একটি সাহসের নাম বাংলাদেশ...

লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১১:০৫:১১ সকাল

মোমিন মেহেদী

একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস,

একটি সাহসের নাম বাংলাদেশ। সেই দেশের রক্তরাঙা নয় মাস স্বাধীনতা এনেছিলো। কিন্তু এর বিনিময়ে আমাদেরকে ক্ষয় করতে হয়েছে এক সাগর রক্ত, ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম। আমরা আর কোন প্রাণ, আর কোন ইজ্জত তুলে দিতে তৈরি নই শত্রুর হাতে। আর এ কারনেই নতুন করে নামা নতুন প্রজন্মের যুদ্ধে কোন রক্ত ক্ষয় হবে না, কোন প্রাণ নিবেদিত হবে না; কেবল যা হবে, তা হলো- বিচার, বিচার এবং বিচার…

স্বাধীনতার এই মহান মাসে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-ই এখন একমাত্র চাওয়া। এই চাওয়া আর কোন শাহবাগে বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটকে নেই। এই চাওয়া ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই-সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে। আমাদের রক্ত নয়; সাহসের যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছে; তখন নতুন প্রজন্মের এক দফা এক দাবী- যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী। কেননা, একজন যুদ্ধাপরাধী কেবল একজন মানুষকে খুন করেনি; একজন নারীর সম্ভ্রমহানী করেনি। সে স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিলো; অতএব, বিচার একটাই ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি…

আজ যখন নতুন প্রজন্ম নতুন করে জেগে উঠেছে; তখন নতুন করে ঘুম পাড়ানো হচ্ছে কিছু তরুণকে। ধর্মের গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো সেই সকল তরুণদের কানে কানে নতুন দিনের গান পৌছে দিতে তৈরি আমি-আমার নতুনধারা বাংলাদেশ। সকল সময় আমরা তরুণরা জেগে উঠেছি সবার আগে। কেননা, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কবিতাটি কবি হেলাল হাফিজ যখন লিখেছিলেন, তখনও যেমন নতুনরা যুদ্ধে যেতে-যুদ্ধে মেতে থাকতো; এখনো আছে থাকবে। তবে আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধ আমাদের আইনি যুদ্ধ; এ যুদ্ধ আমাদের সাহসের যুদ্ধ। আমরা আর কোন একাত্তরে ফিরে যেতে চাই না। চাই না দেশে শত্রুরা আবার কেড়ে নিক লাখো মায়ের সন্তান। নতুন প্রজন্ম নতুনধারা’র যুদ্ধের কথা বলছে। যে যুদ্ধে পরাজিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সেই সকল যুদ্ধাপরাদী, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক গোষ্ঠি। কিন্তু ঝরবে না রক্ত; যাবে না প্রাণ। এজন্য নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে মহাজোট সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবো বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম জেগেছে। তারা যে দাবীতে তৈরি হয়ে আজ যুদ্ধে নেমেছে; সে যুদ্ধের একটাই সমাধান আর তা হলো- ফাঁসি। ফাঁসির রায়ের পর মাত্র ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আপিলসহ সকল আইনি জটিলতা শেষ করে ফাঁসি কার্যকর করুন। নতুবা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম প্রয়োজনে অনশনে নেমে যাবে। জীবনতো একটাই/ যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ চাই।

এই দাবী বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত তরুণদের মধ্য থেকে বেছে বেছে খুন করা হয়েছে পর পর ৭ বীর যোদ্ধাকে। যারা আন্দোলন করেছেন কলমে-আন্দোলন করেছেন ইন্টারনেটে-আন্দোলন করেছেন রাজপথে শ্লোগানে শ্লোগানে। বিশেষ করে ব্লগারবন্ধু রাজীবকে খুনের পর আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে চক্রান্ত চলছে আমাদেরকে আন্দোলন থেকে হটানোর জন্য। যে কারনে নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিজীবিদেরকে খুনের নেশায় মেতেছে যুদ্ধাপরাধী আর তাদের সমর্থকচক্র।

শুধু এখানেই থেমে থাকেনি; ঘাতকের প্রেতাত্মারা নারী জাগরণ সমাবেশ-এর যে আয়োজন হয়েছিলো প্রজন্ম চত্বরে; সেখানে নিক্ষেপ করেছিলো বোমা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নারী জাগরণী সমাবেশস্থলের কাছে বোমা হামলা মানেই নতুন প্রজন্মকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র। যেই কাজটির সাথে স্বয়ং সরকারের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলেও সন্দিহান আমি। একদিকে যুদ্ধাপরাধীচক্র অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার; দুপক্ষই চেয়েছে এই জাগরণকে নস্যাৎ করে দিতে। যখন একান্তই ব্যার্থ হয়েছে; তখন নামিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদেরকে। এরা চারপাশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই জাগরণকে; এই আন্দোলনকে। যে কারনে আমরা দেখেছি সাধারণ তরুণরা বিভ্রান্ত হয়েছে। আমি একজন ব্লগার হিসেবে; বাংলাদেশের প্রায় সবক’টি দৈনিকের একজন নিয়মিত লেখক হিসেবে বলবো- সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই আন্দোলনকে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদীত্য বসু, ছাত্রলীগ (ত-সা) সভাপতি হোসাইন আহমদ তফসিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘরানার নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উঠে, মঞ্চে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। আপনাদেরকে কোন প্রয়োজন নেই নতুন প্রজন্মের; ব্লগারদের এই আন্দোলনের মঞ্চে। আশা করি স্বাধীনতার এই মাসে স্বাধীনভাবে ব্লগারদেরকে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেবেন।

আমার ষ্পস্ট মনে আছে প্রথম আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলো ব্লগাররা। পরে যারা ব্লগের মানেই জানে না, এমন অনেকেই এসে সম্পৃক্ত হয়েছে এই আন্দোলনে; এই মঞ্চে। আর ঠিক তখন-ই রাজনৈতিক নেতাদেরকে দেখা যায় আস্তে আস্তে আসন গাড়তে। আমি মনে করি এই জায়গাটি থেকে রাজনৈতিক নেতাদেরকে সরে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের এই আন্দোলন-ব্লগারদের এই আন্দোলন আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এমনিতেই যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থকচক্র বিভিন্নভাবে জাল ফেলছে আমাদেরকে ধরার জন্য-মারার জন্য…

প্রায় প্রতিটি দিনই তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে শ্লোগান আর প্রতিবাদে মেতে ওঠে সর্বস্তরের তরুণ সমাজ। তারা গেয়ে ওঠে দ্রোহ আর প্রতিরোধের গান। মাথায় লাল-সবুজ পতাকা বেঁধে মুষ্টিবদ্ধ হাতে শ্লোগান দিতে দিতে সকলশ্রেণীর মানুষের উপস্থিতিও কাছে টানে নতুন প্রজন্মকে। সেই সহিংসতা বিরোধী একটি আন্দোলনে বোমা হামলা, সত্যি ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা কারো জানা নেই। যেখানে সবাই এসেছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো মানুষের কাজ নয়। যারা এ কাজ করেছে, তারা অমানুষ; গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধাচারী। এমন একটা পরিস্থিততে গণজাগরণ সংগঠকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দিচ্ছে; শঙ্কা দিচ্ছে ক্রমশ সাহসের সাথে লিখে চলা তরুণ প্রজন্মের ব্লগার- লেখক ও কলামিস্টদের নিরাপত্তা নিয়েও। তবুও এগিয়ে যেতেই হবে। বাংলা ভাষায় কথা বলবো বলে আমরা সাহসের সাথে হাঁটতে গিয়ে জীবন দিয়েছি; অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন করবো বলে যখন এগিয়ে চলছি; তখন নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হলেও এগিয়ে যাবো নিরন্তর। আর তাই আমি মনে করছি, এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি কর্মী প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীন। নিরাপত্তা বাহিনীর নাজুক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে যে কোনো মুহূর্তে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা তাদের ওপর সহিংস হামলা চালাতে পারে। ঘটাতে পারে বড় ধরনের অঘটন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই আন্দোলনকারীদের নেতৃস্থানীয় হাতেগোনা ৪-৫ জনকে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। বাকিরা নিজেদের মতো করে ‘সেফ সাইডে’ থাকছেন। তবে তারা ঝুঁকিমুক্ত নন; ঝুঁকিমুক্ত নই আমি।

স্বাধীনতার এ মহান মাসে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাস্তবায়ন নতুন প্রজন্মের দাবী। শুধু এখানেই শেষ নয়; আমরা আরো কঠোরভাবে বয়ে যাবো বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। গড়ে যাবো বিপ্লবের রাস্তা। সেই রাস্তায় আমাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ঠিক এভাবেই স্বাধীনতার চেতনা রবে বহমান ততদিন/ নতুন আলোয় আসবে সকাল যতদিন…

মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)

বিষয়: বিবিধ

১৩৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File