:: আশা করি ইসি হার্ড নয়; ইজি হবে ::

লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ২৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৩২:১৮ সকাল

৩০ ডিসেম্বর ২০১২। আত্ম

প্রকাশ করেছিলো ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি সাহসী জনতার রাচনৈতিক দল ‘নতুনধারা বাংলাদেশ। আর তার পর দিন অর্থাৎ ৩১ডিসেম্বর ছিলো রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য ইসি থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের শেষ দিন।

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ শ্লোগানকে ধারণ করে এগিয়ে চলা নতুন ধারা বাংলাদেশ সময়কে সাথে করে এগিয়ে চলেছে নিরন্তর।

আর তাদের সেই চলার সূত্র ধরে ইতিমধ্যে ১৭টি জেলা ও প্রায় পনেরোটি উপজেলা কমিটি করেছে। কিন্তু কথা হলো, ইসির দেয়া নিবন্ধনের বর্তমানের শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে-দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনের ইশতেহার, লোগো ও পতাকার ছবি, কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যের পদবীসহ নামের তালিকা, দলের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট, ব্যাংকের নাম ও সর্বশেষ হিসাব, দলীয় তহবিলের উৎসের বিবরণ, নিবন্ধন আবেদন করার সংশ্লিষ্ট অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র, ফি বাবদ ট্রেজারি চালানের কপি প্রদান করতে হবে।

একইসঙ্গে আবশ্যিকভাবে আবেদনপত্রের সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের যে কোনো স্থানে সংসদীয় নির্বাচনে অন্তত একটি আসনে জয়ের সমর্থনে দলিলপত্র বা কোনো একটি সংসদ নির্বাচনে যে কোনো একটি আসনের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট প্রাপ্তির প্রত্যয়নপত্র বা দলের একটি সজ্জিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ন্যূনতম একশ উপজেলায় সক্রিয় কমিটি যার প্রত্যেকটিতে ন্যূনতম দু’ শ ভোটার সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকার সপক্ষে প্রামাণিক দলিলপত্র প্রদান করতে হবে।

আমার রাজনীতি, আমার লেখালেখি-গবেষণা থেকে কেন যেন মনে হচ্ছে যে, এই সকল কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়ায় নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে সাড়া পায়নি নির্বাচন কমিশন। যারাও বা আবেদন করেছে, তারা রয়েছে জনতার রাজনৈতিক কাঠামো থেকে অনেক দূরে। নাম ধরে ধরে যদি বলি, তাহলে বলা যায়, এই সকল আবেদনকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন রকম রাজনৈতিক অস্তিত্ব পাঠ পর্যায়ে নেই। শুধু এখানেই শেষ নয়; তারা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক একটি ইস্যুতেও কোন অনুষ্ঠান বা সভা- সেমিনার করেনি।

এই আবেদনকৃত সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ জালালী পার্টি, পিপলস্ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল), মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ জাতীয় দল (বিজেডি), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলন (বিজিএ), বাংলাদেশ জনতা দল, বাংলাদেশ প্রবাসী দল, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, আঞ্জুমানে আল ইসলা, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন (এমআরএ), জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস লীগ (পিপলস লীগ), পাবলিক পার্টি, বাংলাদেশ জনগণতান্ত্রিক দল, মাতৃভূমি দল (মাভূদ), বাংলাদেশ গণঅধিকার দল, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ গণশক্তি দল, বাংলাদেশ বামফ্রন্ট, জনতা মহাজোট বাংলাদেশ ও সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পার্টি (বাংলাদেশ)।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের জন্য যে শর্ত ছিলো তাও ছিলো অনেকটা শিথিল। যেমন- ন্যূনতম ১০ জেলা ও ৫০ উপজেলায় কমিটিসহ দলের অফিস দেখিয়ে নিবন্ধিত হয় ১৭টি দল। এগুলো হলো- এলডিপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও খেলাফত মজলিশ।

এর মধ্যে নবম সংসদ নির্বাচনে একটি আসন পাওয়ায় এলডিপি বর্তমানে প্রথম শ্রেণীভুক্ত দলের তালিকায় আছে। আর তারও আগে নাম মাত্র শর্ত পূরণ করে নিবন্ধত হয়েছিলো-আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট ও ফ্রিডম পার্টি।

তবে নিয়মিত তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১১ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। অতীতের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়ার সুবাদে নিবন্ধিত হয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।

এখন বাস্তবতা বড়ই কঠিন। নতুন সমাজ চাইলেই তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর মত অর্থনৈতিক শক্তি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য নতুন নতুন চাল চালবে না।

তবে বাংলাদেশ-বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে এগিয়ে যেতে চায় অনবদ্য। এই অনবদ্য পথচলাকে কন্টকাকির্ণ না করে ইসির ইজি শর্ত দিয়ে সুযোগ করে দিতে হবে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে। তা না হলে ব্যহত হবে তরুণ প্রজন্মের ব্যালটের সঠিক রায় দেয়ার বিষয়টি।

নতুন ধারা বাংলাদেশ-এর আহবায়ক হিসেবে বাংলাদেশের ১৭ টি জেলা যখন সাংগঠনিক সফরে গিয়েছি, তখন দেখেছি যে, জনতা সব ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা নতুন প্রজন্মকে, নতুনধারাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আর তাই তাদের বক্তব্য ছিলো- যদি ইসি সহজ শর্ত করে নিবন্ধন না দেয়; তাহলে প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রেই যাবে না। অতএব, ইসিকে ইজি হওয়ার জন্য নিবন্ধনের শর্তাবলী আগের মত করার জন্য আহবান থাকলো নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে, নতুনধারা বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে।

তাছাড়া বাস্তবতা হলো এই যে, কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়ায় নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে সাড়া পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও নির্বাচন কমিশন আশা করেছিল, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধনের আবেদনে নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর কাছ থেকে ভালো সাড়া পাবে। কিন্তু তাদের সে আশা এখন নিরাশায় পরিণত হয়েছে। নতুন দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই চারটি দল কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করে।

অনেক নতুন দল করতে আগ্রহীরা ইসির নিবন্ধন বিভাগে এসে খোঁজখবর নিয়ে গেলেও নিবন্ধনের আবেদন জানায়নি বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র। শর্ত পূরণ করতে সক্ষম নয় বলে তারা আবেদন জমা দিচ্ছে না বলেও একই সূত্র থেকে জানা যায়।

নিবন্ধনের শর্তগুলো কঠিন বলে উল্লেখ করে নতুনরা এ বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাছাড়া আমার মনে হয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট সরকারের প্রভাবে প্রভাবিত কমিশন ইচ্ছা করেই এতো বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। এসব বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে কমিশন নতুন দল আসতে দিতে চায় না। নতুন দলকে কমিশন ভয় পায়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিশন নতুন দল নিবন্ধন দেয়। তাড়াহুড়ো করে নিবন্ধন দেয়ায় সে সময় অনেক নাম সর্বস্ব দলও ইসির নিবন্ধন পেয়ে যায়।

বর্তমানে ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৮টি। হলেও অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। ইসি নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন পাওয়া ঠেকাতে নয়, আমার মনে হয়েছে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠেকাতে সরকারের উপদেশে নতুন নিবন্ধন পাওয়ার শর্তগুলো কঠিন করেছে। এমতবস্থায় আমার মনে হয় আসছে নির্বাচন সুষ্ট নয়; হবে প্রহসনের। যে কারনে নতুন দলগুলোর রাস্তা আটকে দিয়ে আগের সেই সাজানো ছকেই নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলবে ইসি। যদি তাই না হয়; তাহলে এই নিবন্ধনের মেয়াদ দেয়া উচিৎ জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এবং জেলা কমিটি ১০ টি ও উপজেলা কমিটি ৫০-এ ফিরে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তা না হলে, নতুন ধারা বাংলাদেশ নির্বাচনে যেতে না পারলে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।

আশা করি ইসি হার্ড নয়; ইজি হবে। সুন্দর-স্বচ্ছ নির্বাচন; সৎ-যোগ্য নেতা নির্বাচনসহ সকল রকম পজিটিভ চিন্তা থেকে। তা না হলে সারাদেশের সকল তরুণ(দলীয় ক্যাডার-খুনি-ধর্ষক-সন্ত্রাসী ব্যাতিত) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসছে নির্বাচনকে বয়কট করবে। তারা আর কোন দূর্নীতিবাজ হাসিনা বা খালেদার কালো ছায়ায় যেতে চায় না; চায় তরুণ আলোয় আলোকিত করতে দেশ-মাটি ও মানুষকে। অতএব, শর্ত শিথিল এবং ২০০৮ সালের নিবন্ধন ধারায় ফিরে গিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সারা দেশের ৫০ উপজেলা ও ১০ জেলায় কার্যকর কমিটি থাকার ভিত্তিতে নতুনধারা বাংলাদেশকে নিবন্ধন দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি…

[লেখক : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি)]

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File