মহাবিশ্বের ‘কজ’ বা ‘কারণ’ = স্রষ্টা?

লিখেছেন লিখেছেন হাসান আল বান্না ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৩:১৮ রাত



মহাবিশ্বের একটি ‘কজ’ আছেই এটা বিশ্বাস করার মত আমাদের পূর্বের আলোচনায় বেশকিছু যৌক্তিক যুক্তি উল্লেখ করেছি। যাইহোক, এতে ‘কজ' কি? - এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না, কিন্তু আমরা যদি এই ‘কজ’ এর প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা করি যাকে 'ধারণা সংক্রান্ত বিশ্লেষণ' বলে – তবে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারবো যে, এই ‘কজ’ বা ‘কারণ’টি অত্যন্ত শক্তিশালী, যেহেতু এই ‘কজ’ বা কারণ পুরো মহাবিশ্বকে বাস্তব করে তুলেছে আর এই 'কজ' বা 'কারণ' টি অবশ্যই: ‘একটি কজ' ; 'একটিই কারণ'।

‘আনকজড’ এবং চিরন্তন:

মহাবিশ্ব সৃষ্টি কিংবা বিগ-ব্যাঙ এর এই ‘কজ’ অবশ্যই ‘আনকজড’ কজ কিংবা এটাই চেইনের প্রথম ‘কজ’ কারণ তা না হলে অযৌক্তিক অসীম অবস্থা পূণরায় ফিরে আসবে মনে আছে 'ইনফিনিট রিগ্রেস'?। এটা খুলে বললে যা দাড়ায়, যদি মহাবিশ্বের একটা ‘কজ’ থাকে এবং সেই ‘কজ’ এর একটা ‘কজ’ থাকে তা হবে এড-ইনফিনিটাম, অতপর: প্রথম বারের মত কোন মহাবিশ্বই অস্তিত্বে আসবে না। নিশ্চয়ই মনে আছে সেই যুক্তিটি –

{ একজন স্নাইপার যে এই মাত্র তার টার্গেট দেখতে পেল, দেখামাত্রই সে তার বেস-এ কল করে (শুট করার) পার্মিশন চাইল। যে ব্যক্তি বেস-এ তার কলটি রিসিভ করেছে, সে বলল, অপেক্ষা কর, আমি আমার উপর যে আছে তার কাছ থেকে পার্মিশন নিচ্ছি। তো, এভাবে এক লোক তার উপরের লোকের পার্মিশন নিচ্ছে, সে তার উপরের, সে তার উপরের উপরে আর এভাবে অনন্তকাল যদি চলতেই থাকে তবে স্নাইপার কি কখনও তার টার্গেট শুট করতে সক্ষম হবে?

পরিস্কার উত্তর হল, সে কখনই শুট করতে সক্ষম হবে না। শুধুমাত্র একটি পন্থায় স্নাইপার তার টার্গেট শুট করতে পারবে, আর তা হল – অন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন ছাড়াই, যদি সে নিজেই নিজেকে পার্মিশন দেয় । সেই স্নাইপারই হবে প্রথম কারণ বা ‘ফার্ষ্ট কজ’। একই ভাবে, ‘বিগ ব্যাঙ’ এরও অবশ্যই ‘ফার্ষ্ট কজ’ রয়েছে। }

আর এই ‘ফার্ষ্ট কজ’ কে হতে হবে ‘আনকজড’, চিরন্তন

যাই হোক, কিছু দার্শনিক ও বিজ্ঞানী দাবী করে যে, “কেন মহাবিশ্ব নিজেই নিজে ‘কজ’ নয়?” এবং “কেন ‘কজ’ মহাবিশ্বে স্থির হতে পারে না”? ভাল কথা, এই দাবীর সমস্যা হল, দাবী অনুযায়ী দাড়াবে - মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে। যেটা অসম্ভব ও অসাড় কারণ, কিভাবে তাহলে কোন কিছু ‘একই সাথে বিদ্যমান এবং অবিদ্যমান’ ‘exist and not exist at the same time’? সবশেষে, এটা অবশ্যই অযৌক্তিক দাবী যে, ‘যা কিছু কোন এক সময় থেকে আরম্ভ হয়েছে তা নিজে নিজেই হয়েছে’।

নিরবয়ব, ইমমেটেরিয়েল

‘কজ’টিকে হতে হবে অবয়বহীন, ইমমেটেরিয়েল কারণ এটি ‘সব কিছুই’ সৃষ্টি করেছে। আপনি যদি বাস্তবে অস্তিত্ব বিদ্যমান এমন কোন কিছু নেন, বুঝতে পারবেন সেটি অন্য একটি বাস্তব অস্তিত্ব অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত ও দ্বায়বদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে বিদ্যমান এমন কিছুর পেছনে আপনি অনন্তকাল ধরে যেতে পারবেন না, কারণ এতে পূর্বে উল্লেখিত ‘ইনফিনিট রিগ্রেস’ সৃষ্টি হবে। বাস্তবে বিদ্যমান এমন সকল অবস্থার ‘অবশ্যই একটি শুরু আছে’ । সুতরাং যৌক্তিক উপসংহার হল, সমস্ত সৃষ্টিজগতের উৎপত্তির উৎস হতে হবে ‘নন ফিজিকেল ষ্টেট’, নিরবয়ব, ইমমেটেরিয়েল

কারণটা আবারও ব্যাখ্যা করি, কেউ একটা বস্তু, সূর্য, চাদ, হাতি কিংবা অতিকায় কোন প্রাণি কিংবা কোন বিশেষ 'মানুষ'কে নিয়ে দাবি করল - এটি 'স্রষ্টা'। পূর্বের সাধারণ ছোট ছোট যুক্তিগুলোর সাহায্যে এখন আপনি জানেন, যা কিছু 'কোন এক সময় থেকে শুরু হয়েছে' তা কখনও স্রষ্টা হতে পারেনা, কারণ তাদের সৃষ্টির পেছনে 'কজ' বা 'কারণ' রয়েছে, আর এই সৃষ্টিটি সেই 'কজ' এর উপর নির্ভরশীল ছিল। যার একটি 'আরম্ভ' রয়েছে তা চিরন্তন নয়, তার ফিজিক্যাল ষ্টেট আছে, ডিপেন্ডেন্সি আছে আর যৌক্তিক কারণেই 'চিরন্তন' হল তা'ই যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি।

মহাবিশ্বের ‘কজ’ এর প্রকৃতি অনুসন্ধান করে আমরা অনন্যসাধারণ উপলব্ধির সন্ধান পেয়েছি, এতে একেশ্বরবাদ ধর্মে উল্লেখিত স্রষ্টার সকল স্বাভাবিক গুণাবলী নিহীত রয়েছে, যেমন ‘তিনি এক’, ‘চিরন্তন’, ‘ইমমেটেরিয়েল বা কোন কিছুর সাথে অস্বদৃশ্য’। কিন্তু কোন যুক্তিতে বিশেষ একটি ধর্মকে সত্য বলে দাবী করতে হবে? বিষয়টি আমাদেরকে ‘কোরআন’ – মুসলিমদের গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত করে।

দ্য কোর’আন

কোরআন কোন সাধারণ গ্রন্থ নয়। যারা এটি পড়েছেন এমন অনেক ব্যক্তি গ্রন্থটি সম্পর্কে বলেছেন - একটি বিস্ময়কর গ্রন্থ, কিন্তু যে পদ্ধতিতে বইটি পাঠককে বিস্ময়াবিভূত করে তা নেতিবাচক নয়, বরং এটি ইতিবাচক। কারণ এটি ইতিবাচকভাবে আপনার মন এবং আবেগকে জড়িয়ে রাখে আর গভীর প্রশ্নের মাধ্যমেই তা অর্জন করে।

যেমন,

“অতএব, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? এটা তো সকল বিশ্ববাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা পথে চলতে চায়”
ii.

“তারা কি ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সহিত সাক্ষাতে অবিশ্বাসী”
iii.

যাইহোক, কোরআন কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনা, এটি মুলত নিজের 'ঐশ্বরিক উৎপত্তি' সম্পর্কে সকল বিশ্ববাসীকে চ্যালেঞ্জ করে, দৃঢ়ভাবে আহবান করে,

“যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার (মোহ্ম্মদ দঃ) প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা (অধ্যায়) রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। আর যদি সক্ষম না হও-অবশ্য তোমরা সক্ষম হবে না, তাহলে আগুনকে ভয় কর, যার জ্বালানী মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।”
iv.

এই চ্যালেঞ্জ কোরআনের অনেক আশ্চর্য বক্তব্যকে নির্দেশ করে, এমনকি সবচাইতে ‘ছোট অধ্যায়’টি পর্যন্ত, যা আমাদের বিশ্বাস করার জন্য শক্ত যুক্তি দেখায় যে, এটা স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত।

চলবে....

i http://www.hawking.org.uk/index.php/lectures/publiclectures/62 (link is broken now)

ii Qur’an Chapter 81 Verses 26 – 28

iii Qur’an Chapter 30 Verse 8

iv Qur’an Chapter 2 Verse 23

------------------------------------------------------------

পরের লেখাগুলোর জন্য নিয়মিত চোখ রাখুন

পূর্বের লেখাগুলো:

http://sonarbangladesh.com/blog/hasanbanna/144577" target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">এক স্রষ্টায় বিশ্বাস করার মত ভাল যুক্তি কি আমাদের আছে?

কিন্তু আমরা তো স্রষ্টাকে দেখতে পাই না !

মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছেন – এটা কি যৌক্তিক বিশ্বাস?

লেখাটি http://www.onereason.org

এর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনুবাদ

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File