ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ধ্বংসে রেকর্ড গড়েছেন যে বাংলাদেশি
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২১ মে, ২০১৫, ০২:৩৫:৪৯ রাত
সাইফুল আযম। সমরবিদদের দেয়া নাম ‘লিভিং ঈগল’। বন্ধুরা ডাকেন ‘টপ গান’ নামে। বিশ্বের বিমান বাহিনীগুলোর কাছে নামটি এখনো এক বিস্ময়। নিখুঁত নিশানার জন্য শত্রু বিমান আর বৈমানিকের কাছে তিনি সাক্ষাৎ যম।
বিস্ময়কর এই ব্যক্তিত্ব চারটি দেশের বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনটি দেশের হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। দুটি দেশের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এই বৈমানিক সর্বাধিক ইসরাইলি বিমান ধ্বংসের রেকর্ডেরও মালিক।
এই জীবন্ত কিংবদন্তির জন্ম ১৯৪১ সালে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সাগরবাড়িয়াতে। বাবার কর্মসূত্রে চলে যান কলকতায়। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসে তার পরিবার। সেখানে থেকে ১৯৫৫ সালে পাড়ি জমান তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে।
এর পর ১৯৫৮ সালে স্কুল শিক্ষা শেষ করে যোগ দেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ক্যাডেট কলেজে। সফলভাবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে ১৯৬০ পাইলট অফিসার হিসেবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কমিশন পান। এছাড়া ১৯৬৩ সালে অ্যারিজোনার লিউক বিমান ঘাঁটিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ অর্জন করেন তিনি।
সাইফুল আযমের বীরত্বগাঁঁথার শুরু ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ দিয়ে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সারগোদা ঘাঁটি থেকে ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে আযম সাবরে জেট নিয়ে উড্ডয়ন করেন। সফল স্থল হামলা করে ফেরার পথে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফোল্যান্ড নেট যুদ্ধবিমানের বাধার মুখে পড়ে আযমের গ্রুপ। এ সময় ভারতীয় দুটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে একটির ফ্লাইট অফিসার মহাদেবকে ভূপাতিত করেন আযম।
এজন্য তাকে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা সিতারা-ই-জুরত এ ভূষিত করা হয়। এছাড়া পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ২ নম্বর স্কোয়াড্রনের অধিনায়ক হিসেবেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
এরপর ১৯৬৬ সালে আযমকে জর্দান বিমান বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে ডেপুটেশনে পাঠায় পাকিস্তান। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হলে জর্দান বিমান বাহিনীর ১ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে হকার হান্টার নিয়ে আকাশে উড়েন এই দুরন্ত ঈগল।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল আযমকে ইসরাইলের সুপার মিসটেরে যুদ্ধবিমান থেকে জর্দানের মূল ঘাঁটি মাফরাক রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৫ জুন আযম তার হকার হান্টার দিয়ে ইসরাইলের একটি বিমান তাৎক্ষণিক বিধ্বস্ত করেন এবং গুলিতে আরেকটিতে আগুন ধরে গেলে সেটি সীমান্তে ইসরাইলি ভূ-খণ্ডে গিয়ে পড়ে।
ইসরাইলি হামলা ঠেকাতে পরদিন তাকে দ্রুত ইরাকি বিমান বাহিনীতে পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৎকালীন সবচেয়ে আধুনিক দুটি মিরাজ যুদ্ধবিমানের পাহারায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর চারটি ভাতোর বোম্বার পশ্চিম ইরাকের বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
এবারও ইরাকি হান্টার নিয়ে প্রতিরোধে নামেন এই অকুতোভয় বৈমানিক। ইসরাইলি একটি মিরাজের পাইলট ক্যাপ্টেন গিদিয়োন দ্রোর আযমের উইংম্যানসহ দুটি ইরাকি যুদ্ধবিমান ভূ-পাতিত করে। কিন্তু আযমের পাল্টা হামলায় দ্রোর ধরাশায়ী হন।
এছাড়া ক্যাপ্টেন গোলানের ভাতোর বোম্বারও ভূ-পাতিত করেন আযম। দুজনকে বন্দি করে ইরাকি সেনারা এবং তাদের বিনিময়ে পরবর্তীতে ইসরাইলের হাতে আটক কয়েক হাজার ইরাকি ও জর্দানি সেনাকে মুক্ত করা হয়। আযম ৭২ ঘণ্টায় চারটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেন।
এই বীরত্ব ও অসীম সাহসিকতারর জন্য সাইফুল আযম জর্দানের অর্ডার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স এবং ইরাকের নাত আল-সুজাত সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়া ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর দেয়া এক সম্মাননায় তাকে বিশ্বের ‘২২ জীবিত ঈগলের (ওয়ান অব দি টুয়েন্টে টু লিভিং ঈগলস)’ একজনে ভূষিত করা হয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিভৃতচারী এই বীরের কীর্তিগাথাও অনেকটা অজানা এ দেশের মানুষের কাছে। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মতিউর রহমানের পাকিস্তানি বিমান ছিনতাইয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে থাকা এই বীর কয়েকজন বাঙালি সহকর্মীকে নিয়ে দেশটির বেশ কয়েকটি বোয়িং বিমান এবং যুদ্ধবিমান ছিনতাই ও ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন। শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে মুখোমুখি হন কোর্ট মার্শালের। প্রায় ২১ দিন নির্জন সেলে কেটেছে মৃত্যুর ভয়ে।
তবে পাক-ভারত এবং আরব-ইসরাইল যুদ্ধের বীরত্বের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও নজরদারিতে থাকা আযমকে বিমান বাহিনী কার্যক্রমে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে ঢাকায় বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে যোগ দেন এই বৈমানিক। ১৯৭৭ সালে তাকে ঢাকা বিমান ঘাঁটির অধিনায়ক করা হয় এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। সর্বশেষ ১৯৭৯ সালে অবসরে গেলেও বেসামরিক পরিবহন বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে দুদফা দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এরপর ১৯৯১-৯৫ মেয়াদে বিএনপির হয়ে পাবনা-৩ (চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া) আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুল আযম। বর্তমানে স্ত্রী নিশাত আর তিন সন্তান নিয়ে নিজেদের ব্যবসার দেখভাল করছেন তিনি।
নিউজ লিংক
http://www.rtnn.net/bangla/newsprint/page/88927
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৩৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
উনাকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম।http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/3609/sabuj1981/37326#.VV3dt9Kqqko
মন্তব্য করতে লগইন করুন