লোভ...
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২৮ মে, ২০১৫, ০১:৪৭:৪৫ রাত
কতসালের কথা এ মুহুর্তে মনে করতে পারছি না তবে যা দেখেছি তা ঠিক এখনও স্পষ্ট মনে আছে। কলকাতার একটি বাংলা মুভিতে দেখেছিলাম। সরকারি চাকুরিতে ইস্তফা দেওয়া এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক পাড়ার বাজার থেকে তরিতরকারি সওদা করে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলেন।
পথ চলতে চলতে এক সময় রাস্তায় একটি কাচা পয়সা পড়ে থাকতে দেখেন। ভদ্রলোক পয়সাটি দেখে লোভ ধরে যায়। পয়সাটি তাকে নিতেই হবে। তিনি ভুলে যান তার সামাজিক সন্মানের কথা।
চারপাশে তাকিয়ে নিশ্চিত হন কেউ নেই আশপাশে। কাউকে দেখতে না পেয়ে ঝুকেঁ পয়সাটি নিতে যান। কিন্তু বিধিবাম। সহজে পয়সাটি নিতে পারলেন না। এবার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটি পাশে রেখে পয়সাটি তুলতে যান, তাও বিফল হন।
অনেক টানাটানির পরও যখন পয়সাটি তুলতে পারছেন না তখন তিনি বুঝতে পারেন যে পয়সাটি আসলে পিচের সঙ্গে লাগানো।
এবার তিনি পকেট থেকে আরো একটি কয়েন বের করে সেটাকে খুচিয়ে তুলতে যান। তাতেও বিফল হন। এবার তিনি বসে যান পয়সাটি তুলতে। অনেক চেষ্টা করেন তা তুলতে। পয়সাটি তুলতে এবার রীতিমত যুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি।
তিনি ভুলে যান তার ব্যাগে বাসার জন্য কেনা কাঁচা তরকারি রয়েছে। বাসায় গিন্নি অপেক্ষা করছে কখন তিনি বাসায় ফিরবেন মাছ নিয়ে। তারপর তা কেটে রান্না করা হবে।
এক সময় তার হাতের ধাক্কা লেগে ব্যাগটি একপাশে পড়ে যায়। পুরো রাস্তা জুড়ে ব্যাগে থাকা আলু, পটল, টমেটো ইত্যাদি ছড়িয়ে একাকার হয়ে যায়। এবার তিনি সম্বিৎ ফিরে পান। চিন্তা করে দেখেন আরে এটা মাত্র ৫০ পয়সার একটা আধুলি। আমি কি করলাম। এখন তো আমার একশ টাকার তরিতরকারি রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা পয়সাটিকে রাস্তায় শক্ত আঠা দিয়ে গেঁথে রেখেছিল। আর একটু দুরে আড়ালে দাড়িয়ে তারা মজা দেখছিল।
ভদ্রলোক এবার পয়সা ছেড়ে তার বাজারের ব্যাগ ঘুছিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। এবং যথারীতি গিন্নির বকুনি কপালে জুটল দেরি করে ফেরা, রান্নায় দেরি এবং মাছে নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য।
এবার আসি আসল ঘটনায়- বাড়ি যাব ঠিক করে ছিলাম ভোরেই কিন্তু অনেক রাত জাগার ফলে সকালে দেরি করে ঘুম ভাঙ্গল। তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেস হয়ে কোন রকমে নাস্তা সেরে বের হয়ে গেলাম।
সায়েদাবাদ এসে পদ্মার (ঢাকা-চাঁদপুরের বাস) টিকেট কেটে বাস ছাড়ার অপেক্ষা করছিলাম। বাস ছাড়তে দেরি দেখে নেমে পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। একটু দুরে দেখলাম এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে একলোক কিসের জন্য যেন কাকুতি মিনতি করছিল।
সংবাদকর্মী হওয়ায় ব্যাপার টা কি জানতে ইচ্ছে হল। পুলিশের কাছে যাওয়ার আগেই দোকানদার বলল- মামা, ঐ লোকটা একজন রিক্সাওয়ালা। ২ ঘন্টা হলো পুলিশের পেছনে ঘুরছে তার রিক্সাটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
কৌতুহল বসত জানতে চাইলাম- কেন তার রিক্সা আটকাল পুলিশ...? দোকানদার বলল- রিক্সা চালানোর সময় সে রাস্তার পাশে ফ্লাইওভারের জন্য রাখা দুটি পাকা গার্ডারের মাঝখানে একটি সোনালী কালারের কয়েন পড়ে থাকতে দেখে তার মনে হল তা সোনার কয়েন।
সঙ্গে সঙ্গে তুলতে গেলে সহজে তুলতে পারছিল না। পরে রিক্সাটিকে রাস্তার পাশে রেখে পয়সাটি আনতে যায়। অনেক সময় পেরিয়ে গেলে তা তুলতে পারছিল না। অন্যদিকে সে রিক্সার কথা বেমালুম ভুলে যায়।
অনেক কষ্টে খুচিয়ে খুচিয়ে পয়সাটি তুলে এনে রিক্সার কাছে আসলে দেখে তার রিক্সাটি নেই। পুলিশ তার রিক্সাটি আটকে রেখেছে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল বলে।
সোনার কয়েনের ব্যাপারে দোকানদার বলল- ওটা সোনার কয়েন ছিল না। ওটা ছিল সোনালী কালারের নকল পয়সা।
হায়রে মানুষ কিসের এত লোভ... এই অর্থের জন্যই আজ এত হানাহানি। কতটা অর্থ প্রয়োজন আমাদের। কতটা হলে আমরা বলব আমার যথেষ্ট হয়েছে আর না। আমাদের যা আছে তারপরও আরো চাই, আরো চাই, আরো চাই। চাওয়ার যেন শেষ নেই। জীবন চলে গেলেও অর্থ আমার চাই-ই চাই।
১.৩০ (দুপুর)
২২.০৫.১৪
বাসে (পদ্মা) বসে লেখা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার শিক্ষনীয় ঘটনা!
এভাবেই প্রবাদ এসেছে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট!
শুকরিয়া!
লোভ নয়, কোন ব্যাপারে আপনি চাহিদা পোষণ করতে পারেন।
সবাই লোভী, কেউ বড় কিছুর লোভ করে, কেউ বা অল্প ছোট কিছুর......। লোভ সংযত রাখা আসলে অনেক কঠিন কাজ................
মন্তব্য করতে লগইন করুন