উত্থান পতনের রাজনীতি : হাজারী থেকে মুরাদ জংএরা কি ভাবে মানুষের ভোট পায়!
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সিরাজ মোল্লাহ ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৩৪:৫১ সকাল
এক সময় রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে নিজ নিজ এলাকায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন জয়নাল হাজারী, আবু তাহের, শামিম ওসমান, আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, জালাল উদ্দিন তালুকদার, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র মতো নেতারা। এদের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছেন। তিনজন জীবিত থাকলেও তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে গেছে অনেক আগেই। একজন এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও পরিবারের সদস্যরা বছরের পর বছর কারাগারে থাকায় অস্বস্তিকর জীবন যাপন করছেন। এদের তালিকায় উঠে এসেছে তৌহিদ জং মুরাদের নাম।
সাভার আশুলিয়ায় অপ্রতিরোধ্য এই তৌহিদ জং মুরাদ। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা তার কথায় উঠেবসে। চাঁদাবাজী, জমি দখল, ঝুট ব্যবসাসহ সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন এলাকায় তিনি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন। বাহিনীর প্রধানরা নিজ নিজ এলাকায় পরিচিত এমপির খলিফা হিসেবে। সোহেল রানা তেমনি মুরাদ জং-এর একজন খলিফা মাত্র। তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এখন যেমন সাভারে একচ্ছত্র অধিপতি; তেমনি ফেনিতে জয়নাল হাজারী, লক্ষ¥ীপুরে আবু তাহের, নারায়ণগঞ্জে শামিম ওসমান, বরিশালে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, নেত্রকোনায় জালাল উদ্দিন তালুকদার, গফরগাঁয়ে আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ ছিলেন নিজ নিজ এলাকার অধিপতি। সরকারের ভিতরে তারা মিনি সরকার গঠন করেছিলেন। প্রচলিত আইনের বদলে চালু করেছিলেন নিজস্ব আইন। তাদের আইনের চাকায় পিষ্ট হয়েছে অসংখ্য মানুষ। রাজনীতির ছত্রছায়ায় গড়ে তোলা বাহিনী দিয়ে তারা মানুষের উপর যে ভয়ঙ্কর ভাবে হাজির হতেন তা দেশি বিদেশী মিডিয়ায় অনায়াসে জায়গা করে নিতেন। এক সময় ফেনিকে মৃত্যুর উপত্যকা বলা হতো। জয়নাল হাজারীর তা-বে কত মানুষের যে প্রাণ হারিয়েছে তার হিসেব নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের ’৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলে ফেনির প্রায় ২০ হাজার মানুষ ৫ বছর এলাকা ছাড়া ছিল। জীবন বাঁবানোর জন্য বিদেশে ছিল অসংখ্য মানুষ। প্রাণ হানানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ববরণ করেছে অসংখ্য মানুষ। সব শেষে একটি এলাকায় ব্যাপক ধ্বসযজ্ঞ চালিয়ে ভারতে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। দীর্ঘদিন ভারতের আগরতলা ও কোলকাতায় পালিয়ে থাকার পর তিনি দেশে ফিরে এসে ঢাকায় পত্রিকা বের করছেন। থাকেন ধানম-ির ফ্লাট বাসায়। সন্ত্রাসের বরপুত্রখ্যাত জয়নাল হাজারীর জায়গা এখন আওয়ামী লীগে নেই। যদিও তিনি আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় দেন। জয়নাল হাজারীর সস্ত্রাসী কর্মকা- ও তা-বলীলার কথা মনে করে ফেনির একজন রাজনৈতিক কর্মী বলেন, ভয়ঙ্কর হাজারী ভাইস্যা এখন লেজকাটা শেয়ালের মতো দিন যাপন করছেন। লক্ষ¥ীপুর শহরকে বলা হতো আ-ারগ্রাউ- টর্চার সেলের শহর। আবু তাহেরের টর্চার সেলে নিহত হন বিএনপির নেতা এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম। ২০০০ সালের এ ঘটনা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল। তার তিন পুত্রের হাতে কত মানুষ যে নিগৃহীত হয়েছেন তার হিসেব নেই। অপ্রতিরোধ্য অনেকের ভাষায় দানবীয় আচরণের আবু তাহের দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। তার ছেলেরা কারাগারে ছিলেন এবং আছেন। তার এক ছেলেকে প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেয়ায় দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। যদিও দীর্ঘদিন কারাভোগের পর রাজনীতির লাইম লাইটে এসে আবু তাহের লক্ষ¥ীপুর পৌরসভার মেয়র হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের শামিম ওসমানের নিজস্ব আইনের ভয়াবহতার ভয়ঙ্কর কাহিনী এখনো মানুষের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সারাহ বেগম কবরী, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভির সম্প্রতি কথাবার্তার তার প্রমাণ মেলে। শামিম ওসমানের ‘জমানায়’ নারায়ণগঞ্জের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজ জন্মভিটায় থাকতে পারেননি। এমনকি জীবনের ভয়ে ঢাকায় অনেকেই পালিয়ে থাকতে পারেননি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে থাকতে হয়েছে ৫ বছর। শামিমের ‘মানুষ নির্যাতনের’ সে সময়ের টর্চার সেলের কাহিনী পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি কয়েক মাস আগে ত্বকি হত্যাকা-ের পর ওসমান পরিবারের ‘তিনটি গোপন আস্তানার’ খবর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ করেছেন। সেগুলো শামিম ওসমানের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর হিসেবে পরিচিত শামিম ওসমান ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের দিন বেনাপোল দিয়ে পালিয়ে ভারত যান। দীর্ঘ ৭ বছর বিদেশে পালিয়ে থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। সম্প্রতি তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত ত্বকী হত্যা মামলা হওয়ায় কয়েকদিন সরকারের ছত্রছায়ায় হম্বিতম্বি করে গোপনে সপরিবারে আবার বিদেশ পালিয়েছে। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর কথা সবার জানা। তার তিন পুত্রের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ব্যবসায়ীর মেয়ে অপহরণ, কলাবাগানের বাড়ি দখলের খবর মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থাকলেও সাংগঠনিক পদ থেকে ছিটকে পড়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, নেত্রকোনার পঙ্গু জালাল উদ্দিন তালুকদার মারা গেছেন। জালাল হত্যা মামলা এখনো চলছে। তাদের কর্মকা- স্মরণ হলে এখনো এলাকার মানুষের মুখ শুকিয়ে যায়। স্থানীয় জনতাকে লক্ষ্য করে গফরগাঁওয়ের সরকার দলীয় এমপি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) গিয়াস উদ্দিন আহমেদের গুলি করার দৃশ্যের ভয় দেখিয়ে সে এলাকার মা-দাদিরা এখনো বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায়। ভোলার এমপি নুরন্নবী শাওনের বন্দুকের গুলিতে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যা, কামাল মজুমদারের পুত্র জুয়েল, এবং মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়ার পুত্র দীপু চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরীর পুত্রের ভয়ঙ্কর কর্মকা-ের সঙ্গে মানুষ মিডিয়ার বদৌলতে পরিচিত। যশোরের সরকার দলীয় এমপি আফিল উদ্দিনের হাতে থানার ওসি নাজেহাল এবং রাজশাহীতে আন্তঃনগর ট্রেন সিল্ক সিটির লোকোমাষ্টার ওবায়দুল হককে মেরাজউদ্দিন মোল্লার পেটানোর ঘটনা সবাই জানেন মিডিয়ার কারণেই। এতো ঘটনায় রাজধানীর অদূরে সাভারের তৌহিদ জং মুরাদের কর্মকা- এতোদিন পর্দার আড়ালেই ছিল। একটি বিল্ডিং ধসের ঘটনার পর হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা গডফাদার তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের নাম। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসী তার ‘ভয়ঙ্কর’ কর্মকা-ের কথা জানলেও সাভারের মানুষের কাছে তার এ পরিচিতি অনেক আগ থেকে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ফেনির জয়নাল হাজারী, লক্ষ¥ীপুরের আবু তাহের, নারায়ণগঞ্জের শামিম ওসমান, গফরগাঁওয়ের মরহুম আলতাফ গোলন্দাজ, নেত্রকোনার মরহুম জালাল উদ্দিন তালুকদার, বরিশালের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ কে বেশি ভয়ঙ্কর? এ প্রশ্ন এখন অনেকেই করতে শুরু করেছেন।
সাভারে বিল্ডিং ধসের উদ্ধার তৎপরতার দ্বিতীয় দিন উদ্ধার পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন সরাসরি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১৯ আসনের এমপি তালুকদার তৌহিদ মুরাদ জং যে ভাষায় নিজেকে তুলে ধরে বক্তৃতা করেন সেটাকে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শামিম ওসমানের বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করা চলে। ত্বকী হত্যার পর সাবেক এমপি শামিম ওসমান নায়ায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভিকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে এভাবে সোনার ছেলে হিসেবে তুলে ধরেন। সাভার ট্র্যাজেডির মূল হোতা যুবলীগ নেতা সোহেল রানা গ্রেফতারের পর তার গডফাদার ঢাকা-১৯ আসনের এমপি তৌহিদ জং মুরাদ গ্রেফতার করার দাবি উঠেছে। ভুক্তভোগী গার্মেন্টস শ্রমিকরা মুরাদ জংয়ের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মিছিল করছেন। একই সঙ্গে তার সন্ত্রাসী কর্মকা-, চাঁদাবাজি, মাস্তানি সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, গার্মেন্টস জোন আশুলিয়া সাভারের প্রায় প্রতিটি গার্মেন্টস থেকে মাসে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেন এমপি তৌহিদ জং মুরাদ। কখনও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের নামে, কখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে এসব টাকা তার চাই-ই। শিল্প জোনে চাঁদাবাজি, ঝুটব্যবসা, টেন্ডার, কাবিখা, টিআর সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে। সরকারি প্রশাসন যন্ত্র তারই আদেশ নির্দেশে পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। কার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে এবং কার মামলা তুলে নিতে হবে সেগুলো তিনিই ঠিক করে দেন। সব সময় সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলেন। পুরো এলাকার গডফাদার হিসেবে পরিচিত এই তৌহিদ জং মুরাদ। গত বুধবার সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডে মুরাদ জংয়ের এক সময়কার বডিগার্ড ও তার ক্যাডার সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা প্লাজা নামে নবম তলা ভবন ধসের পর এর মালিক সোহেল রানাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এমপি তৌহিদ জং মুরাদ। অতি গোপনে তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। ভারতে পালানোর সময় বেনাপোল থেকে র্যাব-পুলিশের জালে ধরা পড়েন। দাবি উঠেছে রানার গডফাদার মুরাদ জংকে গ্রেফতারের। সাভারের সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসব সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সাভার উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পাথালিয়া, কাউন্দিয়া, ধামসোনা, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, ইয়ারপুর, তেতুলঝোড়া, আমিনবাজার, বনগাঁও, শিমুলিয়া, ভাকুর্তা ও সাভার এলাকা নিয়ন্ত্রণে মুরাদ জং গড়ে তুলেছেন বিরাট নেটওয়ার্ক পৃথক পৃথক বাহিনী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে তারা এলাকাভিত্তিক খলিফা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত, হাউজিং কোম্পানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাঁদাবাজি, মাদকের আখড়া ও ঝুট ব্যবসা তাদের আয়ের বিশাল উৎস। মুরাদ জং-এর খলিফারা এক একটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ বাসিন্দাদের মতে, শিল্পায়নের কারণে আশুলিয়া সাভারের এক একটি জমি সোনার খনি। প্রতিদিনই দাম বাড়ে সেখানকার জমির। জমি দখল, পাল্টা দখল সাভারের বিশাল ব্যবসা। মুরাদ জং-এর খলিফারা এসব নিয়ন্ত্রণ করে। সাভারের হাউজিং কোম্পানি ও ইটভাটাগুলো মুরাদ জংয়ের চাঁদাবাজির আরেকটি ক্ষেত্র। খবরে প্রকাশ সাভারের একটি হাউজিং কোম্পানির মালিক জানান, মুরাদ জংয়ের ক্যাডাররা তাদের কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ পরিমাণ টাকা না দেয়ায় তাদের প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাভারে যারা জমি কেনেন তাদের অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া ব্যবসায়ী। তাদেরকে হয়রানির মধ্যে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াই মুরাদ জংয়ের অন্যতম ব্যবসা। চাঁদাবাজি, ঝুটব্যবসা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে পাওয়া অর্থ মুরাদ জং বিদেশে পাচার করেন। রানা প্লাজা ধসের পর সাভারের মুকুটবিহীন সম্রাট খ্যাত মুরাদ জংয়ের বিচার দাবি জোরদার হচ্ছে। কিন্তু এমপি মুরাদ জং এখনও আছেন বহাল তবিয়তে। চালিয়ে যাচ্ছেন তার চাঁদাবাজি মাস্তানির বিশাল সাম্রাজ্য। সোহেল রানার গ্রেফতারের পর তার সঙ্গে সম্পর্ক ও এলাকায় চাঁদাবাজি মাস্তানি সম্পর্কে মুরাদ জং সাংবাদিকদের বলেন, রানার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল দলীয় কর্মী হিসেবে। ভবন ধসের দিন ফোন করায় তিনি রানাসহ আরও কয়েকজনকে উদ্ধার করেন। রানাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেননি। রানা নিজেই আত্মগোপন করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সন্ত্রাসী ও দখলবাজ সোহেল রানাকে পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক করেন মুরাদ জং। ভবন ধসের পর সোহেল রানাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। কিন্তু মুরাদ জং চেষ্টা করেন তাকে আশ্রয় দিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে। কয়েক দিন তাকে রাখা হয় গোপন স্থানে। আর সাভার আশুলিয়া জুড়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ঈদসহ সব ধরনের উৎসবে সাভার থানা যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেল রানা যেসব পোস্টার ছাপিয়ে টানিয়েছেন, সবক’টিতেই মুরাদ জংয়ের ছবি বড় করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের পোস্টার এখনও সাভারে রয়েছে। তবে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর মুরাদ জংয়ের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী অনেক পোস্টার তুলে ফেলেছে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, রানা কোনো রাজনীতিবিদ নয়। সশস্ত্র ক্যাডার। সে এমপি মুরাদ জংয়ের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করত। সব সময় মুরাদ জংয়ের সঙ্গে থাকত রানা। মুরাদ জং টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ বিক্রি করেন। রানার কাছেও পদ বিক্রি করেছেন। মুরাদ জংয়ের প্রশ্রয়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের জয়ম-প গ্রামের তেল বিক্রেতা আবদুল খালেক ওরফে কলু খালেক এখন সাভারের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন। সাভার আশুলিয়ায় রানা স্থানীয় এমপি মুরাদের খলিফাদের একজন। এছাড়াও সাভার আশুলিয়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি নিয়ন্ত্রণ করার অসংখ্য মুরাদ খলিফা রয়েছে। সাভারে বিল্ডিং ধসের পর রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা যুবলীগের সহসভাপতি হিসেবে মিডিয়ায় পরিচয় করে দেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তৌহিদ জং মুরাদও তাকে (সোহেল রানা) যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় করে তাকে উদ্ধারের কথা বলেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন যুবলীগের সঙ্গে সোহেল রানার সম্পৃক্ততা নেই। মজার ব্যাপার হলো সোহেল রানা গ্রেফতারের পর গতকাল সাভার যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে তৌহিদ জং মুরাদের অবস্থা জয়নাল হাজারী, শামিম ওসমানদের মতো হবে না আবু তাহেরের মতো হবে। এ জন্য অবশ্য অপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
সুত্র: ইনকিলাব
বিষয়: বিবিধ
২৪৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন