আমরা যারা জাফর ইকবাল-কে লেখক ভাবি

লিখেছেন লিখেছেন মারিয়া আক্তার ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:১৬:৪৫ বিকাল



আমি তখন ক্লাস টু-তে পড়ি। হঠাৎ একদিন আমার সামনে একটা বই আসল ‘টি-রেক্স সন্ধানে’। যদিও বই পড়ার নেশা তখন আমাকে বেশ ভাবে জেকে ধরেছে, কিন্তু এত মোটা বই আমি এর আগে কখনো পড়িনি। তখন অবধি বইয়ের জগতের সাথে আমার পরিচয় হয় নি। কিন্তু বইটার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা আমার সমগ্র চেতনার সামনে মেলে ধরেছিল এক অদ্ভুত সুন্দর আর স্বপ্নীল জগৎ।

আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার কষাঘাতে যখন বাংলার শিশুসাহিত্য ক্রমশ নিমূলের পথে, তখন শতকরা ১০০% ভাগ শিশু কিশোর সাহিত্যিক হিসাবে বাঙলা সাহিত্যে যে কজন দিকপাল দিক নির্দেশ করেছেন তাদের তালিকা থেকে ইকবাল স্যারকে যারা বা দিতে চায় না কেন; আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশের শত শত শিশু কিশোর-এর মনে তিনি যে জায়গা দখল করেছেন সেই জায়গা থেকে তাঁকে সরানের মত কোন ক্ষমতা আজও তৈরি হয়নি। আমাদের কাছে তিনি স্বপন বুড়োর মতই প্রিয়।

“গল্প না ভাই কল্পনা নই

স্বপন বুড়ো এসে-

আমায় নিয়ে দিচ্ছে পাড়ি

সব পেয়েছি দেশে।”

তার লেখা সায়েন্স ফিকশন বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সেগুলো নাকি বিদেশি সাহিত্যের চোরাই মাল। সেইটা চোরাই নাকি খাঁটি লেখা আমাদের মত ছোটদের কাছে এই প্রশ্ন কখনো বড় হবে না। তিনি আমারে জন্য পরম মমতা ভরে একের পর এক স্বপ্নের জগৎ তৈরি করছেন; আর আমরা তার ভক্তরা (মোটেও অন্ধ নই) পরম আগ্রহে সেই জগতে বিচরণ করছি। ক্ষণিকের জন্য হলেও ভূলে যাচ্ছি আমরা দুঃখ কষ্ট আর ছোট ব্যাথাগুলো ‘টুকুনজিল’, ‘অবনীল’, ‘বিঞ্জানী সফর আলী’, ‘ওমিক্রানিক রুপ’, ‘ত্রাতুলের জগৎ’, ‘আমড়া ও ক্রেব নেবুলা’-এর মত অসংখ্য বই আমাদের ভালোবাসায় সিক্ত। তিনি সাহিত্যিক সিহাবে কতটা সার্থক সেইটা বিচার করার ক্ষমতা হয়ত আজ আমাদের নেই। কিন্তু তিনি আমাদের কাঁদিয়েছেন। হ্যাঁ! আমরা কেঁদেছি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ পড়ে, কেঁদেছি ‘দিপু’ নম্বার টু’ আর ‘আমি তপু’ পড়ে।

মানুষের বিশেষ করে শিশু কিশোরদের ছোট ছোট সাধ, আশা, ভালোলাগা আর ভালোবাসাগুলো তার লেখায় জীবন্ত হয়ে আছে। সায়েন্স ফিকশনের পাশাপাশি মানবিক আবেগ প্রধান হয়ে ওঠেছে মহীমায়।

তার বই যে আমাদের স্বপ্নের জগতের সন্ধান দিয়েছে আর কাঁদিয়েছে তাই নয়। আমরা হেসেছি প্রাণ খুলে ‘বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর’ পড়ে। হেসেছি ‘টুকি ও ঝা’ এর দুঃসাহসিক অভিযান’. ‘বিঞ্জানি সয়দর আলীর মহা মহা আবিষ্কার’ পড়ে। আবার কখরো ‘পিশাচিনী’ ‘রহমত চাচার একরাত’ ‘সুতো রন্তু ‘সহযাত্রী’ এর মত ভূতের গল্প পড়ে রাত্রে ভয়ের চোটে লেপ মুড়ি দিয়ে থেকেছি। বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত হয়েছি ‘একটুখানি বিজ্ঞান’ আর ‘বিজ্ঞানের একশো মজার খেলা’ পড়ে।

কিন্তু ইন্টারনেটে ‘তোমরা যারা জাফর ইকবালকে লেখক ভাবো’ শূর্ষক প্রবন্ধ পড়ার পর বাংলার কোটি কোটি কচি প্রাণ শিশুকিশোরদের পক্ষ থেকে সেই সকল বীর পুরুষকে আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি- যদি ক্ষমতা থাকে, যদি সত্যিকার অর্থে তোমরা বীর পুরুষ হও তো আমাদের মন থেকে ‘জাফর ইকবাল’ নামটা মুছে দেখাও। আমরা বিনা দ্বিধায় মেনে নেব তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমানের ও রত্নগর্ভা মাতা আয়েশা ফয়েজের স্বার্থলোভী সুযোগ সন্ধানী, পক্ষপাতী কাপুরুষ সন্তান। তিনি কেবল স্বার্থের আশায় লোখালেখি করেন। তার লেখা কেবলই বাক্য বাহুল্য। কিন্তু তা যদি না পারো তো কসম সেই বীর বাঙালির দেশমাতা ‘বাংলাদেশের তোমারে হীন উদ্দেশ্য বাঙলার মাটিতে স্বার্থক হতে দেব না। এ আমাদের কচি প্রাণের শপথ।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File