হোজায়ফা, মিসর
লিখেছেন লিখেছেন হাসান আল বান্না ২২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩৪:২২ বিকাল
বাসা থেকে বেরুতেই হোজায়ফার সাথে দেখা মুসার। হোজায়ফা মাসরির বাড়ি আলেক্সান্দ্রিয়ায়, মাইক্রোচিপ ডিজাইনার, পড়ালেখা শেষে তার প্রথম জব হয়েছিল কায়রোতে। অর্থাভাবে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেলে সে এ শহরে এসে উঠে, ইন্টারভ্যু শেষে অপেক্ষা করছে, চাকরীটা হয়ত হয়ে যাবে। হ্যান্ড-সাম ছেলেটার সাথে মুসার প্রথম দিন সাক্ষাতটা ছিল সাদামাঠা। পাশাপাশি দুটো বেসিনে ওজু করছিল ওরা, হাত ধুতে গিয়ে হোজায়ফার পানি ছিটকে ভিজিয়ে দিল মুসার জামার খানিকটা, হোজায়ফার দৃষ্টিতে অসহায় অপরাধী ভাব দেখে দু-চোখ একত্রে টিপে হাসল মুসা। নামাজ শেষে বেরুতেই দেখল অপেক্ষা করছে মিসরি যুবক, চোখে চোখ পড়তেই সবগুলো দাঁত ঝিক করে হেসে উঠল, এত সুন্দর দাঁতের ছেলেটি নিশ্চয় খুব সহজ সরল, দাঁতের সাথে মানুষের হৃদয়ের একটা সম্পর্ক না থেকেই পারে না, ভাবতে ভাবতে হাত মেলাল মুসা। হাতে হাত রেখে টের পেল মুসা, হোজায়ফা দোয়া করছে তার জন্য, যেন কত দিন আগে থেকে চেনে ওরা পরস্পরকে।
সেডান স্লো করে হোজায়ফাকে হাত দেখাল মুসা, হোজায়ফার ঝিক ঝিকে দাঁতগুলো বেরিয়ে পড়তে দেখেই গাড়ি ছোটাল আবার। কাস্টমাইজড মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং এ দক্ষ হোজায়ফাকে চাকরী দিতে পারে এমন কোম্পানী মাত্র দুটো এ শহরে। দেখা হলেই মুসা ওকে বলে, ছাড়ো এসব চাকরীর খোজ, তুমি বরং নিজেই কিছু কর, স্বপ্ন দেখায় তাকে, শহরের তৃতীয় কোম্পানিটা হবে ওর নিজের, প্রোগ্রামেবল ওপেন সোর্স মাইক্রো কন্ট্রোলারের আইডিয়াটা ব্যাখ্যা করে বলে, অনেক ভাই বোনকে অনলাইনে সাথে পাবে সে, যারা ওকে সফটওয়্যার ফ্রেমওয়ার্কটি দাড় করাতে কোড লিখে সাহায্য করবে । হার্ডওয়ার ডিজাইনটা অবশ্য তাকেই করতে হবে। মুসা ভাবছে কিভাবে সাহায্য করা যায় হোজায়ফাকে, চাকরীটা ওর না হলেই ভাল। হোজায়ফা ভাবছে, চাকরীটা হলে কদিন পরেই আলেক্সান্দ্রিয়া ফিরে গিয়ে মাকে দেখে আসবে, আর বলবে উনি এখন মেয়ে দেখতে পারেন।
গরমটা অসহনীয় হয়ে উঠছে, অফিস, ঘর কিংবা গাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরুবোর জো নেই একটুও, বাতাস এখন আগুনের মত গরম। অবশ্য বাস স্টপেজ, মেট্রো ষ্টেশন, অফিস সবখানেই এসি, এসি ছাড়া এ শহর যেন অচল, আচ্ছা কোন দিন যদি কারেন্টের অভাবে পুরো শহর ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়, কিভাবে বাঁচবে মানুষগুলো, ধু ধু বালি আর সারি সারি দালানের এই শহর কি মানুষ বসবাসের অযোগ্য পড়বে না? এক সময় এদের পূর্ব পুরুষরা কঠিন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল কিন্তু এখন সব কিছু বদলে গেছে।
এলো মেলো ভাবতে ভাবতে কবে যে অফিসের পার্কিংএ এসে পৌঁছুল খেয়াল নেই মুসার। গাড়ি ছেড়ে বেরুতেই গমগম করে উঠল একটি কণ্ঠস্বর-
- হেলো মুসা, কেমন আছো আজ? ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নিলো মুসা, লোকটা পিইট।
- হেলো পিইট, আমি ভাল, আপনি কেমন?
- আর বলো না, জোহানেসবার্গ থেকে একগাদা ব্যাগ নিয়ে আমার বউ কাল হাজির, এদিকে বাসাটা গোছানোই হয়ে উঠেনি।
- অফিস থেকে ফেরার সময় সাথে নিয়ে যেও আমাকে। হেসে ফেলল মুসা।
ব্যাগ ডেস্কে রেখে ছুটল প্যান্ট্রিতে, পছন্দের অপসনগুলো সেট করে স্টার্ট এ ক্লিক,ধূমায়িত কাপ হাতে ছুটে আসবে নিজের টেবিলে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নিজ ডেস্কে হাজির হতে হবে, তারপর কফির কাপে চুমুক দিয়ে মেইলগুলো চেক করতে শুরু করবে ও। দরজা খুলে ঢুকেই দেখে নিলো কে কে আছে রুমে। ইন্ডিয়ান ভিজয় চায়ের কাপে চিনি মেশাচ্ছে, বিল্টইন কফি মেকারের সামনে মরোক্কান জেইন মওফাখের আর ইরানি মাসুমেহ ওভেন থেকে কি জানি বের করছে।
- কেয়সে হো ভিজয়, ক্যায়ফ হাল জেইন, হায় মাসুমেহ, গুড মর্নিং গাইজ।
- হেল্লো মুসা, গুড মর্নিং । মুসাকে সবাই একসাথে জবাব দিল।
থেমে যাওয়া হল্লাটা আবার শুরু হতেই ওয়ার্মার থেকে নিজের পুড়নো কফি কাপটি হাতে নিয়ে চুপচাপ জেইন এর পেছনে কিউতে দাঁড়াল মুসা।
- কি ব্যাপার মুসা, কাপটা কবে বদলাবে? জেইনে মুখে হাসি, চোখে প্রশ্ন।
- কাপ বদলালে কি কফির টেষ্ট বদলায় জেইন? পাল্টা প্রশ্ন মুসার।
জেইনকে মোকাসিনো সেট করতে দেখে সাগ্রহে জিজ্ঞেস করল মুসা -
- মোকাসিনো আর ক্যাপুচিনোর মধ্যে পার্থক্যটা কি জেইন?
- একটাতে আগে দুধ পরে কফি অন্যটায় আগে কফি পরে দুধ... বলতে শুরু করল জেইন।
সত্যের পরাকাষ্ঠা মাসুমেহ নিচু গলায় চিৎকার দিয়ে উঠল -
- হেই নো, ক্যাপুচিনোয় ৩০% কফি এক্সট্রাক্টস, ৫০% টেক্সচার্ড মিল্ক...
সেরেছে, ঝগড়া বেধে যাবেনা তো আবার। জেইন সরে দাড়াতেই নিজের কফির জন্য হাত বাড়াল মুসা। কফি নিয়ে ঘুরে দাড়াতেই মাসুমেহ ছোট্ট একটা ট্রে হাতে সামনে এসে হাজির। ট্রেতে দু সারি বাংলাদেশী স্টাইল বান্, উপড়ে বাদামের গুড়ো ছড়ানো।
- কি এটা? মুসার চোখে প্রশ্ন
- এটা আমার হাতে বানানো বান্, নাও খেয়ে দেখো মুসা। মাসুমেহর মুখে মাতৃ সুলভ হাসি।
ট্রে থেকে নরম তুলতুলে একটা বান্ তুলে নিলো মুসা, তার পর চোখ কপালে তুলে বলল,
- হেই নো, এটা তো কুকি !
ভিজয় হাহা করে উঠল, জেইনের মুখে বিজয়ীর হাসি আর কাপ থেকে কফি ছলকে পড়ছে ফ্লোরে। মাসুমেহ তেড়ে আসার আগেই মুসা হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়ল প্যান্ট্রি থেকে।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন