ধর্ষক পিতার বিচারে আইনে টিনার ডিগ্রি

লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:৪৫:৩৫ রাত



টিনা রেন্টন, সৎ-পিতার যৌন লালসার শিকার। ৩৪ বছর বয়সী টিনা নিজেকে আইনবিদ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর এখন পিতার মুখোমুখি হতে চলছেন।

মনের জেদ থেকে টিনা ইচ্ছেপোষণ করেছিল, আইনজ্ঞ হয়ে ধর্ষক সৎ-পিতাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এখন তার সামনে সে সুযোগ সুনিশ্চিত।

এই ঘটনা বৃটেনের রমফোর্ড এলাকার। বৃটেনের ডেইলি মেইল অনলাইন ছেপেছে সেই দুঃখিনী সৎ-কন্যার পিতার লালসার লোমহর্ষক কাহিনী।

টিনা রেন্টনের বয়স যখন ছয়, তখন থেকে সৎ-পিতা তাকে দিয়ে পাশবিক লালসা মিটিয়েছেন। যৌন অপরাধী সৎ-পিতার এ অপকর্ম চলেছে তার ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত। নিরবচ্ছিন্ন আটটি বছর তিনি মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর কাছে ধর্ষিত হয়েছেন। মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেননি জীবনের এই অপমানজনক কালো অধ্যায়।



বৃটেনের রমফোর্ড এলাকায় বসবাস এ পরিবারের। দরিদ্র মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হয় ধনী ডেভিড মুরের সাথে। ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে ওঠেন ওই স্বামীর ঘরে। তবে টিনার এক ভাই জনাথনের ঠাঁই হয়নি সেখানে। সে বেছে নিয়েছে রাস্তার জীবন।

রাতে সৎ-পিতা মেয়েটির ঘরে প্রবেশ করে এবং তাকে ব্যবহার করতো, কিংবা দিনে মা যখন বাইরে যেতেন। দিনের পর দিন চলেছে এ নির্যাতন। ভয়ঙ্কর এ অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন কুরে কুরে খেয়েছে টিনাকে।

এতো কম বয়স যে এ অপকাণ্ড প্রকাশের ভাষা কিংবা সাহস কোনোটাই ছিল না তার। অদ্ভুত এ অপকাণ্ডের বিপক্ষে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগও খুঁজে নেয়নি সে। এমনকি কিছু বলতে পারেনি আপন মাকেও।

একে তো নিজ জন্মদাতার ঘর থেকে বিচ্যুত হয়ে এসেছে নতুন বাবার ঘরে। অতটুকুন বয়সে কিইবা বোঝার ক্ষমতা ছিল তার! ১৪ বছর বয়সে এসে এক ক্লাসমেটের পরামর্শে মাকে ঘটনা খুলে বলার সাহস করে। সে সময় মা নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে একটা কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু জানতে দেননি স্বামীকে তিনিই এসব করছেন। এভাবে হয়তো তিনি তার ঘর রক্ষা করেছেন। আর মেয়েও আত্মরক্ষার জন্য সর্বাত্মক মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে।

সে সময় স্কুলের এক শিক্ষিকা মিসেস ওয়ালশ তাকে আত্মরক্ষার আরো কিছু কৌশল শিখিয়ে দেন। তিনি তাকে একটি হুইসেল বাঁশি দিয়ে বলেন, পিতা ডেভ যখন আবারো তার ঘরে ঢুকবে, সে যেন হুইসেল বাজায়। এমনকি তিনি নিজের ঠিকানা দিয়ে বলেছেন যে কোনো প্রয়োজনে তাকে জানাতে।

১৪ বছর বয়স থেকে সে নানা কৌশলে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে যৌন লোলুপ সৎ-পিতার হাত থেকে। মাকে বলেছিল, আবারো যদি ডেভ তার ঘরে প্রবেশ করে, তাকে হত্যা করে পালিয়ে যাবে সে।

মা সেজন্য তালা ব্যবহার করতেন। নিজের ঘরে এবং মেয়ের ঘরে নতুন দুটি তালার ব্যবস্থা করেন। আর রাতে যদি ডেভ বের হতো তিনিও বের হতেন সাথে সাথে। ডেভের আর সে সুযোগ হয়নি। তারপরও চেষ্টা করেনি যে তা নয়। কিন্তু কোনোভাবেই আর সৎ-কন্যার নাগাল পায়নি ডেভ।



কিন্তু মেয়েটি সেসব ভয়ঙ্কর স্মৃতি কখনো ভুলতে পারেনি। ভয় সর্বদা লেগে থাকতো। সেই দিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি তার জীবনকে বিঃস্বাদে ভরে দিয়েছে। স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিল তার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

এভাবে দুঃসহ স্মৃতির বোঝা বয়ে নিয়ে চলেছে জীবন। কিন্তু কোন পথ পায়নি তা থেকে উত্তরণের। এক সময় এক শুভার্থীর পরামর্শে তিনি আইনের প্রাথমিক কোর্স করার সুযোগ পান।

তার মধ্যে ছোটকাল থেকেই আইন নিয়ে পড়াশুনার আগ্রহ ছিল। এবার সে সুযোগ হাতে এসে গেল। এরপর ২০০৬ সালের অক্টোবরে এসে লণ্ডনের নিকটবর্তী এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’ ডিগ্রি নিতে পড়াশুনা শুরু করেন টিনা।

টিনা এবার নিজেকে খুঁজে পেলেন। তিনি বলছেন, ‘আমি আমার কণ্ঠস্বর পেলাম। আমার মধ্যে যা আছে তাকে উপলব্ধি করলাম। আর চূড়ান্তভাবে আমি পেলাম বেশ কিছু প্রাণবন্ত বন্ধুবান্ধব।’

অতি সম্প্রতি আইনের ডিগ্রি সম্পন্ন হয়েছে টিনার। তার পড়াশুনা সমাপ্ত। এবার তিনি একজন ল’ইয়ার। তার চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। মাকে উদ্দেশ্য করে টিনা রেন্টন বলছেন, ‘তুমি কাঁদো। এবার তোমার স্বামীকে আমি কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। আমার শৈশব-কৈশোরের শান্তি কেড়ে নেয়ার জন্য। আমার স্বাভাবিক জীবন বিনষ্ট করার দায়ে আমি তাকে দণ্ডিত করব।’

জীবনের আটটি বছর কেড়ে নেয়ার জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন করব। আট বছরের ঘানি বয়ে চলেছি আমি আরো কতগুলো বছর! আমার জীবনের স্বচ্ছন্দ চপলতার, আমার আনন্দ ও স্ফূতির সেই দিনগুলো কিভাবে ফিরিয়ে দেবে ডেভ মূর?

‘যৌন অপরাধী আমার সেই সৎ-পিতার অপকর্মের চূড়ান্ত প্রতিফলই এখন আমার দেখার বিষয়।’- যোগ করেন নিজের ছায়ার সঙ্গে নিজে কথা বলে চলা আপ্লুত টিনা রেন্টন।

বিষয়: বিবিধ

১১১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File