এই সরকার সেই সরকার যেই দরকার...
লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:০৯:৫৮ সন্ধ্যা
মোমিন মেহেদী
সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আবারো ওয়ান ইলেভেন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাঁর এই কথাটি কেউ পাত্তা না দিলেও নতুন প্রজন্মের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, নতুনধারার রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ভাবছি গভীরভাবে।
কেননা, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে মূল আলোচ্য বিষয় আগামী সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না অন্তবর্তী সরকারের অধীন হবে এ নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলছে বিরোধ। বিরোধ এমন পর্যায়ে যে, দুই দলই ক্রমশ রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করছে। আর মাঝখানে নতুন প্রজন্ম তাদের আশা-আকাঙ্খাকে গলা টিপে হত্যা করার রাজনৈতিক অরাজকতা দেখছে। আমরা নতুন প্রজন্ম প্রত্যয়ের সাথে তৈরি হয়েছিলাম আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাথে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার চেতনা থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, গত চার বছর যাবৎ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ধোয়া তুললেও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার কোন উদ্যোগ আদৌ নেয়নি; নেয়নি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরও কোন সফল উদ্যেগ; বরং আওয়ামী লীগ বারবার চেয়েছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ইসলাম ও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক ছাত্র শিবিরের সাথে আঁতাত বা জোট করে আবারো ক্ষমতায় আসার রাস্তা পাক- পোক্ত করতে। যদি তাই না হবে, তাহলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হলো মাত্র দুৎবছরে আর ঝুলে গেলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার?
হাজারো প্রশ্নবোধক চিহ্ন উপহার দিতে পারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, আওয়ামী লীগকে এবং মহাজোটকে। কারন হিসেবে বলতে পারি তাদের রাজনৈতিক মোহের কথা। তারা মানুষের জন্য নয়; নিজেদের জন্য রাজনীতি করেন। তার প্রমাণ সাগর -রুনী, তার প্রমাণ আদম আলী, তার প্রমাণ ইলিয়াস, তার প্রমাণ চৌধুরী আলম, তার প্রমাণ রফিকুল ইসলাম মজুমদার আর সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক মৃত্যু বিশ্বজিৎ। প্রধানমন্ত্রী আপনি এরপরও কি বলবেন যে, আপনি-আপনার দল দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে? নিশ্চয়ই আপনি তা বললেও জনগন তা বিশ্বাস করবে না। বরং প্রত্যাখ্যান করবে বর্তমানে-আগামীতে।
আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের কথা বলে একজন যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হুসাইন মুহম্মদ এরশাদকে কারাগারে প্রেরণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার রাজনীতিতে তৈরি হয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। তারই সূত্র ধরে ১৯৯০ পরবর্তী চারবার দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে আর সরকার গঠনের পরই প্রতিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বিভিন্ন ইস্যুতে। ২০ বছরেও এর কোনো সঠিক সমাধান এবং কোনো প্রক্রিয়ায় মতা ছাড়ার পর কার অধীন কীভাবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজনীতির মুখ্য ইস্যু হলো তত্ত্বাবধায়ক না অন্তর্ব্তী সরকার। বিএনপি নির্দলীয় নিরপে সরকারের দাবিতে অনড় এবং মতাসীন আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থায় না ফেরার শক্ত অবস্থানে। নির্বাচনের এক বছর আগে বড় দুই দলের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে অনিশ্চিত নির্বাচন পদ্ধতি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে একটি নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও অন্য দুই বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর দুর্বার আন্দোলনের পরিপ্রেেিত তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করে। হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ ঘোষণা করলে ২০১১ সালের জুনে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির বিলোপ সাধন করে। উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন নির্বাচিত সরকার এবং বিরোধী দলের এমপির সমন্বয়ে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করা হবে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কে থাকবেন তাও স্পষ্ট করেছে মহাজোট সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন অন্তবতী সরকারের প্রধান। অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচন অবস্থান বরাবরের মতোই উল্টো পথে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন না হলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু সেটুকুই নয়, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচন তারা হতে দেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে ইতিমধ্যে বিএনপি কয়েকবার হরতাল করেছে, গণমিছিল, গণঅনশন এবং রোডমার্চ করেছে। আর সংকট কাটাতে দুই দলের মধ্যে সংলাপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। তবে সংলাপ বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই কোনো পরেই। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছালে সংলাপ অসম্ভব বলে মনে করছে মতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে শর্ত দিয়ে সংলাপ নয় বরং রাজপথের আন্দোলনের ওপরই গুরুত্বারোপ করছে বিরোধী দল বিএনপি। কখনো কখনো সংলাপ অনুষ্ঠানের কিছুটা আভাস দেখা দিলেও তা আবার মরীচিকার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে। কার অধীন ও কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন- গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি এখন অনিষ্পন্নই রয়ে গেছে। তবে কিছুটা ছাড় দিয়ে মাঝামাঝি কোনো বিকল্প প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমঝোতায় আসতে বড় দুই দলের নেতারাও এখন নমনীয় অবস্থানে। নানামুখী চাপে বড় দুই দলই সংলাপে আগ্রহ প্রকাশ করলেও কখন, কীভাবে এবং কে নেবে সংলাপের উদ্যোগ এ নিয়ে জনমনে সৃষ্ট প্রশ্নের এখনো সদুত্তর মেলেনি। নতুনভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ চলছে বিরোধী দলের সঙ্গে। তবে এ কথা সরাসরি নাকচ করে দেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। পরে একই কথা যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন তখন খালেদা জিয়া বলেছেন, সংলাপ হতে হবে প্রকাশ্যে। উভয় দলের মধ্যে সংলাপ নিয়ে এ ধরনের নানা গুঞ্জন চললেও মতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, দুটি দলই নীতিগতভাবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলে উভয়ের মতের সমন্বয় করা কঠিন হবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংলাপটি তখনই হতে পারে যখন নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত হবে। অন্যদিকে সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সরকারের কাছ থেকে সংলাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দাবি করছে বিরোধী দল। তবে সংলাপের পূর্বে নির্বাচন পদ্ধতির জটিলতা নিষ্পন্ন করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। আর এজন্য বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতারা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মতা হস্তান্তর করাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। আর বর্তমান সংবিধানের আলোকেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। এজন্য বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে সংবিধান সংশোধন কমিটির আহ্বানেও তারা আসেননি। এখনই সংসদে এসে তাদের দাবির পে কথা বলা উচিত। আর রাজপথে এ নিয়ে আন্দোলন করে সরকারকে মতা থেকে সরানো যাবে না।
আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। কীভাবে নির্বাচন হবে এটাই এখন বড় ইস্যু। এ নিয়ে আগেও দেশের মানুষ অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছে। একতরফা নির্বাচন হলে দেশে কী হবে এ নিয়ে দেশের মানুষ চিন্তিত। শেষ পর্যন্ত যে ধরনের সরকারের অধীনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেন প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা যিনি সেই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এমন হাজারও কথার ভিড়ে আমার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে যে, এরশাদের কথঠন সত্য হবে। তাছাড়া বাস্তবতা বলে- এ পর্যন্ত যতবারই বিরোধী আর দলীয় সরকারের রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে; ঠিক তখনই ক্ষমতায় এসেছে সেনা সরকার। যদিও এরশাদের শঙ্কা ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তবুও বাস্তবতা এমনই নির্মম হয়েছে বারবার। দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেেিত ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করে জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মন্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের কথা যদি সত্যি হয় তাহলেতো ভালোই। কিন্তু যদি তা না হয়ে সেনা বাহিনী-ই আসে তখন নতুন করে আবারো গণতন্ত্র ধুলিস্যাৎ হবে। অতএব, বাংলাদেশের সুন্দর আগামীর কথা ভেবে হলেও আমাদেরকে গড়তে হবে একটি রাজনৈতিক সহমর্মিতার দেশ-সহঅবস্থানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে।ও যেখানে আওয়ামী লীগ থাকবে, জাতীয় পার্টি থাকবে, বিএনপি থাকবে, গণফোরাম থাকবে, নতুনধারা বাংলাদেশ থাকবে, কমিউনিস্ট পার্টি থকবে, বিকল্পধারা বাংলাদেশ থাকবে; থাকবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের অন্যসকল সংগঠন; কেবলমাত্র থাকবে না যুদ্ধাপরাধীদেও মদদপুষ্ট জামায়াত ইসলাম ও ছাত্র শিবির। যাদের রাজনৈতিক অরাজকতার কারনে আমরা হারিয়েছি অসংখ্য মানুষকে। একাত্তরের মত আর কোন পরিস্থিতি তৈরি হোক তা আমাদেও কাম্য নয় বিধায় এখন সময়ের দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করন। যদি আওয়ামী লীগ এই দাবী পূরণ না করে। তাহলে সময়ের সাথে সাথে ইতিহাসের আস্তাকূরে নিক্ষিপ্ত হবে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়; আমাদেও কাম্য যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত-শিবির মুক্ত সুন্দর রাজনৈতিক মাঠ। সেখানে স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনীত হবে-হবে উন্নয়নের-শান্তির রাজনীতি। আর তার জন্য নিবেদিত হতে হবে সবাইকে। এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের-বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে শান্তির জন্য-সম্মৃদ্ধির জন্য। এদে করে আর যাই হোক কষ্ট করে হলেও আমরা একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য নিবেদিত একজন যোগ্য মানুষ পাবো, পাবো একঝাঁক কর্মী; যাদের দ্বারা গড়ে উঠবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের-রাজনৈতিক কর্মগুরু মওলানা ভাসানীর- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর- শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের-শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশে শান্তির পায়রা উড়বে-নির্মিত হবে শান্তজ জীবনের পরিবেশ-থাকবে দ্রব্য মূল্যের স্থিতিশীল বাজার আর সন্ত্রাসহীন শান্তজ জীবনের নিশ্চয়তা। বাঙালির এ্ চাওয়া পূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে নতুন প্রজন্ম-নতুনধারা। নতুন প্রজন্মকে কাছে রেখে এগিয়ে আসুন নতুন প্রজন্মের সকল সদস্য...
লেখক: মোমিন মেহেদী, কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন