দেশের জন্য নিবেদিত তারুণ্য রুখে দেবে অন্যায়...
লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১৬:৪০ সকাল
মোমিন মেহেদী
সহিংসতার আঁধারে ঢেকেছে দেশ। চারপাশে হতাশা; সাহসহীন সময়। আমার ভাইয়ের রক্তে রেঙেছে রাজপথ।
তৈরি হয়েছে কষ্টের কালোহাত। যেই হাত কেড়ে নিয়েছে ৪ টি তাজা প্রাণ। এই হাতের প্রত্যক্ষ রুপ তথাকথিত সমমনা ইসলামী ১২ টি দল। এই দলগুলোর মধ্যে এমনও দল রয়েছে, যে দল জামায়াতের সাথে সরাসরি মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে অসংখ্যবার; এক দলের নেতাকর্মী, অন্যদলের নেতাকর্মীদেরকে দেখলেই বলে উঠতো-‘মওদুদী ফেৎনাবাজ যায়।’ এখন সেই মওদুদী ফেৎনাবাজ জামায়াতের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছে স্বয়ং চরমোনাইর পীর, মওলানা মহিউদ্দীনসহ শতাধিক পীর-মওলানা নামক তথাকথিত ইসলামী নেতা। যাদের এখন মূল টার্গেট ক্ষমতা; জনতা বা সততা নয়। যে কারনে নারায়াতে তাকবির বলে সাধারণ মানুষকে হত্যার যজ্ঞে নেমেছে ছাত্র শিবির-জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন- খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ১২ সংগঠন।
সংঘর্ষ গুলি বোমাবাজি টিয়ার গ্যাস সাধারণত আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য হলেও এবার ইসলামী দলগুলো মসজিদ-মাদ্রাসা রেখে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন রণত্রে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, ফেনী, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়াসহ শতাধিক গণজাগরণ মঞ্চকে করেছে নিজেদের মঞ্চ। শুধুু তাই নয়; ভাংচুর করেছে শতাধিক শহীদ মিনার। যে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে থাকার সূত্র। সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার ভাংচুরের মধ্য দিয়ে এরা আবার প্রমাণ করলো একাত্তরের সেই হায়েনারা এখনো বাস করে এই ১২ দলের মধ্যে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা সারাদেশে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সিলেট, ঝিনাইদহ ও গাইবান্ধায় এক মাদ্রাসা শিকসহ চারজন নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে। তথাকথিত এই ইসলামী এই দলগুলোর হামলায় হামলায় বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকসহ দেড় শতাধিক আহত হন। অথচ ইসলাম অর্থ শান্তি। শান্তির ধর্ম ইসলামে থেকে অনৈসলামিক এই সকল কর্মকান্ড যারা করেছে তাদেরকে কখনোই আল্লাহ ক্ষমা করবে না বলে দৃঢ় বিশ্বাস। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, হে রাসুল(সা.) আপনি বলুন, তোমাদের ধর্ম তোমাদের; আমাদের ধর্ম আমাদের(সুরা কাফিরুন)।
কেবলমাত্র ঢাকায় বায়তুল মোকাররম, পল্টন ও কাঁটাবন, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে তথাকথিত ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় বায়তুল মোকাররম থেকে জাতীয় প্রেসকাব, মৎস্যভবন, পান্থপথ, কাঁটাবন থেকে নীলতে পর্যন্ত এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। পুলিশ সহিংসকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে এবং শটগানের গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে। বিােভকারীরা পুলিশকে ল্য করে ইট-পাটকেল নিপে করে। তারা এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ করে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সংঘর্ষকালে পুলিশ ও শিবিরকর্মীদের গুলি এবং মারধরে ১০ সাংবাদিক ও পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে আধাঁরে : পৃষ্ঠা ২ কলাম ২ দুই পথচারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এসব স্থান থেকে পুলিশ প্রায় অর্ধশত বিােভকারীকে আটক করে। পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে নিহত বস্নগার রাজীব বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকে ইসলামবিরোধী বক্তব্য লিখেছে বলে কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশ করে। এতে ুব্ধ হয়ে জামায়াত-শিবিরসহ সমমনা ১২টি ইসলামী সংগঠন ও চরমোনাই পীরের সমর্থকরা শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর এলাকায় বিােভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কারণে বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, প্রেসকাব, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড় এলাকায় আগে থেকেই পুলিশ অবস্থান নেয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, পল্টন মোড়, কদম ফোয়ারা ও মৎস্য ভবনের সামনে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে মুসলিরা প্তি হয়ে ভেতর থেকে পুলিশকে ল্য করে ইট-পাটকেল নিপে শুরু করে। এ দৃশ্য ধারণ করার জন্য গেটের কাছাকাছি গেলে মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক আব্দুলাহ তুহিন ও এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান ইমরান তুহিনকে কয়েকজন মুসলি মারধর করে। এতে তারা গুরুতর আহত হন। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর পুলিশ হ্যান্ডমাইকে মুসলিদের বাইরে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানায়। কিন্তু পুলিশের এ আহ্বান না শুনে মুসলিরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে জঙ্গি মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বিােভকারীরা পুলিশের সামনে দিয়ে পল্টন মোড়ের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে প্রেসকাবের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তারা ওয়ার্কার্স পার্টির অফিসের সামনের রাস্তায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নির্মিত একটি তোরণ ভেঙে ফেলে। মিছিলকারীরা এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরো দুটি ব্যারিকেড ভেঙে জাতীয় প্রেসকাবের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পল্টন এলাকায়। পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা আরো বিুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে ল্য করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিপে করে। সংঘর্ষের মধ্যেই মিছিলকারীরা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালায়। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম এলাকার বিভিন্ন অলিগলি থেকেও জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশকে ল্য করে ইট-পাটকেল নিপে করতে থাকে। অগ্নিসংযোগ করে দুটি মোটরসাইকেলে। সংঘর্ষ বায়তুল মোকাররম থেকে জাতীয় প্রেসকাব এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। বিােভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ধাওয়া করে। বিােভকারীরাও পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া করে। এ সময় দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিপে। মিছিলকারীরা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুরানা পল্টন, তোপখানা রোড ও সেগুনবাগিচা এলাকার অলিগলিতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই সুযোগ বুঝে বের হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তখন এপিসি সাঁজোয়াযান নিয়ে সেগুনবাগিচা এলাকায় ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের এপিসি থেকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয় ল্য করে এক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। ফলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এলাকায় অবস্থানরত সাংবাদিকদের মধ্যেও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এদিক-সেদিক ছুটাছুটি শুরু করে। ইউনিটির ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে আসা সাংবাদিকরা আতঙ্কে খাবার ফেলে আত্মরার চেষ্টা চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। হিং¯্র এই হায়েনাদেরকে ধর্মের অধর্মময় কোন কাজ করতে দেয়ার সুযোগ আর দেয়া হবে বাংলাদেশ-মাটি ও মানুষের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকারক। অতএব, বাংলাদেশকে বাঁচাতে, ধর্ম বাঁচাতে তৈরি হতে হবে বাংলাদেশের-ই নতুন প্রজন্মকে। যাদেরকে কখনোই ভুল ইতিহাস, ভুল ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। যে কারনে দীর্ঘ এই লেখার সূচনা। আশা করি সকল অঙ্গনের সাহসী তরুণগণ-সচেতনতরুণগণ জেগে উঠবেন নতুনধারার আহবানে। আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা জামায়াত-শিবির ইসলামী দল নয়; প্রকৃত পরিবর্তনের প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা সাহসী মানুুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ চাই। এই মানুষদেরকে কখনোই যেন কেউ কালো সারির লোক হিসেবে আখ্যা দিতে না পারে। আসুন নতুন প্রজন্মের সবাই জেগে উঠি সচেতনতার সাথে; রুখে দেই ইসলামের নামে সন্ত্রাস; রাজনীতির নামে খুন-ধর্ষণ।
এক্ষেত্রে আমাদেরকে যা করতে হবে তা হলো- দেখতে হবে, বুঝতে হবে, তারপর যোগ দিতে হবে ভালোর সাথে-আলোর সাথে...
মোমিন মেহেদী, কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন