পীর মাশায়েখ কিংবা বড় হুজুরদের দরবারে কোথায় আজ এমন সরলতা!

লিখেছেন লিখেছেন কথা সত্য ০৯ মার্চ, ২০১৩, ০৫:০৫:০১ বিকাল

সাহাবায়ে কেরাম এই মাত্র কোন এক জিহাদ থেকে ফিরে এসেছেন। তারা মসজিদে নববীতে রাসূলকে ঘিরে বসে আছেন। সবার গায়ে তখনও লোহার বর্ম, মাথায় শিরস্ত্রাণ। তাদের এমন রণমূর্তি দেখে যে কেউ ভয় পেতে পারে। এমন সময়ে মদীনায় এলেন আদি বিন হাতেম। তিনি এসেছেন মদীনার পরিবেশ দেখতে, নবী মুহাম্মাদ এবং সাহাবাদের হাবভাব বোঝার জন্য এসেছেন। চারিদিকে যাদেরকে নিয়ে এত আলোচনা- তারা কেমন? কি করছে তারা মদীনায়- এসব কৌতুহল নিয়ে এসেছেন আদি বিন হাতিম।

মসজিদে ঢুকে রাসূলকে ঘিরে বসে থাকা সাহাবাদের এমন পোষাক আর ভাব দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। ব্যাপার কী? এরা কি সত্যিই ভয়ঙ্কর! সবসময় বর্ম গায়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকে! তার ভেতর ভয় ভয় করছে। এদের নবীর সাথে কি একটু সাধারণ ভাবে কথা বলা যাবে! মনে হয় না। মসজিদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলেন তিনি।

রাসূল বসে আছেন। তার চারপাশ ঘিরে সাহাবারা। প্রিয়তম মানুষটির সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহুর্ত তাদের কাছে পরম আনন্দের। তিনি যে এ পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ।

মসজিদের দরজা দিয়ে একজন মহিলা প্রবেশ করলেন। পোষাক দেখে বোঝা যাচ্ছে, তিনি একজন দাসী। দারিদ্র আর অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে তার ভাব-ভঙ্গিমায়। তিনি এসে সরাসরি রাসূলকে সম্বোধন করলেন। সাহাবারা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকলেন তার দিকে! এই দাসী বাঁদীর এত সাহস! ও চায় কী!

‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমার একটু ব্যক্তিগত আলাপ আছে! গোপনে বলতে চাই! একটু কি আসবেন আমার সাথে!!’ একজন সাধারণ গরীব দাসীর এমন আব্দার! তাও রাসূলকে সরাসরি!! সাহাবারা তো বটেই, দূর থেকে আদি বিন হাতিমও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। এ বেটির তো সাহস কম না! রাসূলকে ডাকছে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় গোপনে বলার জন্য!!

কেবল রাসূল সা. একটুও অবাক হলেন না। তিনি ঐ দাসীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে! কোথায় দাঁড়িয়ে বলবে? দেখোতো আশেপাশে নিরিবিলি কোন জায়গা পাও কিনা, যেখানে তোমার সুবিধা হবে!!

রাসূল উঠে দাঁড়ালেন। ঐ মহিলাটির সাথে একটু সামনে গেলেন। তারপর নিরিবিলি নিরালায় তার সব কথা শুনলেন। দূর থেকে তাকিয়ে আছেন সাহাবায়ে কেরাম, তাদের সাথে আদি বিন হাতেমও এ দৃশ্য দেখছেন, দু চোখে তার অবাক বিস্ময়!

খুব সাধারণ ভাবেই রাসূল সা. ঐ অসহায় দাসী মহিলাটির সব কথা শুনলেন। তার জানতে চাওয়ার উত্তর দিলেন। তারপর তাকে বিদায় জানিয়ে আবার ফিরে আসলেন সাহাবাদের কাছে। নবীর চেহারা তখনও আগের মতোই প্রশান্ত। মমতা ও ভালোবাসার এক অপূর্ব আবেশ মিশে আছে নবীর হাসিমাখা মুখাবয়বে।

একজন শ্রেষ্ঠ নবী, একজন বিজয়ী নেতা, একজন সফল শাসকের এমন সরলতা দেখে হৃদয় বিগলিত হলো আদি বিন হাতিমের। আর কোন সংশয় নেই তার মনে, কিসের আর তর্ক কিংবা অযথা প্রশ্নোত্তর! এমন মানুষের কথা মিথ্যা হতে পারেনা। তিনি তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। নিজেকে সঁপে দিলেন। বললেন, আমাকে মুসলমান করে নিন হে আল্লাহর রাসূল।

আজকের অহম আর আত্মম্ভরিতায় ভরা এ পৃথিবীতে নেতা কিংবা লিডার দূরের কথা, রাসূলের আশেক পীর মাশায়েখদের কজন পারবেন এমন সরলতায় মিশে যাওয়ার নমুনা দেখাতে!! হাদিয়া-তোহফা কিংবা খাদেমদের তোয়াজ বখশিশ না নিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষ কি পারবে কোন পীরের দরবারে যেতে! কিংবা বড় কোন হুজুরের কাছে যেতে! কার উম্মত হয়ে কি দেখাচ্ছেন তারা! আমরাই বা কি দেখছি!!

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File