পদ্মা সেতু তৈরি না হলেও সমাধান ৫০ কোটি
লিখেছেন লিখেছেন মোমিন মেহেদী ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৬:৫৪ রাত
মোমিন মেহেদী
পদ্মা সেতু তৈরি না হলেও তৈরি হয়েছে সারাদেশে বৈরি পরিবেশ। সরকার বিব্রত; বিব্রত বিশ্বব্যাংক এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ডাকসাইটে আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও দূর্নীতির বোঝা কাঁধে নিয়ে মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন আবুল হোসেন। এই সুযোগে মাঠ চাঙ্গা করেছে বিএনপি। যেহেতু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেহেতু দেখেছি, শুধুমাত্র পদ্মা সেতু ইস্যুতেই ঘুরে দাঢ়ানোর শেষ চেষ্টাটি করেছিলো বিএনপি। কিন্তু সরকার বা বিরোধী দল কেন পক্ষই সমাধানের রাস্তা খোঁজার জন্য নিবেদিত হননি। একবার আমার লেখায় আমি দাবী করেছিলাম- যেহেতু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন; সেহেতু তিনি ইচ্ছে করলেই পারেন দেশ ও মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ব্যবস্থা করতে পারেন। একই কথা বলেছি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বেলায়ও। যখন দেখলাম সেই লেখায় কাজ হলো না; তখন পরামর্শ দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখলাম- দু’নেত্রীর অর্থায়নে হোক পদ্মা সেতু। কিন্তু না, তাতেও কাজ হলো না। কেননা, এরা শুধু নিতেই জানে; দিতে জানে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকার গঠনের পর দুই নেত্রীর চেহারা বদলেছে; পোশাক বদলেছে কিন্তু দেশের চেহারা বলায়নি; বদলায়নি জনগনের চেহারাও। কারন, হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তাদের স্বার্থপরতা-সংকির্ণতা এবং অযোগ্যতা-অদক্ষতার কথা। আর তাই আমরা কেবল তাদেরকে দিয়েই গেছি; পাইনি কিছুই।
তবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে এগিয়ে আসছে নতুন প্রজন্ম-নতুনধারা। তাদের সেই সাহসময় আগমীকে কালো নয় আলোয় আলোয় আলোকিত করতে তৈরি রাস্তায় আমাদের পথচলা। সেই সূত্র ধরেই নতুন প্রজন্মের রায়ে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে অনুরোধ- পদ্মা সেতু তৈরিতো আর করতে পারছেন না; করবেনও না; অন্তত মাত্র ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করুন। বিশ্লেষন করে বললে বলা যায়, বরিশাল থেকে আরিচা হয়ে সড়ক পথে ঢাকার দূরত্ব ২৬৬ কিলোমিটার। মাওয়া হয়ে গেলে এই দূরত্ব নেমে আসে মাত্র ১৬৭ কিলোমিটারে। খুলনা বিভাগের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একইভাবে দূরত্বের ওঠা-নামা হয় আলোচ্য দুই রুটে। স্বাভাবিক নিয়মে এই ১৬৬ কিলোমিটার দূরত্ব পেরুতে সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা সময় লাগার কথা থাকলেও বিশাল পদ্মা এবং তা পেরুতে আরিচা ও মাওয়া পয়েন্টে থাকা ফেরির কারণে যানবাহনগুলোর সময় লেগে যায় প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। তাও যদি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকে। চর কিংবা কুয়াশায় আটকা পড়লে ঘাটে অথবা নদীর মাঝখানে বসে থাকতে হয় দিনের পর দিন। এ রকম ঘটনা বহু আছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাগামী মুমূর্ষু রোগী ফেরিঘাটে মারা গেছে পারাপারের অপেক্ষায়। আপনজনের মৃত্যু সংবাদ পেয়েও যথাসময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি অগণিত মানুষ। আর শীত মৌসুম এলে তো কথাই নেই। প্রায় প্রতি রাতেই কুয়াশার কারণে ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে ফেরি। এ রকম সময়ে রাজধানীতে যাওয়ার আর কোন উপায় থাকে না এই অঞ্চলের মানুষের। এসবের পাশাপাশি রয়েছে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার সমস্যা। পদ্মায় আটকে যাওয়া ভাগ্যের কারণে কুয়াকাটার মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র এবং মংলার মতো সম্ভাবনাময় সমুদ্র বন্দর থাকার পরও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পেছনে পড়ে আছে দক্ষিণ। চরম দুর্ভোগের এই বেড়াজাল থেকে বেরুতে বহু বছর ধরে বরিশাল এবং খুলনায় চলা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও বর্তমানে অনিশ্চিত তার ভবিষ্যৎ। কবে নাগাদ সেতুর নির্মাণ কাজ শুর“ হবে কিংবা আদৌ শুর“ হবে কিনা তা বলতে পারছে না কেউ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবে বিকল্প ভাবনা থেকেই ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রকল্পের আওতায় ছোট ছোট ৩টি সেতু আর মাত্র ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণ করা হলেই মাত্র ২০-২৫ মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যেতে পারবে মানুষ। সেক্ষেত্রে বরিশাল কিংবা খুলনা থেকে রাজধানীতে যেতে সময় লাগবে বর্তমানের ৮-১০ ঘণ্টার স্থলে মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।
যেই প্রকল্পের রাস্তা দেখিয়েছেন আমার রাজনৈতিক উৎসাহজন ও কলামলেখার দীক্ষাগুরু সাংবাদিক আকতার ফারুক শাহিন। তিনি তাঁর এক দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে লিখেছেন যে, ‘সরকারের একটু নজর আর মাত্র ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাল্টে যেতে পারে চির অবহেলিত বরিশাল এবং খুলনা বিভাগ তথা পুরো দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের ভাগ্য। মাওয়ায় পদ্মা পারাপারের ঝক্কি কমিয়ে বর্তমানের তুলনায় প্রায় ৪ ঘণ্টা কম সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে এ অঞ্চলের মানুষ। সেই সঙ্গে মাওয়া-কাওড়াকান্দি চ্যানেল চালু রাখতে বর্তমানে চলমান অবিরাম নদী ড্রেজিংসহ নানা খাতে ফি বছর অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ের হাত থেকেও বাঁচবে দেশ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চলমান জটিলতার মধ্যে এই সামান্য ব্যয় বহুলাংশে কমিয়ে দিতে পারবে দক্ষিণের মানুষের কষ্ট। পণ্য পরিবহনসহ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং সমুদ্র বন্দর মংলার সঙ্গেও যোগাযোগ হবে সহজতর।’
একটি শিক্ষিত ও সচেতন নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে আগামীর আহবানে। অতএব, বাংলাদেশের অতিতে যা ঘটেছে; তা ক্ষমা করলেও যেহেতু আগমীতে কোন অন্যায় তরুণ সমাজ ক্ষমা করবে না; সেহেতু যেভাবেই হোক, ভেবে চিন্তে সরকার-সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের প্রতি সর্নিবন্ধ অনুরোধ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করুন। দেশ গড়–ন। এমন উদাত্ত আহবান নতুন প্রজন্মকে কাছে রেখে করছি। মাত্র ৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের একটি নকশা সরকার-যোগাযোগমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের আমলাদের জন্য তুলে ধরা হলো- বর্তমানে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের গাড়িগুলো মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা পার হয় কাওড়াকান্দি থেকে। ফেরিতে ওঠা-নামা এবং নদী পার হতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা। কাওড়াকান্দি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান কাঁঠালবাড়ী ঘাটের। বর্তমানে এখানে রয়েছে শরীয়তপুর ফেরি পয়েন্ট। এই দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে গাড়িগুলোকে প্রথমে নিতে হবে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। সেখানে ঘাটের সামনে থাকা চর আর ঘাটের মধ্যে নদীর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩-৪ শত গজ। এখানে একটি সেতু এবং নদীর অপর পাড়ে থাকা চরের মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে ঘাট নিতে হবে মাওয়ার উল্টো দিকে পদ্মার তীরে। এক্ষেত্রে অবশ্য ওই চরের অভ্যন্তরে থাকা দুটি ছোট ছোট খালের ওপরও নির্মাণ করতে হবে সেতু। এসব খালের প্রস্থ ৩০-৪০ গজের বেশি নয়। এভাবে মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক এবং ছোট ছোট ৩টি সেতু নির্মাণ করে ফেরি পয়েন্টের বর্তমান ঘাট পদ্মার তীরে নেয়া হলে এরপর নদী পার হতে সময় লাগবে মাত্র ২০-২৫ মিনিট। এ রকম ক্ষেত্রে কুয়াশায় ফেরি পারাপার বন্ধ থাকলেও আলো ফুটলে খুব কম সময়ের মধ্যে গাড়িগুলো দ্রুত পারাপার হয়ে কেটে যাবে যানজট। এখনকার মতো দিনের পর দিন ঘাটে বসে থাকতে হবে না। তাছাড়া সবচেয়ে যে বিষয়টি সহজতর; তাহলো- ৩ থেকে ৪শ’ গজ দীর্ঘ একটি কংক্রিটের ব্রিজ করতে ৩০-৩৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়। অব্যবহƒত কোন স্টিল ব্রিজ পাওয়া গেলে এবং তা এখানে এনে বসানো হলে এই ব্যয় আরও কমে যাবে। এরপর চরের মধ্যে ৩০-৪০ গজ দীর্ঘ দুটি ছোট ব্রিজ আর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে সর্বো”চ ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সম্ভাব্যতা যাচাই আর আনুষঙ্গিক মিলিয়ে আরও যদি ৫ কোটি টাকা ব্যয়ও যোগ করা হয় তবুও এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫০ কোটি টাকার বেশি লাগবে না। আলোচ্য এলাকায় থাকা ৩টি এলাকা মাতবরের চর, কাওড়াকান্দি এবং চর জানাজাতের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উল্লিখিত সড়ক এবং সেতু নির্মাণ প্রশ্নে জমি অধিগ্রহণ এবং কাউকে কোন রকম ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দরকার পড়বে না। কারণ সেতু এবং সড়কের যে রুট ভাবা হচ্ছে তার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব জমি। এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন জমি নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে সরকার। পাশাপাশি পাল্টে যাবে কোটি মানুষের ভাগ্য; সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা।
আশার রঙধনু নিয়ে এগিয়ে গেলে অবশ্যই কেটে যাবে হতাশার কালোমেঘ। যদি সেই আশার গুড়ে বালি না দিয়ে সরকার এগিয়ে আসে; যদি নতুন প্রজমেন্মর সর্বকনিষ্ট একজন নতুন রাজনীতিক হিসেবে অবহেলা না করে আমার পূজনীয় নেতা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসেন তাহলে আশার আলো জ্বলে উঠবে বাংলাদেশের মানুষের মনে। আর এই আলো আগামী নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারে প্রত্যয়ী পথ। যাইহোক, যে বিষয়ে আলোচনা করছিলাম; সে বিষয়ে ফিরে যাই- এই প্রকল্পের পুরো বিষয়টি নিয়ে নিয়ে একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, প্রতি বছর মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি পরিচালনা এবং ফেরিগুলোর জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। পদ্মার তীরে ঘাট এলে বর্তমানের তুলনায় অনেক কম সময়ের মধ্যে নদী পার হতে পারবে ফেরিগুলো। সেক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যয় নেমে আসবে বর্তমানের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে। অপেক্ষাকৃত কম চলাচলের কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও কমবে। চ্যানেল চালু রাখতে প্রতিনিয়ত কাওড়াকান্দি পয়েন্ট থেকে পদ্মার মুখ পর্যন্ত ড্রেজিং করতে হয়। তারপরও প্রায়ই চরে আটকা পড়ে ফেরিগুলো। সরাসরি পদ্মার তীরে ঘাট এলে একদিকে যেমন ড্রেজিংয়ের ঝামেলা আর থাকবে না তেমনি ড্রেজিং খাতের কোটি কোটি টাকাও বেঁচে যাবে। সর্বোপরি ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে ফেরি পার হয়ে ঢাকা যেতে পারবে মানুষ।
প্রস্তাবনাটি বাস্তবতার দেখা পেলে শুধু কষ্টই লাঘব হবে না; মানুষের মনে নতুুন করে আশার সঞ্চারণ হবে বাংলাদেশ-এর স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য। পাশাপাশি স্বপ্নজ জীবনধারার মানুষের মঙ্গলের সূত্র ধরে নৌবন্দর মংলা থেকে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশী পণ্য পৌঁছবে ঢাকায়। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাও পাবে নতুন মাত্রা। যাতায়াত প্রশ্নে সাধিত হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পদ্মা সেতু নিয়ে চলমান জটিলতার মধ্যে মাত্র ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এমন কিছু করা গেলে তা অনেকাংশে সহায়ক হবে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তনে। আর এই পরিবর্তন-ই পরিবর্তন করতে পারে আওয়ামী লীগের আগামী-নতুন প্রজন্মের আগামী...
মোমিন মেহেদী: কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ
বিষয়: বিবিধ
২২০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন