শিবা কোসি, ইন্ডিয়া

লিখেছেন লিখেছেন হাসান আল বান্না ২১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০৬:১০ বিকাল



নিজের ডেস্কে কাজে ডুবে ছিল মুসা, ডিজাইনে কোথাও একটা ভুল রয়ে গেছে, পর পর দুবার প্রিন্ট নিয়েও ছোট ভুলটি ধরতে পারেনি ও। সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টটা আবারও প্রথম থেকে পড়া শুরু করল সে, প্রসেজিওর থেকে অপ্রয়োজনীয় কয়েকটা লাইন বাদ দিয়ে আবারও এক্সিকিউট করে দেখল, নাহ, কোন বাগ নেই, এবার রিপোর্টে আসা ফিগারগুলো এক এক করে দেখা আরম্ভ করল। এ সময় এলো ফোনটা, ডিস্প্লেডে নাম ভেসে উঠল শিবা কোসি

- হেলো শিবা, কি চাই তোমার । মুসা কণ্ঠে খানিকটা বিরক্তি ।

হালকা লাল প্রলেপ দেয়া চুলের মধ্যবয়সী ভারতীয় শিবা কোসির মুখে হাসিটা যেন সব সময় ঝুলেই থাকে। ওর কাজ অর্ডার প্রসেসিংয়ে, অফিসের সবচাইতে প্রবীণদের মধ্যে একজন শিবা, অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। অফিসে আড্ডা দিতে পছন্দ করে শিবা, মুসা খেয়াল করে, বেশিরভাগ সময় শিবার আড্ডার সঙ্গী তার বস মি: গডলি।

- একটু আসবে আমার টেবিলে?

- আসছি শিবা। ফোনটা রেখে উঠে দাড়ায় মুসা।

দাড়াতেই চোখে পড়ল নতুন মেট্রো লাইনে ঝকঝকে একটা মেট্রো, দ্রুত দুরে সরে যাচ্ছে। টেস্ট ট্রান্সমিশন হবে হয়ত। কবে জানি ষ্টেশনটা খুলে দেবে ওরা? আহ, এ শহরে সব কত দ্রুত বদলায়। পোর্টের বাইরে বেড়ুনোর নতুন গেটটা এত দ্রুত শেষ করল ওরা, ওই গেট দিয়ে বেরুলে সরাসরি বার লেনের আনকোড়া মহা সড়কে গিয়ে উঠা যায়। থার্সডে ওই গেট দিয়েই বেরুল সে - গেট ফোর। গাড়িতে জিপিএস ন্যাভিগেটর না থাকায় বার বার দেখে নিতে হচ্ছিল রোড সাইন, মহা সড়কে উঠে স্পিড লিমিট একশ চল্লিশ দেখে তো মহা খুশি। গাড়ির গতি একশ ত্রিশে উঠতেই পুড়নো সেডানটি প্রতিবাদ শুরু করল। তীব্র বাতাসে ধু ধু মরুর বালি এসে আছড়ে পড়ছে উইন্ড শিল্ডে। পেছনে ফেলে আসা গরীব মাতৃভূমিকে মনে পড়ে গেল মুসার। বহদ্দারহাট ব্রিজটা কবে শেষ করবে ওরা?

কাচের দরজা ঠেলে ঢুকতেই শিবা কোসির উজ্জ্বল চুলে চোখ পড়ল মুসার। সহাস্যে অভিবাদন জানাল শিবা -

- এস মুসা, বস, তা তোমার সময় কেমন কাটছে আজ?

- ভালই শিবা, বল কিভাবে সাহায্য করতে পারি? শুখনো হাসিতে বলল মুসা।

- এই যে দেখো তো আইস্কালার সমস্যাটা? অনেক চেষ্টা করেও আমি এখান থেকে রিপোর্টটা বের করতে পারছিনা, আজই শেষ করতে হবে কাজটা, তা না হলে পোর্টে দুটো কন্টেইনার পরে থাকবে আরও একটা দিন।

কাজ শেষে সিস্টেম থেকে মাথা তুলতেই শিবার কৃতজ্ঞতা মাখা হাসিটা দেখতে পেল মুসা।

- থ্যা......ন্কিউ মুসা, বাচালে আজ।

- ঠিক আছে ঠিক আছে, আর বলতে হবেনা । তোমার মেয়েদের খবর নিয়েছ শিবা? কেমন পড়ালেখা করছে ওরা?

আগেই জেনেছে মুসা, শিবার দু-মেয়ে থাকে ইন্ডিয়ায়, কোন আত্মীয়ার বাসায় থেকে কলেজে পড়াশুনা করছে। শিবার অফিস থেকে বেরুবোর আগে হালকা ব্যক্তিগত আলাপ মন্দ নয়।

- ওরা খুব ভাল, খুব ভাল। ওদের বাবা কদিন পরেই ওদের দেখতে যাবে। বড় মেয়েটা গ্রাজুয়েশন শেষ করবে এবছর। আমি খুব মিস করছি ওদের। ও জেসাস, দ্য গড, ওরা যেন ভাল থাকে। জেসাসই গড, তিনিই তো পারেন ওদের ভাল রাখতে, তাই না? কি বল?

শিবার কণ্ঠে কি মেয়েদের জন্য উৎকণ্ঠা নাকি ও তার প্রার্থনার সাথে মুসাকে এগ্রি করাতে চায়? কি বলা উচিৎ ভেবে পেলো না মুসা, সায় দিলে জেসাসকে গড বলে স্বীকার করা হবে আর সায় না দিলে হবে অভদ্রতা।

- তুমি নিয়মিত চার্চে যাও, তাই না শিবা? শিবার প্রশ্নটি এড়িয়ে বলল মুসা।

- হাঁ, কেন?

- নিউ টেস্টামেন্টের ফার্স্ট কমান্ডমেন্ড টা জানি কি?

- ও এই প্রশ্ন? লাভ দ্য লর্ড ইওর গড উইথ অল ইওর হার্ট এন্ড অল ইওর সোল এন্ড অল ইওর মাইন্ড। গডকে ভালবাসাই তো সবার আগে, তাই না? অমলিন হাসি দিয়ে বলল শিবা।

- না শিবা, চার্চ তোমাদের বলেছে এটাই ফার্স্ট কমান্ডমেন্ট কিন্তু তা সত্যি নয়, তা ছাড়া চার্চ তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছে, ফাদার, সান, এবং হোলি স্পিরিট এই তিনে মিলে হচ্ছেন ‘গড’ আর তোমরা তা’-ই সরল মনে মেনে নিচ্ছো । জেসাস আর গড এক বিষয় নয়।

- ফার্স্ট কমান্ডমেন্ট কোনটি মুসা? অপ্রতিরোধ্য কন্ঠে বলল শিবা।

- গসপেল অব মার্ক অধ্যায় -১২ এর ২৯ ভার্সে লেখা আছে, ‘যীশু উত্তর দিলেন, সব কমান্ডমেণ্ট এর প্রথম কমান্ডমেণ্টটি হল, শোন, ও ইসরাইল, আমাদের ঈশ্বর প্রভু একমাত্র প্রভু’।

- শান্ত ভাবটি ধরে রেখে শিবা তার ড্রয়ার থেকে কিং জেমস বাইবেলের কপিটি বের করে পড়তে শুরু করল। ধীরে ধীরে পাতা উল্টে পৌঁছুল মার্ক অধ্যায় ১২ ভার্স ২৯ এ। তারপর মুখ তুলে মুসার দিকে অমলিন হাসিটি ফিরিয়ে দিয়ে বলল, হাঁ প্রভু তো আমাদের একজনই।

- তার মানে তুমি বিশ্বাস কর আমাদের প্রভু একজনই, এবং তিনি যীশু নন, তিনি যীশুর ও প্রভু !

- দেখ মুসা, গড একজনই, এতে সন্দেহ নেই, তবে তিনি আলফা, তিনি বিটা, তিনি গামা...

- এসব কি বলছেন শিবা? যীশু-তো কখনও বলেন নি - তিনিই প্রভু, তিনিই স্রষ্টা, সুতরাং তাকেই সবার উপাসনা করা উচিত। বরং তিনি নিজেই হাঁটু গেড়ে, উপুড় হয়ে দু হাত মাটির উপর রেখে. কপাল ভূমির উপর ঠেকিয়ে একমাত্র প্রভুর উপাসনা করেছেন। কেন আপনারা যীশু যা বলেছেন তা মেনে নেন না, কেন তিনি যেভাবে উপাসনা করেছেন ঠিক সেভাবে উপাসনা করেন না?

- ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমরা আরেক দিন আলাপ করব। তুমি ভাল থেক মুসা, সি-ইউ।

নিজের ডেস্কে ফিরে এসে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল মুসা মেট্রো লাইনের ওপারে, পিঁপড়ের মত দালান গুলোর ফাঁক দিয়ে ধু ধু বালিয়াড়ির খানিকটা চোখে পড়ে, খোলা আকাশে হালকা মেঘ, এদেশে বৃষ্টি হয়না তেমন। আকাশ আর মরুভূমির দিকে তাকালেই পেছনে ফেলে আসা সবুজ শ্যামল গরীব দেশটির কথা মনে পড়ে মুসার। চোখের কোনায় কেন জানি একটুখানি পানি এসে চিক চিক করছে। সামলে নিয়ে প্রসেজিওরটার দিকে আবারও মনযোগ দিল মুসা।

নাহ, কোন বাগ নেই।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File