে ভর্তি হতাম।পড়ালেখার প্রতি একটু সিরিয়াস হই ক্লাস নাইনের শেষ দিক থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত এস এস সি।তবে ঐ স্কুলে এস এস সি রেজাল্টে ফাস্টই হয়েছিলাম।ক্লাসের গেলেই একটা বেঞ্চের এক কোণে বসে থাকতাম।ছেলেদের সাথে কথা ত বলাই হত না এমন কি তখন মেয়ে কার সাথেও তেমন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি।আমার বাংলা ম্যামকে খুব পছন্দ কারণ তিনি খুব সুন্দর করে বাংলা পড়াতেন যদিও তিনি আমাকে আবার অপছন্দ করতেন।পরে অবশ্য তার পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছিলাম।যেহেতু স্কুল জীবন শেষ হল ভর্তি হলাম কলেজে।এসব সময় তিনটি জিনিস আমার ভালই বন্ধু হয়েছিলঃ বই, সংগঠন আর পরিবার।কলেজে ওঠেও যেহেতু সাইন্সে প্রাকটিক্যাল ক্লাস তাই শুধু যেদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস ছিল সেদিন যেতাম তাছাড়া আমার কলেজ যাওয়ার প্রতি আগ্রহই ছিল না।আর ঠিক কষ্টের ব্যাপার কলেজের কোন ফেন্ডের সাথেই আমার কোন যোগাযোগের মত বন্ধুত্বই গড়ে ওঠেনি।একটা ভাল দিক হল গীবত কম হয়েছে।খারাপ দিক কে কোথায় পড়ে এখন কিছুই জানি না।

কলেজ এমন কোন পরীক্ষা নেই যেখানে আমি একটা দুইটা বিষয়ে ফেল করিনি।টেস্ট পরীক্ষার পর আব্বু আমার রেজাল্ট দেখে কিছুতেই পরীক্ষা দিতে দিবেন না।সেই দুই বছর থেকে কন্টিনিউ প্রাইভেট পড়ছ পড়াশুনা কি ঘোড়ার ডিম করছ তবুও কেন কলেজের পরীক্ষায় এত ফালতু রেজাল্ট তোমার।দোষটি যদিও আমারই ছিল বটে এক সাথে সাইন্সের বারটি বিষয় কাভার করা বেশ কঠিন।যেহেতু বোঝার চেয়ে মুখস্ত বিদ্যায় আমি পারদর্শী।

আর আমার একটায় জেদ পরীক্ষা ত আমি দিবই।

রাগ করেই আর আমাকে ফরম ফিলাভ করাবেন না।আমিও ভদ্র মানুষের মত চাচার কাছে টাকা নিয়েই ফরম ফিলাভ করলাম।

আশ্চার্য হলেও সত্য আমার এইস এস সি রেজাল্ট বের হবার পর আব্বুই বেশি খুশি হয়েছিলেন।তবে পরীক্ষার তিন মাস আগে

হঠাত্‍ দাদা অসুস্থ হলেন হসপিটালে ভর্তি করানো হল।আমার দেখা মতে আমার দাদা দাদী শ্রেষ্ট বাবা মা আর তাদের প্রতিটি সন্তান শ্রেষ্ট সন্তান।চমত্‍কার ভাবে সেবা করতেন বাবা মাকে।ঘুম থেকে উঠেই দিনের ডিউটি ছিল আমার আর ফুপির ঠিক প্রতি রাতে আব্বু কাজ শেষে রাতে আসতেন আমি আব্বু রিক্সায় করে নানান রকম গল্প করতে করতে বাসায় চলে এসেই ঘুম।রাতে থাকতেন চাচা আর ভাইয়া।বাকি ফুপিরা ত আছেন সবসময়।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৭৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File