পশুর জন্যও ভালোবাসা??

লিখেছেন লিখেছেন কথা সত্য ০৭ মার্চ, ২০১৩, ১২:৪৮:১৭ রাত

চারিদিকে আজ মানুষে মানুষে হানাহানি। হিংস্রতা আর নৈরাজ্য আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে চারপাশ থেকে। মমতাবিহীন এক পৃথিবীতে ভালোবাসা ও দয়া বিদায় নিয়েছে অনেক আগে। ঘোর আঁধারের এমন দুঃসময়ে আমি আপনাদেরকে কিছু অন্যরকম গল্প শোনাতে চাই। উপদেশের উপসংহারে মোড়ানো কল্পকথা নয়, কিছু সত্য ও বাস্তব চিত্র ও চরিত্রের বর্ণনা নিয়েই এ লেখা।

মদীনার পরিবেশ। না গরম না ঠান্ডা। ঝিরঝিরে বাতাস। সকাল গড়িয়ে দুপুর আসে, তারপর বিকাল সন্ধ্যা হয়ে রাত নামে। কোথাও কোন উত্তেজনা নেই। আছে কৌতুহল। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও। সবার আগ্রহ একজন মানুষকে ঘিরে। তার চলাফেরা, কথা বলার সবকিছুকে নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন মদীনার সহজ সরল মানুষগুলো। লোভ লালসা আর হিংসা এবং স্বার্থপরতা- মাত্র একজন মানুষের ছোঁয়ায় এসব ভুলে ভাই ভাই হয়ে এদের মেলামেশা।

রাসূল মদীনার অলিগলিতে হেঁটে বেড়ান। তার পরমাত্মীয় সাহাবাদের কুশল জিজ্ঞেস করেন। বাচ্চাদেরকে কোলে তুলে চুমু এঁকে দেন। পৃথিবীর সবচেয়ে এই ভালো মানুষটি নিজের উদারতা আর অপরিসীম সৌন্দর্য দিয়ে মোহিত করে রেখেছেন গোটা মদীনার পরিবেশ।

তিনি হাঁটছেন। তার পেছনে পেছনে সাহাবাদের কয়েকজন। তিনি যেখানেই যাবেন, পিছু পিছু সাহাবারাও হেঁটে চলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন। থেমে গেলেন সাহাবারাও। কই ! সামনে তো কেউ নেই! দেখার মতোও তো কিছু নেই। তবে তিনি দাঁড়ালেন কেন? সাহাবাদের চোখেমুখে কৌতুহল!

রাসূল তাকিয়ে আছেন একটি উটের দিকে। রাস্তার পাশে বেধে রাখা উট। এতে আর দেখার কী! তবে আর রাসূল কি দেখছেন অমন করে!!

একটি উট। নির্বাক পশু। মানুষের সাথে তার কথা বলার সাধ্য নেই। তার সুখ দুঃখের প্রকাশ সে মানুষকে বোঝাতে পারে না। রাসূলের তাকিয়ে থাকা উটটি সবার দৃষ্টি কেড়ে নিল। ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে তার পেট ঠেকে আছে পিঠের সাথে। রাসূল তার সাহাবাদের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, আহা! তোমরা কি এই বোবা পশুগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না? আরোহণের সময় এবং এদেরকে প্রতিপালনের সময় তোমরা ভাল ব্যবহার করো।

আরেকদিন।

তিনি এক সাহাবীর বাগানে গেলেন। ওখানে দাঁিড়য়ে ছিল একটি উট। অবাক বিস্ময়ে সেটি তাকিয়ে আছে রাসূলের দিকে। রাসূলকে দেখে এই নিরীহ পশুটির দু চোখ থেকে পানি ঝরছে। কান্নার অশ্র“তে উট রাসূলকে তার কষ্ট ও যাতনার কথা জানিয়ে দিল।

শুধু কি মানুষের! তিনি যে পশুদেরও অতি আপন! এই বিশ্ব পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জন্য তার বুকভরা মায়া ও ভালোবাসা। সে অনুভূতির ছোঁয়া পেয়ে রাসূলকে দেখে অমন করে কাঁদছে উটটি। রাসূল এগিয়ে গেলেন। নিজের হাত বাড়িয়ে তিনি উটটির চোখের পানি মুছে দিলেন। অসহায় পশুর এ বেদনা তাকেও যে আহত করেছে। এমন সরলতা আর মায়া নিয়ে এসেছেন বলেই তো তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত!!

উটটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেন রাসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই উটটির মালিক কে?’ রাসূলের জিজ্ঞাসা শুনে দৌড়ে এলেন মালিক। তিনি রাসূলের একজন সাহাবী।

রাসূল তাকে বললেন, যে আল্লাহ তোমাকে এ উটটির মালিক বানিয়েছেন, তুমি কি এ ব্যাপারে তাকে একটুও ভয় করো না? এ উট আমার কাছে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছে- তুমি একে ক্ষুধার্ত করে রাখো আর বেশি বেশি কাজ করিয়ে ক্লান্ত বানিয়ে ফেলো।

প্রথম ঘটনাটির বর্ণনা এসেছে আবু দাঊদ ও ইবনে খুযায়মাহ নামক হাদীসের কিতাবদ্বয়ে, আর ২য় ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে মুসনাদে আহমদ ও আবু দাঊদে।

শুধু উট কিংবা ঘোড়া নয়। সামান্য চড়–ই পাখি। রাসূল সা. বলেছেন, কেউ যদি খেলার জন্য একটি চড়–ই পাখিকেও মেরে ফেলে, তবে সেটি কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাকের কাছে ঐ লোকের নামে বিচার জানাবে। চড়–ই পাখিও সেদিন বলবে, ও আল্লাহ! এই লোকটি অহেতুক ও অনর্থকভাবে আমাকে মেরেছে, কোন কাজের জন্য নয়। (নাসাঈ ও ইবনে হিব্বান)

চলবে...

বিষয়: বিবিধ

১২২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File