আওয়ামী লীগ আজও জামায়াতকে মহাজোটে চায় : নতুন প্রজন্ম চায় না

লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৮ মে, ২০১৩, ০৬:০৫:৪২ সকাল

মোমিন মেহেদী

‘একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করি। ক’দিন আগে এক পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলেন একজন কলামিস্ট ও রাজনীতিক। সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে যায় পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদকের সাথে। তিনি প্রথম দেখাতেই বললেন, কোথায় থেকে এসেছেন?

উত্তরে কলামিস্ট ব্যাক্তি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ বললে উপদেষ্টা সম্পাদক সাহেব বলেন, বসেন বসেন। কলামিস্ট ব্যাক্তিটি এতটাই বিনয়ী যে, উপদেষ্টা সম্পাদককে পিছু করে বসা হয় কি না, এজন্য বারবার সর্তক দৃষ্টি রাখছিলেন। কলামিস্ট কথা বলছিলেন পরে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় বিভাগের প্রধানের সাথে। এক পর্যায় হেফাজত নিয়ে প্রসঙ্গ উঠতেই উপদেষ্টা সম্পাদক বললেন, নাস্তিক প্রধানমন্ত্রীর দেশে আমরা সবাই-ই নাস্তিক। কলামিস্ট তখন উত্তরে বলেন, হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আস্তিক হতেতো আর কেউ মানা করবে না। আমরা সেই চেষ্টাটাই করতে চাই।’

এখন সেই চেষ্টার রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে জানতে পারলাম আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।’ [সূরাহ নিসাঃ আয়াত ১৩৮-১৪০]

এখন প্রশ্ন হলো কারা মুনাফেক? কারা কাফের? মুনাফেকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হলো-এরা দুই পক্ষের সাথেই সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় জনৈক ব্যাক্তির কথা। যে রাসুল(সা.) এর সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতো পাশাপাশি মুসলমানদের খবর বিরোধী শিবিরে পৌছে দিয়ে তাদের সাথেও আঁতাত রক্ষা করতো। অন্যদিকে কাফের হলো- যার মধ্যে নূণ্যতম বিশ্বাসও নেই যে আল্লাহ এক তার কোন শরীক নেই। বরং সে ইসলামকে অস্বীকারতো করেই ক্ষতিও করার চেষ্টারত থাকে সবসময়।

প্রথমে আসি মুনাফেক প্রসঙ্গে। যেখানে অবস্থান করছেন স্বয়ং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। অবস্থান করছে তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। তারা একদিকে জামায়াত ইসলামে সাথে নিতে চাইছে, রাজনীতি করতে চাইছে জামায়াতসহ সকল ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে। অন্যদিকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে তৈরি করছে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে। তার মানে এই নয় যে, আমি বলছি-জামায়াত ইসলামী দল। তারা ইসলামী দলতো নয়-ই বরং ইসলামের ক্ষতি করতে তৈরি থাকে সবসময়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচীর-ই ধারাবাহিকতায় কথা বলে ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর সাথে। কথার বিষয় ছিলো

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং গণজাগরণ মঞ্চ-এর বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন। হেফাজত প্রধান শফি সাহেব বর্তমান বন ও পবিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ফুপা হওয়ায় আন্দোলন তৈরি হতে থাকে চট্টগ্রামেই। মাঝে যা হয়; তা হলো- একটা শ্রেণী এসে আর্থিক অনুদান দিয়ে আন্দোলনের সাথে যোগ করে দেয় ‘নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি চাই’। ব্যাস কাজ হয়ে যায় আওয়ামী লীগ যা চেয়েছিলো, তাতো ভেস্তে যাই-ই; উপরুন্তু অনেকটা নিরপেক্ষ হয়ে যায় ‘নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি চাই’ দাবীতে। আওয়ামী লীগ যখন বুঝতে পারে, তারা হেফাজতকে ব্যবহার করতে পারবে না। ঠিক তখনই উপরে উঠিয়ে মই সরিয়ে নেয় তারা। সুযোগে সদ্ব্যবহার করতে তৈরি হয়ে যায় বিএনপি-জামায়াত এবং শিবির।

এরপরের ঘটনা নিশ্চয়ই আমাদের সবার জানা। সেই জানা ঘটনার মধ্যে অজানা অনেক কিছু থেকে যায় নেপথ্যে। তার একটা সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরছি- ‘হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফীর পক্ষে দেয়া এক বিবৃতিতে হরতাল প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বিৃতিতে বলা হয় বর্তমান কঠিন ও ভয়াবহ সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতির আংশকায় আরো জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য হরতাল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত ৫ তারিখ শান্তিপূর্ণ অবরোধ পরবর্তী সমাবেশ চলাকালীন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এর এটিএম বুথে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগসহ সড়কের অসংখ্য গাছ নিধন হেফাজতে ইসলামের কোন নেতাকর্মী দ্বারা সংঘটিত হয়নি এবং কোন নেতাকর্মী এর সাথে সম্পৃক্তও নয়। বরং হেফাজতের এই অহিংস কর্মসূচীকে কলুষিত করার জন্যে বিশেষ একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই ঘটনা ঘটিয়ে তার দায়ভার হেফাজতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে।

একটি চিহ্ণিত মহল পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মত জঘন্য নিন্দনীয় ও অমার্জনীয় অপরাধ নিজেরা ঘটিয়ে তার দায়ভার হেফাজতে ইসলামের উপর চাপানোর ঘৃণ্যতম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপপ্রচারকারীরা এতটুকুও ভাবল না যে, যারা আল্লাহ, রাসূল (সা.), পবিত্র কুরআনের অবমাননার বিরুদ্ধে এবং ইসলামের ইজ্জত রক্ষায় সর্বস্ব ত্যাগ করে প্রতিবাদ কর্মসূচী চালিয়ে আসছে, তাদের দ্বারা এমন জঘন্য কাজের কল্প নাটক জনগণ কখনো বিশ্বাস করবে না। হেফাজতে ইসলাম এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এহেন নেক্কারজনক ঘটনার সাথে যে বা যারাই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তির দাবী করছে। হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য পরিষ্কার যে, হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কোন ধরণের রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর সাথে হেফাজতে ইসলামের কোন সম্পর্ক ছিল না, বর্তমানেও নাই এবং ভবিষ্যতেও কোন ধরণের জোট বা সম্পর্ক করার বাসনাও নাই। তবে হরতাল প্রত্যাহার করা হলেও আগের অন্যান্য কর্মসূচি বহাল থাকছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঈমান-আক্বীদা রক্ষার চলমান আন্দোলনে যারা নির্দয়ভাবে শহীদ হয়েছেন, তাদের মাগফিরাতের জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেন এবং দেশের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করার জন্য আহ্বান জানান। আর যারা নজিরবিহীন জুলুম-অত্যাচারের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এবং সকল নেতাকর্মীদেরকে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্যে আহ্বান জানান। শাহ আহমদ শফী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহ, রাসূল, কোরআন ও ইসলামের অবমাননার বিরুদ্ধে এবং ইসলামী কৃষ্টিকালচারসহ সামাজিক অনুশাসন রক্ষায় আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব আমরা যথাসাধ্য পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন সকল জুলুম-অত্যাচারের বিচারের ভার আল্লাহর উপর সোপর্দ করলাম। তিনিই উত্তম ফায়সালাকারী। শাহ আহমদ শফী দেশব্যাপী বিভিন্ন মাদ্রাসায় হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাশাপাশি উলামায়ে কেরাম, মসজিদের ইমাম-খতীব, মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রসহ সকল তৌহিদী জনতাকে নির্বিঘেœ চলাচল ও কর্মতৎপরতায় সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আহ্বান জানান।’

এই আহবান থেকে যায় আহবান হিসেবেই। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বাবুনগরী, গৃহবন্দী হয়েছেন শফি সাহেব। সাথে সাথে শত শত নেতাকর্মী রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। এই যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সব কিছুই কিন্তু আওয়ামী লীগের কারনে। যদিও এখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হেফাজতে জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। জামায়াত শিবিরের ইন্ধনেই সেই রাতে হেফাজতকর্মীরা তান্ডব চালিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ না করে, তাদের উপরে পুলিশি হয়রানি তৈরি করে জামায়াত-শিবিরকেই ‘হিরো রাজনৈতিক দল’ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করছে। এটা শেখ হাসিনা, আশরাফুল ইসলাম বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জেনে বুঝে করছে কি না বোধগম্য হচ্ছে না আমার। তবে কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ক্রমশ সহিংসতার রাজনীতিতে তৈরি হয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলকে নয়; জামায়াত-শিবিরকেই মূল প্রতিপক্ষ মনে করছে। যে কারনে এই বর্তমান। এই ধূসর বাংলাদেশ। যদি তাই না হবে, তাহলে কেন এখনও টক অব দ্য কান্ট্রি হেফাজতে ইসলাম? কেন হেফাজতকে ঘিরে সরগরম রাজনীতির ময়দান?

এমবস্থায় আমার মনে হচ্ছে ছাত্রশিবির-জামায়াতকে নিষিদ্ধ করাটা যেহেতু আওয়ামী লীগের মূখ্য নয়; সেহেতু আগামীতে তাদের ভরাডুবি স্বাভাবিকভাবেই হবে। এখনও সময় আছে, ছাত্রশিবির-জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে ভুল শুধরে নিতে পারে আওয়ামী লীগ। তা না হলে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে স্বপ্নবিভোর থাকার অপরাধে বাংলাদেশের ৩৮ ভাগ ভোটের মালিক নতুন প্রজন্ম ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে বিএনপিকেতো অবশ্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও। অতএব, ‘হিরো’ নয়; পারলে ‘জিরো’ করার রাজনৈতিক চাল চেলে নিষিদ্ধ করুন জামায়াত, নিষিদ্ধ করুন শিবির...

মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)

বিষয়: বিবিধ

১৫৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File