এক শহীদের বড় ভাই এর আত্মকথা
লিখেছেন লিখেছেন মাওহিবা তাকিয়া ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:২৭:৫৮ সকাল
''মাছুম বাচ্চা''
শহীদের স্মৃতি মনের গহীনে বারবার ভেসে উঠে...
আমরা পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনজন একদম পিঠেপিঠি ছিলাম (শহীদ মাসুদ,আমি, খালেদ বিন হাবিব), একসাথে পড়ার টেবিলে বসতাম,বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতাম। কিশোর কণ্ঠ, সাইমুম সিরিজ নিয়ে কাড়াকাড়ি করতাম সাথে সঙ্গী হত শহীদ মাসুদের সবচেয়ে ভাল বন্ধু আমার ছোট বোনটি।
ছোটবেলা যখন ঈদ এর সময় বা বিভিন্ন সময়ে শার্ট-প্যান্ট কিনতাম তখন আব্বা আমাদের তিনজনকে একই ডিজাইন এবং একই কালারের কিনে দিত, কখনো কখনো খালেদ ভাইয়ের কালার ভিন্ন থাকলেও আমার আর শহীদ মাসুদের কালার একই থাকত আর ডিজাইন তিনজনের একই থাকত। যখন দু/তিন সেট করে আব্বা প্যান্ট কিনে দিত বা বানিয়ে দিত তখন স্বভাবত আমি চিল্লাচিল্লি করে একসেট বেশি নিতাম অথচ সবার ছোট বলে একসেট বেশি পাবার অধিকার ছিল শহীদ মাসুদের। আমি বড় হওয়া সত্বেও দাবী করে একসেট বেশি নিলেও আশ্চর্যজনকভাবে ধৈর্য ধরে থাকত শহীদ মাসুদ। কখনো আব্বা কে বা আম্মাকে বলতনা যে উনাকে একটা বেশি দিলেন কেন? আমাকে বেশি দিলেন না কেন? কোন খেলনা ও বাড়িতে অন্য কিছু আনলেও আমি বেশি নিলেও ছোট হয়েও শহীদ মাসুদ কম পেয়ে আম্মাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতনা যে আমার বড় ভাইকে কেন একটা বেশি দিলেন? বড় হবার পর আমি একা ভেবে ভেবে আশ্চর্য হতাম শহীদ মাসুদের ছোটবেলার ধৈর্য ও সেক্রিফাইস দেখে। আমার বোধগম্য হতোনা কিভাবে সে ছোট হয়েও আমার চেয়ে কম পেয়েও সন্তুষ্ট থাকতো... ওর জায়গায় আমি হলে বাসায় কেয়ামত ঘটিয়ে দিতাম। আম্মা আব্বাকে বেশি জ্বালাতাম বলে আম্মা আমাকে রেগে মাঝে মাঝে ''আজরাইল'' বলে ডাকতেন।
সবার খুব পছন্দের ছিল শহীদ মাসুদ। আমার আব্বা আম্মা কখনো বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে ছোটবেলা কখনো কোন দুষ্টুমির জন্য শহীদ মাসুদের উপর হাত তুলেছেন। আম্মা কখনো রেগে যদি ওকে বকা দিত তখন শহীদ মাসুদ একা একা বাসার ছাদের কিনারায় গিয়ে কাঁদত, মাঝে মাঝে সে একা ছাদে কাঁদত আর আম্মা দেখে ডেকে আনত। খুবই নরম মানুষ ও সুন্দর বিহেভের জন্য শহীদ মাসুদ কে আম্মা মাঝে মাঝে মিষ্টি করে ডাকত ''আমার মাছুম বাচ্চা কই?"
শহীদেরা বুঝি এমনই হয়।
আল্লার কসম মিথ্যে বলছিনা। আমি ওর এক দেড় বছরের বড় হওয়া সত্বেও সে কোনদিন আমার সাথে বেয়াদবি তো দূরের কথা, আমার মুখের উপর কথাও বলেনি, প্রমিস।
শহীদ হবার পর বাড়িতে লাশ আনার পর বাড়িভর্তি মানুষ থাকার কারনে আমার আম্মা তার মাছুম বাচ্চা বা সবার ছোট ছেলের জন্য চিৎকার করে কাদতেও পারেন নি, তিনি ভালভাবে একনজর দেখতেও পারেন নি, শুধু আমার আম্মা তার ছোট ছেলের শরীরের ও মাথার গভীর ক্ষত বা কোপের জায়গাগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখেছিলেন ছাত্রলীগ তার প্রিয় ছেলেকে কত নির্মমভাবে শহীদ করেছে।
শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারেনা, কখনো বৃথা যায়না। শত শহীদের সংগঠন ''ইসলামী ছাত্রশিবির'' বাংলার মাটিতে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেই, কেউ এদের দমাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ, কেউ না...
মহান আল্লাহ আমার ছোট ভাইটিকে জানাতুল ফেরদৌসে ফুল ও পাখির সাথে খেলায় মাতিয়ে রাখুন, আমীন।
লিখেছেন মওদূদ ইবন হাবীব Click this link
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন