পুরো বিচারকার্যটা দেখুন কত সব কাহিনীতে ভরপুর। By the way, বিচারকার্য গণমাধ্যমে Live দেখতে চাই.. চাই.. চাই..

লিখেছেন লিখেছেন মাওহিবা তাকিয়া ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৫৩:৫০ সন্ধ্যা

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ঘটনায় সাড়ে ৪শ' জনকে হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হলেও প্রসিকিউশন কোনো হত্যার ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততা পায়নি। অর্থাৎ আব্দুল কাদের মোল্লা নিজ হাতে কাউকে গুলী করে হত্যা করেছেন এমন কোনো সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দেননি। অধিকাংশ সাক্ষীই বলেছেন, তারা কাদের মোল্লার জড়িত থাকার বিষয়টি শুনেছেন। ডিফেন্স আইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারী অপরাধের মামলায় সাজা দিতে হলে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে। প্রসিকিউশন যে ছয়টি অভিযোগ করেছে এর মধ্যে প্রথম তিনটিতে প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী ছিল না। চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে রায়ে বলা হয়েছে। আর পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ অভিযোগ আমরা যুক্তি দিয়ে নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি। তা সত্ত্বেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে সন্দেহের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হয়েছে। আদালত যে রায় দিয়েছে তা আবেগতাড়িত। সম্পূর্ণ আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়ে রায় দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই

ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৬টি অভিযোগ গঠন করে তার ওপর বিচার অনুষ্ঠিত হয়। এর কোনটিতেই তিনি সরাসরি জড়িত এমন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। নিচে অভিযোগের ভিত্তিতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ দেয়া হলো-

প্রথম চার্জ: মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পল্লবকে নবাবপুর থেকে ধরে এনে মিরপুরে ঈদগাহ মাঠে গাছের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা করা। এই চার্জে পিডাব্লিউ-২ (প্রসিকিউশনের সাক্ষী) সৈয়দ শহিদুল হক মামা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেন। তিনি বলেন যে, তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নির্দেশে আক্তার গুন্ডা পল্লবকে ঠাঠারি বাজার থেকে ধরে এনে মিরপুর হত্যা করে। কিন্তু তিনি কার কাছ থেকে শুনেছেন এ ব্যাপারে সঠিক কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি। পিডাব্লিউ-১০ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম বলেছেন যে, তিনি শুনেছেন শহীদ পল্লবকে কাদের মোল্লার নির্দেশে মারা হয়। কিন্তু তিনি কার কাছ থেকে শুনেছেন এই ব্যাপারে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। সর্বশেষ ডিডাব্লিউ-৪ (ডিফেন্স পক্ষের সাক্ষী) শাহেরা যিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী ছিলেন যার অন্যতম পরিচয় হচ্ছে তিনি পল্লবের ভাবী। তিনি কখনও শহীদ পল্লবের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কাদের মোল্লার নাম শুনেনি। শুধু তাই নয় তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কোন প্রকার জবানবন্দি গ্রহণ না করে কাদের মোল্লার নাম জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি প্রদান করেন।

দ্বিতীয় চার্জ: আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার্জে সাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ-২: সৈয়দ শহিদুল হক মামা, পিডাব্লিউ-৪: কবি কাজী রোজী, পিডাব্লিউ- ১০: সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম।

পিডাব্লিউ- ২ বলেন, তিনি শুনেছেন কবি মেহেরুন্নেসাকে কাদের মোল্লার নির্দেশে হত্যা করা হয় কিন্তু তিনি কার মাধ্যমে শুনেছেন কিভাবে শুনেছেন তা আসামী পক্ষের প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিতে পারেননি। পিডাব্লিউ-৪ কবি কাজী রোজী বলেন তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারীরা শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেন। কিন্তু কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছেন কিনা তিনি তা শুনেননি। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পুরো ৯মাসই তিনি ভারতে ছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে তিনি তা শুনেন। অপরদিকে তার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ‘‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’’ নামক বইয়ে তিনি শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার মৃত্যুর ব্যাপারে বিশদভাবে লিখেন। কিন্তু তিনি তার বইয়ে কাদের মোল্লার নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। পিডাব্লিউ- ১০ বলেন শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছে বিহারীরা এবং এই হত্যার ব্যাপারে তিনি কোন ভাবেই কাদের মোল্লাকে জড়িত করেননি।

তৃতীয় চার্জ: আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেবকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে সাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ-৫ খন্দকার আবুল আহসান এবং পিডাব্লিউ- ১০ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম। তারা উভয়ে শোনা সাক্ষী এবং তারা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি খন্দকার আবু তালেব হত্যাকান্ডের সাথে কাদের মোল্লা জড়িত ব্যাপারটি।

চতুর্থ চার্জ: কেরানীগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মওলা এবং ওসমান গনি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে সাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ-১ মোজাফফর আহমেদ খান, পিডাব্লিউ-৭ আব্দুল মজিদ পালোয়ান এবং পিডাব্লিউ- ৮ নুর জাহান। এই তিনজন সাক্ষীর কেউই আব্দুল কাদের মোল্লার কেরানীগঞ্জের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকার কথা এবং ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি। পিডাব্লিউ-১ তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ঐ সময় তিনি কাদের মোল্লাকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে দেখেননি। পিডাব্লিউ-৭ আব্দুল মজিদ পালোয়ান তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ঐ সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। এবং তার পুরো পরিবার এবং এলাকাবাসী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র তিনিই ঘটনা দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান। তিনি ঘটনার সাথে কাদের মোল্লার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে বলেন, কাদের মোল্লা সাহেব ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এ কথা তিনি শুনেছেন। সর্বশেষ তিনি আরো উল্লেখ করেন, তিনি ঐ এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। পিডাব্লিউ-৮ নুর জাহান তার জবানবন্দিতে বলেন, তার স্বামীর হত্যাকান্ডের ব্যাপার উল্লেখ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি যখন লাশ দেখতে যান তখন তিনি একজন খাটো এবং কালো লোকের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন ঐ ব্যক্তিটি ছিল কাদের মোল্লা। অথচ ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ হলো ১৯৭৬ সাল এবং ট্রাইব্যুনাল ও তদন্তকারী অফিসার তার বাড়িকে কোন ঘটনাস্থল হিসাবে নিধারণ করেনি এবং সুনির্দিষ্ট ঘটনাস্থল থেকে তার বাড়ির দূরত্ব হলো ৫ কি: মি: যা তদন্তকারী কর্মকর্তা তার সাক্ষ্যে বলে গেছেন।

পঞ্চম চার্জ: পল্লবীর আলোকদি গ্রামের হত্যাকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে সাক্ষী দিয়েছেন পিডাব্লিউ-৬ শফিউদ্দিন মোল্লা এবং পিডাব্লিউ-৯ আমির হোসেন মোল্লা। পিডাব্লিউ-৬ তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন তিনি পার্শ্ববর্তী ঝোপ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলী করতে দেখেছেন। অপরদিকে তার অপর ছোট ভাই পিডাব্লিউ-৪ আলতাফ উদ্দিন মোল্লা ট্রাইব্যুনালে বলেন, ঘটনার দিন তাদের পুরো পরিবার পালিয়ে গিয়েছিল সাভারস্থ শারুলিয়া গ্রামে। সেখানে তার বড় ভাই আলতাফ উদ্দিন মোল্লাও তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। পিডাব্লিউ-৯ আমির হোসেন মোল্লা মিরপুর এলাকার লাট ভাই হিসাবে পরিচিত। তিনি হাইকোর্টের বর্তমান একজন বিচারপতির জায়গা দখল করে সাম্প্রতিক জেলে গেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদখল এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে শতাধিক মামলা বিচারাধীন আছে।

ষষ্ঠ চার্জ : প্রসিকিউশন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হযরত আলী লসকর এবং তার পরিবারকে হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ আনেন। যার একমাত্র নাক্ষী হলো মোমেনা বেগম পিডাব্লিউ-৩। তিনি বলেন যে, তিনি কাদের মোল্লাকে দেখেননি শুনেছেন তিনি এই নাম শুনেছেন তার আব্বার মুখ থেকে। এবং পরবর্তীতে তিনি শুনেন যে তার পিতার মৃত্যুর জন্য কাদের মোল্লাই দায়ী।

ডিফেন্স পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগেরই প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নেই। এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দি দিলেও সাক্ষীদের কেউই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগেরও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য তারা দিতে পারেননি। প্রায় সব সাক্ষীই বলেছেন তারা অন্যের কাছে এসব অভিযোগের কথা শুনেছেন মাত্র।

কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মোমেনার জবানবন্দী আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ডকুমেন্টে গরমিল পাওয়া গেছে।

মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ ঘটনার। একই সাক্ষী মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বিষয়ে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা দেখেছেন। তিনি নিজেও লাঞ্ছনার শিকার হন এবং একপর্যায় অচেতন হয়ে পড়েন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, ঘটনার দুই দিন আগে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। কোর্টে বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শ্বশুর বাড়ি চলে যান।

ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বারকক্ষে বিচার পরিচালনা) মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ফলে সে সময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায় বর্ণনা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত আর্গুমেন্টে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক আরো বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত এই মামলায় যেসকল অভিযোগ আনা হয়েছে এর প্রায় সবকটি অভিযোগই সাক্ষীরা অন্যের কাছে শুনেছেন। বিশেষ করে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত ৬ টি চার্জের মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগের কথাই সাক্ষীরা অন্যের কাছে শুনেছেন। তারা কেউই প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নন।

আবেগতাড়িত রায়

আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাজার প্রতিক্রিয়ায় ডিফেন্সের প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা সুবিচার পাইনি। এই রায় ন্যায়ভ্রষ্ট। সরকারের প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগের প্রতিটি ডিফেন্স নস্যাৎ করতে সক্ষম হলেও সাক্ষ্য প্রমাণের বাইরে গিয়ে চরমদন্ডের রায় দেয়া হয়েছে। সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুসারে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেয়া উচিত ছিলো। এই রায় দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। যত তাড়াতাড়ি এই রায় বাতিল হবে দেশ ও জাতির জন্য তত মঙ্গলজনক হবে। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফৌজদারী অপরাধের মামলায় সাজা দিতে হলে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে। প্রসিকিউশন যে ছয়টি অভিযোগ করেছে এরমধ্যে প্রথম তিনটিতে প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী ছিল না। চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে রায়ে বলা হয়েছে। আর পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ অভিযোগ আমরা যুক্তি দিয়ে নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি। তা সত্ত্বেও আব্দুল কাদের মোল্লাকে সন্দেহের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হয়েছে। আদালত যে রায় দিয়েছে তা আবেগতাড়িত। সম্পূর্ণ আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়ে রায় দিয়েছে। আমরা এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে তিনটি রায়ের নজির আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। আদালত রায়গুলোকে সাদরে গ্রহণও করেছিলেন। কিন্তু এখন উপস্থাপিত রায় তিনটির কোন অংশই উল্লেখ করা হয়নি। একজন বিচারক আইনের ভিত্তিতে বিচার্য বিষয়ের পর্যালোচনা করে রায় দিয়ে থাকেন। তারা আইন তৈরি করতে পারেন না। বিশ্বের অনেক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংগঠন বলেছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক নিচে। সেখানে রায়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে আইনকে আন্তর্জাতিক বলা হয়েছে।

গ্রেফতার ও অবৈধ আটক

আব্দুল কাদের মোল্লাকে বর্তমান সরকার ১৩ই জুলাই ২০১০ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন থেকে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে পল্লবী পুলিশ স্টেশন কেস নং- ৬০(১)০৮ এবং পরবর্তীতে কেরানীগঞ্জ থানাধীন মামলা নং- ৩০(১২)০৭ এ গ্রেফতার দেখায়। এরপর ২২শে জুলাই ২০১০ তারিখে আইসিটিবিডি মিস কেস নং- ০১/২০১০ এ কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার দেখানো হয়। তখন থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অবৈধভাবে আটক রাখা হয় যার কারণে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অব আর্বিট্রেরি ডিটেনশন তাকে তাড়াতাড়ি মুক্তি দেয়ার জন্য বলে বর্তমান সরকারকে।

অভিযোগ গঠন ও বিচিত্র যত সাক্ষী

২৮শে ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় এবং ২৮শে মে ২০১২ তারিখে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করে ৬টি অভিযোগের ভিত্তিতে। ৬টি অভিযোগের উপর প্রসিকিউশন সর্বমোট ১২ জন সাক্ষীকে হাজির করেন। এর বিপরীতে ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্স পক্ষের প্রদত্ত ৯৬৫ জন সাক্ষীর মধ্যে শুধুমাত্র ৬ জন সাক্ষীকে হাজির করার অনুমতি দেয়।

প্রথমে, প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে গত সর্বমোট ৪০ জন সাক্ষীর নাম প্রদান করেন। কিন্তু তার মধ্য থেকে শুধুমাত্র ৩ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করেন। এরপর প্রসিকিউশন ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল ৩ জন নতুন সাক্ষীর জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। যার মধ্য থেকে ২জনকে ট্রাইব্যুনালের সামনে জবানবন্দি প্রদানের জন্য হাজির করেন। প্রসিকিউশন আবার ২ মে নতুন তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি প্রদান করেছে যার মধ্য থেকে ১জনকে ট্রাইব্যুনালের সামনে জবানবন্দি দেয়ার জন্য হাজির করে। সর্বশেষ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ৬ আগস্ট সর্বমোট নতুন ৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি দেয়। এর মধ্য থেকে মোট ৩ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করা হয়। এইভাবে প্রতিনিয়ত আইন বহির্ভূতভাবে নতুন সাক্ষী আনার মাধ্যমে তারা মামলার বিভিন্ন দুর্বলতা গুলো পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে।

৩রা জুলাই ২০১২ থেকে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন। জুলাই মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল সর্বমোট ৫জন প্রসিকিউশনের সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এবং নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত বাকি ৭জন সহ সর্বমোট ১২ জন প্রসিকিউশন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

আদালতের রায় আবেগতাড়িত, ন্যায়ভ্রষ্ট - ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক

Source

source 2

Source 3

বিষয়: বিবিধ

১২১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File