অবক্ষয়

লিখেছেন লিখেছেন আলোক যাত্রী ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০০:২৯ বিকাল

সার্কাসের জন্য প্রশিক্ষন দেয়া প্রানীদের চাবুকের ভয় দেখিয়ে তৈরী করা হয় । সেই ভয়ে সেই প্রানিরা কিছুদিন পর খুব ভালমতই প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত হয়ে যায় । অদ্ভুত ব্যাপার হল তারা কখনই নিজের ইচ্ছায় প্রশিক্ষন নিতে চাইনি । বরং তাদের উপর জোর করে, তাদের ভয় দেখিয়ে সার্কাস শেখানো হয় । মানুষ অবাক হয়ে দেখে একটা পশু কিভাবে এতো সুন্দরভাবে কসরত করে । আসলে প্রানীটা তাই করে যা করলে তাকে আর চাবুকের ভয় দেখান হয় না । এই থিওরি যখন প্রানীর উপর প্রয়োগ না করে যখন মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয় তখনি হয় সমস্যা ।

বৃটিশ , পাকিস্তানিরা গায়ের জোর দিয়ে,ভয় আমাদেরকে তাদের সংস্কৃতি শেখাতে চেয়েছিল । তার জন্য তারা প্রচুর টাকা-পয়সা দিয়ে তাদের অনুগত কিছু দালালশ্রেনিও তৈরি করেছিল ।তাদের নিয়ে মানুষের উপর ভয়, আধিপত্য এবং আরো বিভিন্ন উপায়ে তাদের নিয়ম কানুন চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল । কিন্তু সেটা এর অঞ্চলের মানুষ কোনভাবেই মেনে নেয়নি ।মানুষ তো আর পশু নয় যে চাবুকের ভয় সোজা থাকবে । মানুষ তো চিন্তা করে ঠিক ভুল যাচাই করতে পারে ।এই চিন্তার জোরেই সেসব অপশক্তিকে তারা বিদায় করল । এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিমারা নতুনভাবে তাদের সংস্কৃতি মানুষের মাথায় ঢুকানোর চিন্তা করল – মানুষ তো চিন্তা করতে পারে , যদি আমরা চিন্তা করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেই তাহলেই তো এরা যেমনে নাচাই , তেমনেই নাচবে । ব্যস , এবার তাহলে ঢান্ডার বারি দিয়ে দিয়ে নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে , স্বকীয় চিন্তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে তাদের চিন্তার শেকল পরিয়ে ।

একটু সময় লাগলেও তারা কিন্তু সফল হয়েছে ।এখন মানুষের মুখে মুখে হিন্দি-ইংলিশ সিনেমার নাম । কথার প্রেক্ষিতে মুখে আসে সেখানকার সিরিয়াল-মুভির ডায়ালগ । নিজেদের উতসবে তাদের গায়ে থাকে পশ্চিমাদের নির্ধারিত মহামানব(!?) দের পোশাক । আগে টাকা দিয়েও এসকল মানুষকে কথা শোনানো যায়নি আর এখন মানুষ বিনা পয়সায় তাদের সংস্কৃতি ফেরি করে বেড়াচ্ছে । এবং উল্টো অর্থ সম্পদ(সিনেমার টিকেট, ডিসের লাইন, দামি জামাকাপড়,শ্যাম্পেইন) খরচ করে তাদের মত হওয়ার প্রানান্তর চেষ্টা মগ্ন সবাই । প্রথমে কচু খেলে গলা চুলকায় ,তারপর সেই চুলকানিতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায় । সেরকমভাবে এই নিয়মগুল গিলতে মানুষের সমস্যা হয়েছে তারপর , GO WITH THE FLOW !!!

আমাদের বন্ধুপ্রতিম পার্শ্ববর্তী দেশটার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারনে আমাদের দেশের মানুষ তাদের দেখানো বিনোদনে মত্ত থাকে । তাদের মিডিয়া গসিব , বস্তাপচা সিরিয়াল দেখে সেসব নিয়ে আলোচনা , জল্পনা কল্পনা ; এসব কিছুই দিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা আবর্তিত হতে থাকে । হোক না তাদের কাছে পর্নস্টারই সুপারস্টার , হোক না সেদেশে গ্যাং রেপড হয়ে মেয়েরা রাস্তায় মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকে ।

সিরিয়াল , সিনেমা ,আইপিএল এসব মাথায়ভর্তি থাকলে প্রতিবেশিরা যে বাশ মেরে যাচ্ছে সেটা নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় !! দেশ স্বাধীন হবার পর ও পাড়ের দাদারা কয়েকদিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কাবাধ চালু করেছিল । তারপর মনে হয় তাদের ঘড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । অত্যাধিক মিতব্যায়ি হবার কারনে তারা আর ঘড়িটা ঠিকই করে নি । আর তাই সেই অল্প কয়েকদিন আর শেষ হয়নি । কিন্তু নগর ভবনের ঘড়ি তো ঠিকই আছে । তবে উপরের মহলের এই ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা নেই ! তারা নাকি আবার টিপাইমুখ বাধ বানাবে । সেটা নিয়েও চলল অনেক প্রতিবাদ । সেটা নিয়েও কিছুদিন খবরের কাগজ , মিডিয়া –তে অনেক তোলপাড় ছিল । এখন সেটা নিয়ে আর কোন খবরই পাই না । কাগজের জায়গা নষ্ট হয় বলে হয়ত যখন বাধ নির্মান একেবারে সম্পন্ন হয়ে যাবে তখনই পেপারে আসবে !!!

আরে গতকালই তো ফেলানি দিবস গেল ! কই খবরের কাগজ,ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কিছুই তো দেখালাম না এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে !? এমন কতকিছু ইস্যু আসে যায় , আমরা প্রথমে অনেক লাফালাফি করি সেটা নিয়ে । কয়েকদিন গেলে আমরা আবার সেটা ভুলে যাই । যাদের কারনে আমাদের ক্ষতি সাধন হচ্ছে ঠিক তাদের দেখনো পথেই পা বাড়াই আমরা । তাদের সিনেমা,সিরিয়াল দেখে বিনোদিত হয়ে ভুলে যাই তাদের কারসাজি ।।ফেলানির মত হাজারো মানুষ মরে আমাদের প্রতিবেশি বন্ধুদের অতিশয় আতিথেয়তায় আর আমাদের জনৈক নেতা বলেন যে সীমান্ত হত্যা আগেও হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে এতে আমাদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই !! তবুও আমাদের টনক নড়ে না ।তাই সমস্যা থাকে সমস্যার জায়গায় ,সমাধান সমাধানের জায়গায় , আর চিন্তাশুন্য আমরাও থাকি আমাদের জায়গায় । পরিবর্তন হয়না কিছুই ।

চিন্তার পরিবর্তন আসলেই বড় পরিবর্তন । চিন্তার অবক্ষয় আসলেই সর্বগ্রাসি অবক্ষয় ।

সরাইখানা ০৮ জানুয়ারী,২০১২

বিষয়: বিবিধ

২৫৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File