এককাপ চা...
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২৬ মে, ২০১৫, ১২:০৯:১০ রাত
(যে ভাবে আসলো চা পাতা)
পাঁচ হাজার বছর আগের কথা। চীনের তৎকালীন সম্রাট শেননং ছিলেন দৃষ্টিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনষ্ক। পানি ফুটিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী বলে তিনি পানি ফুটিয়ে খেতেন।
গ্রীষ্মের কোন এক দিনে রাজ্য পরিদর্শনে বের হন সম্রাট। পথিমধ্যে একটু বিশ্রাম নিতে থামল সবাই। সম্রাটের নির্দেশ অনুসারে খাওয়ার পানি ফোটানোর ব্যবস্থা করা হল। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় পাশের ঝোপ থেকে কিছু শুকনো পাতা উড়ে এল। পড়বি তো পড় পানিতে। কী আজব! নিমেষেই পানির রং পাল্টে বাদামী।
এই দেখে সম্রাট সেই পাতার নির্যাস পানে আগ্রহী হলেন। আর পান করার পর তিনি পেলেন নতুন কিছু, দেহমন চাঙা হয়ে উঠল তার। চারদিকে রটে গেল খোঁজ খোঁজ রব। কোন গাছের পাতার এমন জাদুকরী ক্ষমতা আছে তা জানতেই হবে সম্রাটকে।
সেদিনের উদ্ধারকৃত উদ্ভিদটিই আজকের চা গাছ, টি লিভস। টি-এর নামকরণ গ্রিক দেবী থিয়ার নামানুসারে। বিজ্ঞানীদের দেয়া নাম ‘ক্যামেলিয়া সাইনেসিস’।
(দেশে চা-য়ের শুরু)
১৯২০ ও ৩০ এর দশকে চা-কে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচলনের জন্য অনেক কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে ব্রিটিশদের। এজন্যে প্রথমে তারা নামমাত্র মূল্যে (একরকম প্রায় বিনামূল্যেই) চা সরবরাহ শুরু করে। পরবর্তীতে ‘অসম চা কোম্পানি’ নামে কোম্পানি গঠন করে ব্রিটিশরা। শুরু হয় জোর বিজ্ঞাপনী প্রচারণা। চা মার্কেটিংয়ের জন্য বিনে পয়সায় রেল স্টেশন, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জনসমাগম মূলক এলাকায় খোলা হয় চায়ের ক্যান্টিন।
নেশা দূর করার উপায় চা, মদ্যপান নিবারণের প্রধান অস্ত্রই চা পান, এই কথা সবখানে ছড়িয়ে দিল টি সেলস কমিটি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল একটা মাত্র পোস্টার- বাঙালি বউ গরম চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, পাশে ঝকমক করছে দিনের বাণী- ‘যাহাতে নাহিক মাদকতা দোষ, কিন্তু পানে করে চিত্ত পরিতোষ।’
(চা-য়ের একাল)
সকালের নাশতায় চা না থাকলে তা যেন পূর্ণতা পায় না। টিএসসির দেয়াল ঘেঁষে চায়ের টং দোকান গুলো কালের সাক্ষী হয়ে আজও আছে। উত্তাল মিছিল মিটিংয়ের শেষে এক পশলা প্রশান্তি কিংবা খানিক ঘৃতাহুতি এনে দিতে পারে এককাপ চা। বহু রাজনৈতিক নেতা এই টিএসসির চা পান করে আজ দেশের নীতিনির্ধারণী হয়েছেন।
(চা এবং আমি)
ছোট বেলায় নাস্তা কিংবা অন্যান্য খাবারের পর বড়রা চা পান করতো আর আমরা ছোটরা চেয়ে চেয়ে দেখতাম। এছাড়া যে আর কিছুই করার ছিল না আমাদের।
ছোটদের চা পান করায় বারণ আছে। কে করেছে কি জন্য করেছে তা জানিনা। জানার চেষ্টাও করিনি কখনও।
তবে মনে আছে বাবা একদিন বলেছিল, ছোটরা চা পান করলে দাঁত নষ্ট হয়ে যায়, পড়ালেখায় মনোযোগী হয় না ইত্যাদিসহ নানান সমস্যা। সবচেয়ে বড় কথা বড়দের সামনে চা-পান করাটা নাকি অভদ্রতা।
সে সময় খুব আক্ষেপ করতাম, ‘কখন বড় হব, আর চা-পান করতে পারবো’।
বছর তিনেক হলো সাংবাদিকতায় এসেছি। এখানে এমন কিছু বড় ভাই আর আপুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে যারা এক ঘন্টার বসাতে ৪/৫ কাপ চা পান করেন।
বড় ভাইদের চাপে কিংবা ছোটবেলায় পা-পান করতে না পারার বেদনায় আমিও একাধিক কাপ চা-পান করি কখনও কখনও।
এমনই কয়েকজন বড় ভাই এবং আপু আছেন যাদের ডাকে এককাপ চা পান করতে ২০/৩৫ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে চলে যাই শাহবাগ, টিএসসি, বেইলিরোড কিংবা কারওয়ান বাজারে। মাঝে মাঝে আমার ডাকেও তারা আসেন।
এমনই এক বড় ভাই এবং আপু আছেন যারা প্রায় প্রতিদিন একবার হলেও ফোন করে বলবেন, ...‘কই তুমি, চলে আস উমুক জায়গায়’।
একজন আরেকজনকে এমন ভাবে ফোনে ডাকবে যে, মনে হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে এখনি চলে আস। আসলে কাজ কিছুই নয়। সবাই মিলে এককাপ চা পান।
মাঝে মাঝে গেলেও বেশির ভাগ সময়ই যেতে পারি না। তবে তাদেরকে খুব অনুনয় বিনয় করে বলি, ভাইয়া/আপু আজ আসতে পারছি না। কাল আসবো। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যেন ‘চা-সূত্রে ভাই ভাই’। (সঙ্গত কারণে কারো নাম উল্লেখ করলাম না)।
এখন ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ে। সেই সঙ্গে মনে হয়, তাহলে কি আমি বড় হয়েছি...? আমাকে চা পান করতে বড়রা ডাকে।
ঢাকা
০৫.১১.১৩
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চা খাবেন তো ৫ টাকা দিয়ে বাসে শাহবাগে যাবেন।
এতে শরীরও গরম হবে সাথে কিছু টাকাও বাজবে আবার গরম শরীরে গরম চাও মিলবে ^^ ^^ ^^ ^^
আমি তো শুধু গরমের সাথে গরম মিশাতে চেয়েছি <:-P <:-P <:-P <:-P
অনেক ধন্যবাদ
বাংলাদেশে মুরুব্বিগিরি করার এত বেশি নিয়মকানুন আছে যে এই দেশে মুরুব্বিদের প্রতি শ্রদ্ধা হারান অতি স্বাভাবিক বলে মনে হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন