জীবনের গল্প- ১ টেকা মাইরা যাইব কই, ঐপারে তো পাবো...?
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২২ মে, ২০১৫, ১০:১৬:৪১ সকাল
অফিস থেকে ফেরার পথে বেশিরভাগ সময় রেললাইন ধরে হেটে বাসায় ফিরতাম। রেললাইন ধরে হাটলে আমার মন আপনাতেই ভাল হয়ে যায়। এর একটি সংগত কারন অবশ্য আছে।
রেললাইন ধরে হাটতে গিয়ে একটা দৃশ্য প্রতিদিন দেখতাম।
পঞ্চাশোর্ধ একজন (শারীরিক প্রতিবন্ধী, ডান পা অস্বাভাবাবিক ছোট) মহিলা একটি হোটেলে খদ্দেরদের খাবার পরিবেশন করছেন।
আবার তিনি নিজেই টেবিল পরিস্কার করা, বিল নেওয়া ইত্যাদিও তদারকি করছেন। যেখানে সুস্থ সবল অনেককেই দেখি জগ থেকে পানিটুকু ঢেলেও খান না।
চাকুরি ছেড়েছি আজ দুমাসে পড়লো। অবসরের এ সময়টা শুয়ে বসে আর বেড়িয়ে পার করছি।
আজও সেই পথ ধরে হাটছিলাম। হঠাৎ মনে হল এখানে খাব। তা যতই অখাদ্য হোক। অনেকেই তো খেয়ে বের হচ্ছে কিন্তু খাবার খারাপের কোন অভিযোগ তো দেখা যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে।
খেয়ে বুঝলাম- খাবারটা অখাদ্য নয় বরং তৃপ্তি মিটিয়েই খেলাম। বিল জানতে চাইলে তিনি বললেন- বাবা আমি হিসাব জানি না। তুমি কি কি খাইছো তা বল আমি সেগুলোর দাম বলছি।
তাকে বললাম- খালা এভাবে ব্যবসা করবেন কিভাবে। মানুষ তো আপনাকে টাকা কম দিয়ে ঠকাবে। তিনি এর জবাবে যা বললেন তা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম।
তিনি বললেন- 'হিসাব জানি না বইল্যা কেউ আমার টাকা মাইরা খাইলে তো সমস্যা নাই, আমার এ টেকা ঐপারের জন্য জমা থাকব।'
পেয়ারা বেগম। বয়স ৬৫। শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু এ সমস্যা তাকে দমাতে পারেনি জীবিকা নির্বাহের জন্য।
তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। জানালেন তারা সুখেই আছেন। এক ছেলে স্বল্প বেতনের চাকুরি করে।
তিনি জানালেন- আগে তোমার খালু হোটেলটি চালাতো। তার বয়স ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন থেকে পায়ের সমস্যায় ভুগছেন। হাটতেও পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমিই এখন হোটেলটি চালাই।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন- আমার মত এমন সমস্যা বা তার চেয়েও অনেক সুস্থ-সবলরা ভিক্ষা করে। কিন্তু আমি ভিক্ষা করা অপছন্দ করি বলেই কষ্ট করে এ হোটেলটি চালাই। অনেক সাহেবরা আমার এখানে খাবার খান। প্রসংসাও করেন আমার রান্নার।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি একদিকে প্রতিবন্ধী অন্যদিকে বয়স্ক। কিন্তু তা স্বত্বে কোন ধরনের সরকারি ভাতা পাই না। আর কত বয়স হলে সরকারি ভাতা পাবো...?
বিষয়: বিবিধ
১৩১৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর লেখাটা ভাল হয়েছে। আলহামদুল্লিলাহ। আমার ভাল লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন