জাতির জনক।
লিখেছেন লিখেছেন মিছবাহ ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:২২:১৯ রাত
জাতির জনক
জাতির জনকের মর্যাদা এককভাবে কাউকে দেয়া সমুচিত নহে।যাহা আমি মনে করি এবং আমার মতের সাথে কোন অবস্থায় সুবিচার নয়। আমাদের উত্তরসূরিরা আমাদেরকে ক্ষমা করবেননা যদি আমরা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাই।
প্রায় ৪১ টি বছর পার হয়ে গেল অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে।এখন দেশ সাজানো গোছানো দরকার।যাহার প্রাপ্য যেটা,তাহা দিয়ে দেয়া দরকার। ইহাতে আমাদের অমিত শান্তি নিহিত।কাউকে খাটো করা যাবেনা। একটু পিছনে গেলে দেখব, কত মহান রাষ্ট্রনায়কদের ত্যাগের বিনিময়ে, আজকের আমাদের এই অর্জন। এখন আমাদের মাথা তুলে দাঁড়ান দরকার।
আজ যে দেশটির দিকে সবাই তাকিয়ে আছে সেই আমেরিকাতে ৭ জন মহান রাষ্ট্রনায়ককে জাতির জনকের (founding fathers) মর্যাদা দিতে মুটেই কার্পণ্য করেনি। যারা হলেন Benjamin Franklin, George Washington, John Adams, Thomas Jefferson, John Jay, James Madison, and Alexander Hamilton । কানাডাতে ৩৬ জন মহান নায়কদের জাতিও জনকের মর্যাদা দিয়েছে । প্রতিবেশী ভারতের ৪ জন মহান পুরুষকে জাতিও জনকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।পাকিস্তানে একের অধিকজনকে জাতির জনকের আসন দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের বাংলাদেশে যাঁদের ত্যাগ,নেতৃত্ব এবং সর্বোপরি দূরদর্শী চিন্তায় আজ আমরা মহীয়ান,আমি আমার লিখায় লিখে যেতে চাই তাঁদের নাম জাতিও জনকদের স্থানে। ১।শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ২।হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। ৩। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ৪।শেখ মুজিবুর রহমান। ৫।জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। ৬।মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। উনারা কেউ যেভাবে ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলেন না, সেভাবে তাঁদের কাউকে খাট করার নয়। প্রতীতযশা প্রতিজন মানুষ দিয়ে গেছেন আমাদের জাতিকে প্রচুর।উনারা চলে গিয়েছেন কিন্তু ফউন্ডেশনটা দিয়ে গিয়েছেন, কিছুই নিয়ে যান নাই এখন আমাদের মাথা উঁচু করে দাড়াতে হলে গুণীদেরকে মর্যাদা দিতেই হবে। ভীত যত মজবুত হয় ঘর তত শক্ত হয়। যদি না হয়,দিক ভ্রান্ত হয়ে হুঁচট খাবে,দানব তৈরি হবে,দত্য আর দানবের চর্বিত অংশ শঁকুনে খাবে।
বাংলাদেশ হওয়ার পর যেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার হিড়িক পড়েছিল। নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছিল দেশটা।কোন গাংগের পানি কোন গাঙ্গে যাবে? যাক আজ না হয় দুই ভাগে বিভক্ত বেশির ভাগ লোক।কিন্তু এখনো কোন প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা লক্ষণীয় নয়।রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি হবে এবং মেধার বিকাশ ঘটবে।মেধাবী গানের মহড়া হচ্ছে বরং মেধাবী রাজনীতির নয়। কি দিয়েছি সেটা নয় বরং কি পাই নাই সেটা মুখ্য।"Are you a politician asking what your country can do for you or a zealous one asking what you can do for your country? If you are the first, then you are a parasite; if the second, then you are an oasis in a desert." Khalil Gibran। ২২ টি পরিবার ছেড়ে কত লক্ষ পরিবারের উন্নতি কিন্তু সেই কৃষকটি থেকে গেল নিরাশায় রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ী। একবার ক্ষমতায় যেতে পারা এই আর কি? সেও স্বপ্ন দেখে।
সংগ্রামের সময় যারা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বেঁছে ছিল তারা কত ভাল ছিল যারা ভুক্তভোগী মাত্র তারাই জানেন। আর যারা মান ইজ্জ্যত ত্যাগ করে নিজের ভিটে মাটিতে আঁকড়ে পড়ে থেকেছিল ওরা দিনের বেলায় কেউ শান্তি কমিটির লোক হয়ে, পুরা বস্তিটাকে রক্ষা করেছিল, আবার কেউ দিনে রাজাকার, রাতে পাহারাদার হত। জীবিত মুক্তি যুদ্ধাদেরকে, আজও জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে, ওদেরকে কত রাজাকার দিয়েছিল আশ্রয়, মুক্ত করতে দেশটাকে? এছাড়া কি দেশ এত তাড়াতাড়ি মুক্ত হয়ে যেত? অথচ দেখা গেল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর, আত্মসমর্পণের দিন, মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, জেনারেল ওসমানীর অনুপস্থিতি।মিত্রবাহীনি তখন কাজ করছিল না।
স্পেনে যখন মুসলমান এবং ইহুদী নিধন করেছিল, ইসাবেলা এবং পোপের নির্দেশে, তখন তরবারির নিচে, খৃষ্টান হয়ে বাহিরে এক এবং ভিতরে আরেক সেজে বাঁচিয়েছিল অনেকে প্রাণ। দক্ষিন এবং উত্তর আমেরিকাতে যাহারা মুসলমান, পূর্বসূরি এদের ওনেকেরই লুকিয়ে ,ছাপিয়ে ঐ সমস্থ বংশদর। আর এইভাবে কৌশলে আমরাও হিন্দু-মুসলমান আপাতত নিজেদেরকে যেভাবে পারি রক্ষা করেছিলাম, হানাদার বাহীনিদের হাত হতে।অবশ্য সেখানে অতি ভাল কিছু রাজাকার কাজ করেছিল, তাহাদের নিজ স্বার্থে।সেখানে কোন ধর্ম কাজ করে নাই।সেরকম স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার পর কিছু অতি ভাল মুক্তিযোদ্ধারাও এই ন্যক্কার কাজ করতে পেরেছিল।তারপর বিশেষ দলের লোক হলে কোন কথাই নাই,তখন কে রাজাকার, কে অরাজাকার ধারনা করা কঠিন হয়েগিয়েছিল। লুণ্ঠন,ডাকাতি,ধর্ষণ প্রতিদিনের খবর হত। এরপর আলশামস,আলবদর, রাজাকাররা যাহা করার বাকী ছিল তাহার পুরোটাই শেষ করতে পেরেছিল।১৯৭৪ ইংরেজির দুর্ভিক্ষ,লঙ্গর খানার লাইন,রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ,শৃগাল ও কুকুরের টানাটানি, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদের গর্ত করে একত্রে লাশ চাপা মাটি দেয়ার চিত্র কিছুই ভুলে যাওয়ার নয়। ব্রিটিশ যখন ভারত ছেড়ে যায় তখনো এই দেশে কিছু হিন্দু-মুসলমান স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষে ছিল।পাকিস্তানে ও ছিল জামাতে উ-লামায়ে হিন্দ কিন্তু কেউ পরবর্তীতে কলাবরেটর হয় নাই। শাস্থি পাক প্রকৃত দুষীরা কিন্তু একজন নির্দোষ মানুষ যাতে শাস্তি না পায় এবং এই হউক শেষ অধ্যায়।
জীবনের আঁধার সময় পর্যন্ত যার জেলের কুঠরে, সেই মহা নায়ক নেল-ছন মান্ডেলা যে কতটা মারমুখী হয়েছিলেন তাহার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, তা আমার জানা নাই।জানা নাই আমার,কতটা রাস্তার নাম ফলক অথবা ইমারত স্থাপনার নাম ফলক পালটাচ্ছেন এই গুণীজন।এই গুলার জন্য তিনি জেলে গিয়েছিলেন না, তিনি একজন সর্বজনীন,সর্ব-শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রনায়ক।দত্যদের সরিয়ে তিনি দানবদেরকে লালন করেন নাই।লাগাম দিয়েছেন তার লালসা এবং মনের খায়েশকে। বিশ্ব নবী বিজয় করে এসে শেষ ১০ জন পাপীকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যাহা মহা-প্রাপ্তির লক্ষ্যে।
নিউইয়র্কে আমাকে একদিন একজন ব্রিটিশ নাগরিক কটাক্ক করে, প্রশ্ন করেছিলেন আমরা কেন কৃতজ্ঞ নই তাদের প্রতি? ২০০ বছরে যাহার কাঠামোগত উন্নয়ন করে গিয়েছিল ব্রিটিশরা, আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা ত তেমন কিছু করতে পারি নাই।এইটুকু আমি শুধু বলেছিলাম, হ্যাঁ তোমরা যেটুকু করেছ , তাহা পরিবহন করার জন্য এবং তাহা দিয়ে তোমাদের দেশ সম্ভৃদ্ধ হয়েছে মাত্র। আরেকদিন আমেরিকার কানেক্টিকাটে প্রতিবেশী ভারতের নামি ও দামি আদবানি পরিবারের একজন সুযোগ্য সদস্য আমাকে অকৃতজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়েছিলেন,স্বাধীনতা এবং ভারতের সাহায্যে। বলেছিলাম আমি অকৃতজ্ঞতার সারিতে নই তবে এটাও সত্য আমারা যতটুকু লাভবান হয়েছি তার চেয়ে ঢের বেশী লাভবান হয়েছে ভারত।ভারতে এখন আর পূর্ব পাকিস্তানের বর্ডার নাই যাহা ১৯৬৫ ইংরেজি পর্যন্ত একটা মরনফাঁদ ছিল।
হাইতি এখনো শীর খাড়া করতে পারে নাই নেপোলিয়ানের নিষ্পেষণের কারণে।যেমন করেছিল ধূর্ত ব্রিটিশরা আসাম ও বার্মার যুদ্ধে।বার্মা তো বেঁচে গেল ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি কিন্তু আসাম থেকে গেল খোলা আকাশের নিচে। পাকিস্তান ছিল বলেই ত ভাই আজ হব না কেন আমি বাংলাদেশী? সময় এখন পরিবর্তনের,বাকী আছে এখনো অনেক। পাথরটা লঙ্কাণরা কি কষ্টে না সরিয়েছে কিন্তু জগদ্দল পাথরটা আমাদের ওদিকটায় সরিয়েছে মাত্র।গোটা আরব বিশ্ব জোড়ে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে এবং এই হাওয়া কখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আন্দাজে বলা মুশকিল।
পরিশেষে আমরা যদি আমাদের মহীয়সী গুরুজনদের সম্মান দেই না এবং দিতে জানিনা, তাহা-হলে আমরাও কোনদিন সম্মান পাবো না।মাথা উঁচু করে খাড়া হতে পারব না।আমরা একটা দেশ পেয়েছি, এখনো প্যালেস্টাইন হাহাকার তপ্ত এক অনন্ত সাহারা।
বিষয়: বিবিধ
১৪১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন