জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের জন্য ৩৮ অনুচ্ছেদ-ই যথেষ্ট...
লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৩৮:৩৪ বিকাল
[sb]মোমিন মেহেদী[/sb]
‘জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার নামে সরকারের টালবাহানা দেখা হয়েছে। চিৎকার করে বলতে চাই, আমরা তোদের ভোটের গুটি না। আরেক সরকারের আরো এক স্মারকলিপি প্রদাণের ঘোষণা শুনলাম। আলটিমেটাম শেষ হল আজকে আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পত্র নিয়ে-নিবেদন নিয়ে-কাকুতি মিনতি নিয়ে যাবেন ৪এপ্রিল, এইটা যদি হয় সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচী, আমরা মনে করি সেটা এই তরুণ প্রজন্মের স্পিরিটের প্রতি অপমান। শহীদ রুমী স্কোয়াড আজকের এই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচী শোনার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাত ১০টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচী শুরু করবে। আমরা ৭জন সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অনশনে যোগ দেয়ার। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিনা কালক্ষেপনে রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্দেশেই জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সম্ভব। এটা আইন বিশেষজ্ঞরা বহু আগে থেকেই বলে আসছেন। ৪২ বছরের ঋণ আজ শোধ করতে হবে। আমরা শহীদ রুমীর নামের শপথ নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। আমরা আমাদের জীবন বাজী রেখে আজ থেকে শুরু করলাম।’
বাস্তবতাটা আসলে এমন-ই। একদিকে জামায়াত-শিবিরের সাথে সন্ধির গন্ধ; অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধ। বাতাসে লাশের গন্ধ ভেসে আসতে আসতে এখন নতুন প্রজন্মের নাকে আসছে ষড়যন্ত্রের গন্ধও। যেখানে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিনা কালক্ষেপনে রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্দেশেই জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সম্ভব; সেখানে নতুন প্রজন্মকে দিনের পর দিন রাজপথে রেখে দেশের অর্থনীতি-শিক্ষানীতি আর রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে সরকার আসলে কি চাইছে? এমন প্রশ্ন এখন নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সচেতন সকলের মুখে মুখে। যদিও এখন নতুন করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ‘অর্ধশত ইসলামী সংগঠন গোয়েন্দা নজরদারিতে’। যেখানে মূল সমস্যা শিবির-জামায়াত; সেখানে সেই সমস্যাকে রেখে আবার নতুন করে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে অর্ধশত ইসলামী সংগঠন বলার কি প্রয়োজন। কি প্রয়োজন প্রতিনিয়ত এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের গতিবিধি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার?
কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন মূল সমস্যা শিবির-জামায়াতকে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিনা কালক্ষেপনে রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্দেশের মাধ্যমেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। সাথে সাথে ধর্মের নামে ব্যবসা করে আসা প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকসহ সকল শিবির-জামায়াতি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা। যেখানে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পর্যন্ত শিবিরের সহায়তা চায়; সেখানে আর বোঝার বাকি কোথায় যে, এরা হিংস্র হায়েনা রাজাকারদের চেয়েও ভয়ঙ্কর! এমতবস্থায় আমাদের রাজপথের আন্দোলন; নতুন প্রজন্মের আন্দোলন নিয়ে একটিই দাবী-জামায়াত-শিবিরসহ সকল ধর্মব্যাবসা বন্ধ করা হোক। সেই দাবীর কথা না ভেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ভিন্নধারায় এগিয়ে আসছে। তারা এখন বলছে জামায়াত-শিবিরের সাথে সাথে আরো প্রায় ৫০ টি সংগঠন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে মাঠে নেমেছে। কখনো তারা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একসঙ্গে আবার কখনো নেপথ্যে থেকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এসব সংগঠনের মধ্যে কয়েকটি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনও রয়েছে। সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরো বলা হচ্ছে যে, শুধু ইসলামী সংগঠন নয়, দেশে অরাজকতা ও নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে এমন সব সংগঠনের ওপরই গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এ ব্যাপারে গোয়েন্দারা সরকারকে অবহিত করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে যেসব ইসলামী সংগঠনের তৎপরতা ও জামায়াতের সঙ্গে সংম্পৃক্ততার ঘনিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হিযবুত তাহরীর এবং হিযবুত তাওহিদ। এসব নিষিদ্ধ ইসলামী সংগঠনের ব্যাপারে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই সজাগ ছিল। এছাড়া এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে র্যাবের বিশেষ শাখার বিশেষায়িত টিমের বিপুলসংখ্যক সদস্য। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে থাকা ইসলামী সংগঠনগুলো হলো- ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি, শাহাদাৎ-ই-হিকমা, হেফাজতে খতমে নবুওয়াত, হেফাজতে ইসলাম, বিশ্ব ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী সমাজ, ওলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনিয়াত, আল তানজিব, আল্লার দল, আল জিহাদ বাংলাদেশ, এহসার বাহিনী, তামির আ-দ্বীন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, আল মুজাহিদ, আঞ্জুমানে তালামিজা ইসলামিয়া, ইসলাম রক্ষা কমিটি, খতমে নবুওয়াত, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী দল, আহলে হাদিস তাবলিগ ইসলাম, ছাত্র জামাত, দাওয়াতে ইসলাম, হিযবা আবু ওমর, হিযবুল মাহাদী, হরকাতে ইসলাম আল জিহাদ, হায়াতুল ইগাছা, আল খেদমত, আমানাতুল ফোকান আল খাইরিয়া, আমিরাতে দ্বীন, জামাতে আহলে হাদিস, জামায়ে জামাতে ইসলামী সলিডারিটি ফ্রন্ট, জামায়াতুল আহিয়া উত-তুরাজ, ইসলামী জিহাদ গ্রুপ, ইসলামী লিবারেশন টাইগার অব বাংলাদেশ, হিযবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, জমিয়াতুল উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন এবং খেলাফত মজলিশ। এছাড়াও কয়েকটি ছোট ছোট সংগঠনও নজরদারির মধ্যে রয়েছে। এসব সংগঠন জামায়াতের লেজ হিসেবে কাজ করছে। এসব ইসলামী সংগঠন মূলত গড়ে তুলেছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এর মধ্যে কিছু সংগঠনের কার্যক্রম অনেক দিন ধরে চলে এলেও কিছু কিছু সংগঠন হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে '৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এদের সমমনা আরো প্রায় অর্ধশত ইসলামী সংগঠন হঠাৎ করেই তৎপর হয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গভীর পর্যবেক্ষণের পর দেখা গেছে, এসব সংগঠনের অর্থনৈতিক ভিত্তি মোটেই ভালো না। জামায়াতের টাকায় ও নির্দেশনায় তারা ব্যানার নিয়ে রাজপথে নামে, আন্দোলন করে। এরাই আবার অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটায়। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করতে ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছে জামায়াত। শিবির ক্যাডাররা নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে শক্তিশালী ক্যাডারবাহিনী গঠন করছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এরা দেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীতে এবং জেলা শহরগুলোতে বৃদ্ধি পাবে চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা।
এখন কথা হলো- যদি জামায়াত-শিবিরের অঙ্গ হয়েই এরা কাজ করে থাকে, তো আগে জামায়াত-শিবিরকেই নিষিদ্ধ করুন। তাতে করে গাছ না থাকলে ডাল-পালা আর কিভাবে থাকবে? তা না করে একের পর নতুন নতুন কৌশলের কথা বলে কালক্ষেপনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরকে শক্তি সঞ্চয় করার সময় কেন দিচ্ছেন? যদি আওয়ামী লীগ ভেবে থাকে আগামীতে জামায়াতকে গুটি হিসেবে ব্যাবহার করে ক্ষমতায় আসবে; তাহলে তা চরম ভুল হবে। কেনন, নতুন প্রজন্মের যে ৩৬ ভাগ ভোট রয়েছে; তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাদীদের বিচার বাস্তবায়ন ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার উপর। যদি আওয়মী লীগ একাজটি থেকে একটুও পেছনে যায়; তাহলে আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচন। যেখানে নৌকা থাকবে, ধানের শীষ থাকবে; কিন্তু ভোট থাকবে না। ভোট চলে যাবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক নতুন নেতৃত্বের কাছে। অতএব, বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে তৈরি হয়ে আজই মাঠে নামুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা না হলে আমরা আর অপেক্ষা করবো না। অনশন-গণঅনশন-অবরোধসহ অহিংস সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা দেখিয়ে দেবো যে, জীবনের কথা-ভবিষ্যতের কথা একাত্তরে যেমন কেউ ভাবেনি; এখনো নতুন প্রজন্মের যোদ্ধারা ভাবছে না- বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়ার কথা। তাদের ভাবনা একটাই- জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ চাই-যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই...
[sb]মোমিন মেহেদী: কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)[/sb]
বিষয়: বিবিধ
১৮৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন