এক স্রষ্টায় বিশ্বাস করার মত ভাল যুক্তি কি হতে পারে?

লিখেছেন লিখেছেন হাসান আল বান্না ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২৫:৪৭ দুপুর



কিন্তু আমরা তো স্রষ্টাকে দেখতে পাই না !

আমরা স্রষ্টাকে দেখতে পাইনা, এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা দেখতে পাইনা কিন্তু বিশ্বাস করি কারণ আমরা তার ফলাফল কিংবা প্রভাব দেখতে পাই। ধরুন আপনি আপনার দাদার দাদার দাদার দাদার দাদার দাদার দাদাকে কখনই দেখেননি, তার কাপড় চোপড় দেখেননি কিংবা তার কোন আসবাবপত্রও দেখেননি। তাহলে কেমন করে আপনি নিশ্চিত হলেন যে তিনি কখনও বিদ্যমান ছিলেন?

আপনি জানেন, তিনি অবশ্যই বাস্তব ছিলেন কারণ আপনি এখন বাস্তব। কল্পনা করুন, কাল রাতের পার্টির পর আজ সকালে আপনি আপনার গৃহটিকে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় ছেড়ে এসেছেন। বিছানা যত্রতত্র, কাপড়গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে, চেয়ারগুলো ফ্লোরে এলোমেলো, ডাইনিং টেবিল আর কিচেন ময়লা আবর্জনায় ভর্তি।

এখন কল্পনা করুন, আপনি কাজ শেষে ঘরে ফিরে এলেন এবং দেখতে পেলেন ঘরটি দ্যুতি ছড়ানো আলোয় ঝলমলে পরিস্কার ।

আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করবেন -

কে ঘরে এসেছে আর সব কিছু এত্তো ভাল পরিস্কার করে রেখেছে?

কে ফার্নিচারগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রেখে গেছে?

কে বিছানাটা পরিস্কার করে রেখেছে?

কে ময়লাগুলো ধুয়ে মুছে পরিস্কার করলো?


এমনটি আপনি কখনই দেখেননি কে আপনার ঘর পরিস্কার করে রেখে গেছে তার পরও আপনি বিশ্বাস করবেন যে, লোকটি বাস্তব, অস্তিত্বসম্পন্ন, বিদ্যমান কারণ - আপনার ঘরের সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত অবস্থা।

অনুরুপভাবে, প্রকৃতিতে এবং মহাবিশ্বে আমরা যে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত অবস্থা দেখতে পাই তা’ই একজন স্রষ্টা থাকার প্রমাণ - এমনকি আমরা তাকে দেখতে না পেলেও।

কেন এই মহাবিশ্ব এমন?

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যা চিন্তাবিদ, যুক্তিবাদী এবং আপনার ও আমার মত লোকেরা করে তা হল, কেন এ মহাবিশ্ব আদৌ বিদ্যমান? কেন মহাবিশ্ব এইএরূপ যেমনটি তা দেখা যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকে বলেন যে মহাবিশ্ব ‘আন কজড’, ‘অকারণে’, অন্য ভাষায় চিরন্তন, মানে এর কোন শুরু নেই এবং কোন শেষও নেই। এটা যদি সত্যি হয় তবে এর পূর্ববর্তী ঘটনাবলীর একটি ‘চিরন্তন ইতিহাস’ থাকা উচিত। যাহোক, এই বাস্তব বিশ্বে ‘চিরন্তন’ বলে কোন কিছু সম্ভব নয় যেহেতু এটি ‘অসীম’ সংখ্যার সূচনা করে।

চলুন নিচের উদাহরণটা বিবেচনা করে দেখি, যদি একটি রূমে অসীম বা অশেষ সংখ্যা পরিমান বই থাকে এবং ২টি বই সেখান থেকে নিয়ে ফেলা হয়, তাহলে কতগুলো বই অবশিষ্ট থাকবে? উত্তরে হয়ত বলবেন অসীমের চাইতে ২টি বই কম, যারা যুক্তিবাদী তারা বলবে ‘অসীম-২’। যেকোন পরিস্থিতিতে উত্তরটি অর্থবহ নয় কারণ অসীম সংখ্যক বই থেকে ২টি বই নেয়া হলেও এখনও অসীম সংখ্যক বই’ই বিদ্যমান! ফলশ্রুতিতে রুমের অবশিষ্ট বইগুলো কখনই গুনে ‍শেষ করা সম্ভব হবে না!

সুতরাং ‘অসীম’ একটি অসঙ্গতিপূর্ণ ধারণা যা বাস্তব দুনিয়ায় বর্তমান নয় (যদিও সংখ্যাতত্ত্বে ‘অসীম’ বিদ্যমান, তথাপি এটি প্রমাণ ব্যতিরেকে সত্য বলে গৃহীত ও রীতি অনুযায়ী সংখ্যা)। অতএব, মহাবিশ্বের ঘটনা প্রবাহের একটি ‘সীমিত’ অতীত ইতিহাস রয়েছে – এটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত, যা নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব ‘কোন এক সময়’ থেকে শুরু হয়েছে।

উপরের কথাগুলো আপনার কাছে দর্শনের মত ঠেকতে পারে, কিন্তু বিষয়টি বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারাও সমর্থিত যেমন, ষ্টিফেন্স হকিন্স তার ‘বিগিনিং অব টাইম’ নামক বক্তৃতায় বলেন, “বক্তব্যের উপসংহার এই যে, মহাবিশ্ব সব সময় বিদ্যমান ছিল না। বরং ১৪ বিলিয়ন বছর পূর্বে বিগব্যাঙ এর মাধ্যমে ‘মহাবিশ্ব’ এবং ‘সময়’ আরম্ভ হয়। সমসাময়িক কসমলজিষ্টদের মতে, মহাবিশ্ব শুণ্য সময়ে (টাইম জিরো) ‘বিগ ব্যাঙ’ ঘটনার মাধ্যমে শুরু হয়। এই মতবাদ স্বীকৃতসত্য বলে গণ্য হয় যে, অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য খুদ্র আকার ও উত্তপ্ত অবস্থা থেকে অতি উত্তপ্ত ও ‘ঘন অস্তিত্ব’ প্রসারিত হয়, পরবর্তীতে ঠান্ডা এবং বর্তমান আকার ও তাপমাত্রায় রূপ নেয়। এই তথ্যের আলোকে, এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, ‘টাইম জিরো’র পূর্বে কি ঘটেছিল তার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বিগ ব্যাঙ থিওরী শুধুমাত্র বিগ ব্যাঙ ঘটার ১ x ১০ টু দি পাওয়ার -৩৪ সেকেন্ড পর কি ঘটেছে তা ধারণা করতে পারে, তার পূর্বে নয়। এই বিশেষ সময়ের পূর্বে কি ঘটেছিল তা অজানা।

উপরের আলোচনার আলোকে, এই ভাবে সমাপ্তি টানা যায় যে, সাধারণতঃ ফিজিসিষ্টগণ একমত- বিগ ব্যাঙ এর ফলে ফিজিক্যাল টাইম এবং স্পেস সৃষ্টি হয় তেমনি হয় এনার্জি এবং ম্যাটার। তো উপরের সব কথা থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যায়:

১. যা কিছু বিদ্যমান হতে আরম্ভ করে তার একটি কারণ বা ‘কজ’ আছে।

২. মহাবিশ্ব বিদ্যমান হতে আরম্ভ করে – তাই মহাবিশ্বের কারণ বা ‘কজ’ আছে।

আমরা কিভাবে এই উপসংহারে পৌছুলাম?

ভাল কথা, আমরা যা জানি আর দেখি, যা বিদ্যমান হতে আরম্ভ করে যেমন রুমে একটি শব্দ, মিসরের পিরামিড কিংবা জলোচ্ছাস, যদি এমন সব কিছুরই একটা ‘কজ’ থাকে, তাহলে মহাবিশ্ব যা 'এক সময়' বিদ্যমান হতে শুরু করেছে তারও অবশ্যই একটি ‘কজ’ বা কারণ আছে।

মহাবিশ্বের ‘কজ’ বা ‘কারণ’ = স্রষ্টা?

আমাদের আলোচনায় - মহাবিশ্বের একটি ‘কজ’ আছেই এটা বিশ্বাস করার মত যথাসম্ভব যৌক্তিক যুক্তি উল্লেখ করেছি। যাইহোক, এতে ‘'কজ কি'’ - এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না, কিন্তু আমরা যদি এই ‘কজ’ এর প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা করি যাকে ধারণা সংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলে – তবে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারবো যে, এই ‘কজ’ বা ‘কারণ’ অত্যন্ত অত্যন্ত শক্তিশালী, যেহেতু এই ‘কজ’ বা কারণ পুরো মহাবিশ্বকে বাস্তব করে তুলেছে আর এই 'কজ' বা 'কারণ' টি অবশ্যই: ‘একটি কজ' ; 'একটিই কারণ'।

চলবে....

------------------------------------------------------------

পরের লেখাগুলোর জন্য নিয়মিত চোখ রাখুন

পূর্বের লেখা:

মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছেন – এটা কি যৌক্তিক বিশ্বাস?

লেখাটি http://www.onereason.org

এর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনুবাদ

বিষয়: বিবিধ

২৩৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File