মনিকা- ১
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২৬ মে, ২০১৫, ০৫:৪০:১৩ বিকাল
ফার্মগেট এ রাস্তার পাশের দোকান থেকে নেইল কার্টার কিনছিলো রিয়াদ। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো ইয়োলো কালারেরটা নিন। ওই কালারটা আপনার পছন্দের। পাশে তাকিয়ে ভূত দেখার মত চমকে উঠলো রিয়াদ।
--একি মনিকা! তুমি! কেমন আছো?
--দেখতেই পাচ্ছো কেমন আছি। আমেরিকায় স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করছি।
রিয়াদ স্মৃতির পাতায় খুজতে থাকে ৫ বছর আগের হারানো দিন গুলোকে।
রোজা রেখেছেন? হঠাৎ করেই ফেইসবুকের চ্যাট উইন্ডোতে একটি ম্যাসেজ আসলো। যোহরের নামাজের পর কম্পিউটারে বসে কাজ করছিল রিয়াদ।
--এক কথায় উত্তর, হ্যাঁ।
--কি করছেন? কাজ করছি।
দীর্ঘ সময় বিরতির পর আবারও ম্যাসেজ,
--আপনি কি খুব বেশি ব্যস্ত? আমাকে কি একটু সময় দেওয়া যাবে? একটু কথা বলতে চাইছি?
রিয়াদের সহজ উত্তর,
--বলে ফেলুন আমি শুনছি।
--আজ কি দিয়ে ইফতার করবেন?
--এইতো ছোলা, মুড়ি, বড়া, চপ, বেগুনি, শরবত, আপেল, সালাদ এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় হালিম।
--আপনার প্রোফাইলের ছবিগুলো দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে। বেড়াতে পছন্দ করেন বুঝি? আমার ও বেড়াতে ভালো লাগে। কিন্তু যেতে পারিনা, ঢাকায় একা থাকি এজন্যে।
মনিকা হোস্টেলে থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পড়ছে। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। পড়াশুনার জন্য ঢাকায় আসা। বাবা এবং ভাইয়ারা সিরাজগঞ্জ শহরেই ব্যবসা করেন।
এরপর দিনের বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় হতো ফেইসবুকে কথা বলে। তাতে বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক কথাই প্রাধান্য পেত।
এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে সারাদিন রিয়াদ কি করলো কোথায় গেল দুপুরে খেয়েছে কিনা, জামা কাপড়গুলো পরিস্কার আছে কিনা ইত্যাদিসহ নানা খোজ খবর। ফেইসবুকে রিয়াদের পোস্টগুলোর মন্তব্যকারীদের মন্তব্য সম্পর্কে কথা বলা। এভাবে স্বপ্ন দেখেই দিন চলছিল।
একদিন সাহস করে রিয়াদ বলল ফোনে কথা বলতে চাই, জানালো তার ফোন নেই। বিশ্বাস করতে পারছিল না রিয়াদ, এখনকার সময়ে কেউ ফোন ব্যবহার না করে থাকতে পারে।
অনেক বলার পর মনিকা একটি মোবাইল ফোন কিনলো। প্রথমবার কল করে কথা না বলেই লাইন কেটে দিল। পরে আবার ফোন দিল। কথা বলা শুরু করলো রিয়াদ। যেই ফোনের নাম্বার শুধুমাত্র রিয়াদ ছাড়া আর কেউ জানতো না।
এরপর চলতে থাকলো আনলিমিটেড কথা বলা। রাত শেষ হয়ে যেত কিন্তু কথা বলা শেষ হতো না। মনিকা একসাথে ২ হাজার টাকা ফোনে লোড করতো।
রাত জেগে কথা বলাটা নেশায় পরিনত হলো। রিয়াদ অবাক হয়ে যেত সারারাত কথা বলার পর কিভাবে ও সকালে ভার্সিটিতে ক্লাস করে।
রাত জাগার সাথে রিয়াদ ছিল অপরিচিত। ঘুমের সাথে রিয়াদ কোন কিছুর বিনিময় করতে পারতো। তারপরও বাধ্য হত কথা বলতে।
অনেক বুঝানোর পর রিয়াদ একটু সময় পেত ঘুমানোর। ক্লাস দুপুরে হওয়ায় ১১টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারতো রিয়াদ।
একদিন দেখা করতে চাইলো রিয়াদ। জানালো তাকে দেখার পর ভালো নাও লাগতে পারে, এর চেয়ে ফেইসবুকে এবং ফোনে কথা বলছি তাই কি ভালো নয় কি? তার কথায় দমে গেল রিয়াদ।
পরে তাকে দেখার আশায় রিয়াদ বলল, এই শুন আমাকে একদিন ইফতার করাবে?
--সাথে সাথে উত্তর, কেন নয়? কবে ইফতার করবে বল?
--কাল খুব একটা কাজ নেই, কাল হতে পারে।
--ঠিক পাঁচটায় শাহবাগ থাকবে, আমি চলে আসবো।
এতগুলো দিন যার সাথে কথা বলেছে রিয়াদ আজ তাকে দেখতে পাবে ভাবতেই বুকটা দুরু দুরু করছিল।
পরদিন ইফতারের এক ঘন্টা আগেই রিয়াদ চলে গেল জাদুঘরের সামনে। প্রায় পনের মিনিট পর একটি মেয়ে রিক্সা থেকে নেমে বলল...
--স্যরি, অনেক দেরি করে ফেললাম। তাড়াতাড়ি চলো ইফতারের সময় হয়ে গেছে।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে বসে দুজন ইফতার করলাম।
ইফতারের বিলটা রিয়াদ দেয়াতে মাইন্ড করলো মনিকা।
--ইফতার করানোর কথা ছিল আমার, তুমি কেন টাকা দিলে। এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। সেই শাস্তি হলো কোনদিন তার সামনে মানিব্যাগ বের করতে পারবো না।
--সে পরে দেখা যাবে।
সেদিন অনেক সময় ঘুরল দুজনে। কথা হলো দুজনে সুযোগ পেলেই বেড়াতে যাব।
এরপরে শুধু হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো। যে সময়ের রঙ্গীন স্মৃতিগুলো স্মরনীয় হয়ে আছে রিয়াদের জীবনে।
প্রতিদিন বিকেলে সংসদ ভবন, টিএসসি, রমনা, সোহরাওয়ার্দীতে আড্ডা দেওয়া ও প্রতিমাসে একবার দেশের দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যাওয়া।
বলাকা, স্টার সিনেপ্লেক্সে ভালো কোন মুভি আসলে সেটা দেখতে যাওয়া। লিস্ট করে ঢাকার নামকরা হোটেল ও চাইনিজগুলোতে পর্যায়ক্রমে খাওয়া। এমনকি রিয়াদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য কোন কিছুই রিয়াদ কিনতে পারতো না।
কোন কিছু শেষ হওয়ার আগেই সেটা কিনে দিয়ে চমকে দিত মনিকা।
এটা নিয়ে প্রায়ই রিয়াদের সাথে তার ঝগড়া হতো। সে বলতো একদিন তুমি অনেক বড় হবে সেদিন আমাকে সুখি করো।
একদিন বায়না ধরলো সিলেট শাহজালাল মাজার, জাফলং, তামাবিল, এমসি কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাবে।
চলবে..
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন