পদ্মা বাস সার্ভিস
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২৩ মে, ২০১৫, ০৯:৫৫:৫৬ রাত
সকালে জরুরি প্রয়োজনে সায়েদাবাদ বাস ষ্ট্যান্ডের পদ্মা কাউন্টারে ঢুকতেই একজন বলে উঠল কেমন আছেন। অনেক দিন দেখি না আপনাকে। বাড়ি যান না? লোকটিকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু হঠাৎ করেই মনে করতে পারছিলাম না কোথায় দেখেছি।
কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বললাম ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন। প্রায়ই তো বাড়ি যাই। কেন কি হয়েছে? জবাবে লোকটি বলল, না অনেকদিন দেখি না তো, তাই।
তাও মনে করতে পারছিলাম না কোথায় দেখেছি তাকে।
স্মৃতির পাতা হাতড়ে হঠাৎ মনে পড়ল এই লোকটি পদ্মা বাসে যাত্রীদের মালামাল উঠানোর কাজ করে বিনিময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে যা পান তা দিয়েই দিনাতিপাত করেন।
একটু পর কাউন্টারের ম্যানেজার ও বলল, ভাই আসেন না যে এদিকে। বাড়ি যান না বুঝি? বললাম, না ভাই বাড়িতে যাই, তবে অন্যভাবে যাই।
কাউন্টারে একটু বসলাম। বসতেই অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল।
পড়াশুনার উদ্দেশ্যে প্রথম ঢাকায় আসি ১৯৯৭ সালে। সে সময় ঢাকা চাঁদপুর রূটে বিখ্যাত পরিবহন ছিল বিলাস সার্ভিস। এছাড়া মেঘনা সার্ভিসসহ আরো কয়েকটি নাম না জানা পরিবহন।
মনে পড়ে আমাদের স্টপিজ (দোয়াভাঙ্গা) থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। বাসে উঠার পর ঝালমুড়ি, চানাচুর, বাদাম, কমলা, ক্ষিরা, বরই ইত্যাদি খেতে খেতে ঢাকা চলে আসতাম।
তারপর আমাদের এই রূটে যোগ হলো লক্ষীপুরের আল-আরাফাহ বাস সার্ভিস। এ সার্ভিসটিতে লক্ষীপুরের চেয়ে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীরাই বেশি যাতায়াত করত।
তারও কিছু দিন পরে আসে এই পদ্মা সার্ভিসটি। যাত্রার শুরু থেকেই এ পরিবহনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে যাত্রী সেবার মানের জন্য।
মনে পড়ে, সে সময় বাড়ি পৌঁছার পর সবাই জিজ্ঞেস করতো কিসে এসেছ পদ্মাতে তো?
আরো মনে পড়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য এ বাসের টিকিট পেতে কতটা সময় অপেক্ষা করেছি। ঈদের সময় তো কথাই নেই। ভোররাতে গিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাড়াতাম। অত:পর টিকিট হাতে পেলে মনে হত সোনার হরিণ পেয়েছি।
এমন ও হয়েছে, যে বাসের টিকিট কিনেছি সেটার আগে বিক্রি হওয়া টিকিটের আরো দশটি বাস এখনও আসেনি। অপেক্ষার পালা আর কাকে বলে।
অবশেষে কাঙ্খিত বাস আসতো ১১ টা কিংবা ১২ টার দিকে। এছাড়া রাস্তার জ্যাম তো আছেই। একবার ভোররাতে রওয়ানা হয়ে পথে জ্যামে পড়ে বাড়ি পৌঁছতে হয়েছে রাত ২টায়।
২০১১ সালে ভাইয়া গাড়ি কেনার পর থেকে আর বাড়ি যাওয়া হয়নি পাবলিক পরিবহনে করে। তাই সায়েদাবাদের এসব ভিড়, পদ্মা পরিবহনের কর্মকর্তা কর্মচারি, পেপারওয়ালা এমনকি সবসময় সেখানে থাকা ভিক্ষুকদের আর চোখে পড়ে না কিংবা তাদের সঙ্গে আর দেখা হয় না।
বাসার সামনে থেকে গাড়িতে উঠে মাঝখানে একটু গ্যাস নেওয়ার জন্য বিরতি, তারপর সোজা ঘরের দরজায় গাড়ি থেকে নামা। কি যান্ত্রিক জীবন।
আজ তাদের খুব মনে পড়ছে। মিস করছি তাদেরকে। শুভ কামনা রইল ঢাকা চাঁদপুর রূটের পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি।
০৮.০৩.১৪
বিষয়: বিবিধ
১৮৫০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন