পুরোনো আশায় আবার ...
লিখেছেন লিখেছেন আলোক যাত্রী ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৪:৪৮ সন্ধ্যা
অত্যাচারিরা এটা ভালমতই জানে যে , কোন আন্দোলনকে যদি স্তব্ধ করে দেয়া যায় তাহলে সেটা ফের শুরু করা প্রায় অনেক দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায় ।এক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গার সরকার বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে অত্যাচারী শাসকদের তুরুপের তাস হচ্ছে সশস্ত্র অভিযান । তাই মিশরের স্বৈরাচার সিসি গতবছর নিরস্ত্র জনগণের উপর গনহত্যা চালিয়েছিল এবং ভেবেছিল যে তার ক্ষমতার হুমকি হয় এমন কিছু আর হবে না । কিন্তু এক বছর হতে না হতেই যেন মিশরের সচেতন মানুষরা আবার জেগে উঠল । ২০১১ সালের আরব বসন্ত শুরু হবার পর থেকে মিশরের প্রতিবাদি জনতার রক্ত কম ঝরেনি । তবুও জালিমদের অপসারন করার জন্য তারা বার বার রাস্তায় নেমে এসে অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে ।
এই মিশরের মানুষগুলো যেন মুমিনদের প্রতিচ্ছবি – সবসময়েই তারা অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে , অত্যাচারীর সামনে সত্য উচ্চারন করেছে । মুমিনদের স্বভাবই তো হচ্ছে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো । এই হাল না ছাড়া মুমিনরা আবার প্রমান করলো তাদের মধ্যে ইসলাম আছে । তারা ইসলাম পরিচয় নিয়ে “লজ্জিত” নয় । তারা সেই গা বাচানো মুসলিমদের মতো নয় যারা অসংগতিগুলোকে তোয়াক্কা না করে ঝুকিমুক্ত ইসলামের কথা বলে অথবা বিপদ দেখে নিজের পরিচয়কে, নিজের মতবাদকে বিকিয়ে দিয়ে শয়তানের কুটচালের কাছে মাথানত করে । তারা আমাদেরকে বুরুজের ছেলেটার কথা ; নমরূদের সামনে দাঁড়ানো ইব্রাহীম আর ফিরাউনের সামনে দাঁড়ানো মুসার কথা মনে করিয়ে দেয় , আল্লাহ তাদের উপর শান্তি আর দয়া বর্ষন করুন । অনেকেই বলছে এটা একটা ফিতনা , এসব করে লাভ নেই – এমন কথা বলার কোন প্রশ্নই আসে না !!!
নিঃসন্দেহে একট আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন দিক হচ্ছে তার লক্ষ্য । অবশ্য লক্ষ্যটা সঠিক হোক কিংবা ভুল আন্দোলনের সাফল্য নির্ভর করে কিন্তু লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকলে । আমরা দেখেছি গত শতাব্দির মাঝ থেকেই এইসব শাসক বিভিন্ন চেহারায় এসে অত্যাচার করেছে । স্বৈরাচারেরা বছরের পর বছর একগুয়ে শাসন করে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে । পশ্চিমা অপশক্তির কাছে জনগণের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়েছে । বিশেষ করে ইসরাইলকে টিকিয়ে রাখার পরোক্ষ কারন কিন্তু এইসব শাসকেরাই – বাইরে বাইরে অনেক হম্বিতম্বি করে কিন্তু বাস্তবে এদের কোন সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেই মধ্যপ্রাচ্যের এই বিষফোঁড়াকে তোলার । তাই আন্দোলনের লক্ষ্য চুড়ান্ত সমাধান আনার মতো সমগ্রিক হওয়া খুবই জরুরী । আরব বসন্তের লক্ষ্য ছিল জালিম হটানো , জালিম হটেছে ঠিকই , কিন্তু নতুন চেহারায় পুরোনো জুলুম আবার ফিরে এসেছে । যেই ইসলামের পরিচয়কে সমুন্নত করার জন্য মিশরের মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে , সেই ইসলামই তো পারে ঝুলুমকে অবসান করতে । যেই রাষ্ট্রব্যাবস্থা অর্থপৃথিবীতে এসে দিয়েছিল সুক্ষাতিসুক্ষ ন্যায়বিচার , সমৃদ্ধি আর শান্তি সেই রাষ্ট্রব্যাবস্থা ছাড়া এই অবিচার থেকে মুক্তি মিলবে কি করে !!!???
যেই সুপার পাওয়ার একসময় মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছিল সেই খিলাফাহই পারে মুসলিমদের আবার শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে । মুসলিমদের সঠিক পরিচয়কে, তাদের পৃথিবীতে প্রেরন করার উদ্দেশ্য অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার প্রতিনিধি হওয়াকে সার্থক করতে । আমরা সবাই শ্রেষ্ঠ , আমাদেরকে আল্লাহ কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন । আমরা একে অপরকে নাসিহা করবো , নিজেদের ভুলক্রুটি এভাবেই শুধরে নিবো । এমন আন্দোলনকে সঠিক দিকে নিয়ে যেতে আমরা একে অপরকে সচেতন করব , এগিয়ে যাবো একসাথে । এই বিপ্লব ব্যার্থ হলে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার নতুন বিপ্লবের সূচনা করবো । আশাহত হবো না , কাউকে বাতিল বলে আলাদাও করে দেবো না । আমরাই তো তারা যাদের আল্লাহ তাঁর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরতে বলেছেন এবং বলেছেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে যেতে । আল্লাহ আরো বলেছেন -
"আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে [TMQ সূরা আল-ইমরান ৩:১৩৯]"
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১০৩৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিম জাতি সবসময়ই উঠে দাড়ায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন