ভালবাসা লোকাল বাসে...
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ১৯ মে, ২০১৫, ০৮:২৪:৪৫ রাত
অনেকদিন আগে ঢাকায় ‘নিরাপদ পরিবহন’ নামে এসি বাস সার্ভিস ছিল। সে বাসের জানালায় পর্দা লাগানো ছিল। সম্ভবত বাসটি গুলিস্তান উত্তরা রূটে চলাচল করতো। সে সার্ভিসের অধিকাংশ যাত্রীই ছিল তরুণ-তরুণী। এর কারণ প্রথম প্রথম জানা না গেলেও পরে তা উদঘাটিত হয়।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিরাপদ বাস সার্ভিসে নিরাপদে ডেটিং করতো। তাতে তাদের ভালই চলছিল। কিন্তু কেন যে এ সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায় তা জানতে পারলাম না।
কিন্তু এ সার্ভিসে তো আয় কম হওয়ার কথা না। প্রেমিক-প্রেমিকারা তো আর বাস ভাড়া কম দিত না, নাকি স্টুডেন্ট হিসেবে হাফ ভাড়া দিত; আল্লাহ মালুম।
ভ্যালেন্টাইন পশ্চিমা সংস্কৃতি হলেও এদেশে এর প্রচলন ঘটান শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক কলামনিস্ট শফিক রেহমান। প্রথমে অনেক সুশীল সমাজ এর বিরোধীতা করলেও এখন তারা নিজেরাও এর রঙে রঙ্গিন হয়ে থাকেন।
ডেটিং এর জন্য ঢাকায় নিরাপদ তেমন কোন প্লেস না থাকায় আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে অলি-গলিতে। তাছাড়া দু’জন একসঙ্গে হেসে কথা বললেও অনেকে মনে করেন তারা বুঝি প্রেম করছে।
আমি বলি ‘মশায় ঐ জিনিশটি এতটাই সহজ লভ্য নাকি, যে চাইলে সিগারেটের ন্যায় গলির মোড়ের দোকান থেকে কিনে ফেললেন। ওটা এতটা সহজ নয়।’
এখন আসি আসল কথায়, গত কয়েক বছর এদিবসটি যে কোন কারণেই হোক আমি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারী তারিখ ভোররাতে ঢাকা ফিরলাম।
ঢাকায় ফিরেই এ শহরটাকে কেন জানি আমার অচেনা মনে হতে লাগল, কোন কিছুই আমাকে আকর্ষণ করছে না। মনে হল এ শহরে কয়েক যুগ আগে আমি বসবাস করতাম। বুকটা কেমন জানি হু-হু করে উঠল।
ভাবতে লাগলাম, এটাই কি আমার প্রিয় শহর ঢাকা নাকি ভুলে অন্য কোথাও চলে এসেছি?
দুপুরে ফার্মগেট থেকে ওয়ারলেস আসার জন্য ৬ নাম্বার বাসে উঠলাম। একেবারে শেষের দিকে এটা সিট খালি দেখে তাতে বসে পড়লাম। ৬ নাম্বার বাস কোন পর্যায়ের লোকাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক স্বল্প আয়ের মানুষকে নিত্যদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ সার্ভিসটি।
তো আমার সামনের সিটে বসে আছেন দু’জন নর- নারী। তাদের দিকে আমার দৃষ্টি দেওয়ার কোন কারণ নেই আর ইচ্ছেও ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির একটি কথায় আমার চোখ-কান খাড়া হয়ে উঠল। মনোযোগ দিলাম তাদের কথায়।
মেয়েটি ছেলেটিকে বলছে ‘সারাদিন আমরা গাড়ীতেই কাটিয়ে দেব এতে সময়ও কাটবে এবং খরচও কম হবে। মাঝে কোথাও নেমে খেয়ে নেব। ছেলেটি বলছে তুমি কাল বের হলে না কেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। ‘আজ বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না’ বাবার সাফ নিষেধ ছিল মেয়েটির সহজ উত্তর। তাছাড়া ক্লাস পরিক্ষার কথা বলে আজ বের হতে পেরেছি। এতেই খুশি থাক।
আমরা অনেক সময় ৬ নাম্বার বাসের ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ী না চালানোর জন্য বকাঝকা করে থাকি। কিন্তু একবারও তো ভেবে দেখিনি গাড়ীতে এমন জুটিও থাকতে পারে। তারা তো চায় গাড়ী ধীরে চলবে এবং তারা একটু বেশি সময় পাবে। কিন্তু ডেটিং এর জন্য ৬ নাম্বার বাস কতটা নিরাপদ আমি জানি না। এখানে বিভিন্ন ধরণের লোক উঠে। সবাই ভালবাসার সমজদার নাও হতে পারে। কিন্তু তাদের (প্রেমিক-প্রেমিকাদের) পকেটের কথা বিবেচনা করে এবং বেশি সময় অবস্থানের জন্য এর থেকে মনে হয় বিকল্প নেই।
তাদের এমন কথোপোকথনে আমার কেন জানি সেই নিরাপদ এসি বাস সার্ভিসের কথা মনে পড়ছিল। কেন যে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিরাপদ ডেটিংয়ের জন্য আবারও এমন একটি বাস সার্ভিস চালু হবে কি...?
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কথায় আছে '' যারা করে তাদের লজ্জা নেই , যারা দেখে লজ্জা তাদেরই''।
গত ২৫ বছর যাবত এই বাসকে চিনি । এই সময়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটের বাসের নাম মালিকানা চেন্জ হলেও ৬ নং বাস ঠিকই টিকে আছে কারণ এটা পুলিশ কল্যান ট্রাস্টের বাস ।
এরা পতংগের মতোন উড়ে উড়ে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাবিত হচ্ছে অথচ এদের বোধশক্তিটুকু পরযন্ত মরে গেছে এই ভয়াবহতা বোঝার জন্য!
আবার ব্লগে নতুন করে পদচারনার জন্য শুকরিয়া! শুভকামনা রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন