মোবাইল বিড়ম্বনা:-

লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৯:১১ সকাল



২০০৪ সালে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করি। সে সময়কার কলরেট সম্পর্কে বলার কিছু নেই, যারা সে সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন তারা ভাল করেই জানেন। সারা মাসে ৩০০ টাকার একটা কার্ড শেষ হতো না। বেশিরভাগ সময়ই টাকা থেকে যেত। শুধুমাত্র ইনকামিং/আউটগোয়িংয়ের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রতিমাসে কার্ড রিচার্জ করতাম। মোবাইল ব্যবহারে বিড়ম্বনার শিকারের কয়েকটি ঘটনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

ঘটনা-১

২০০৫ সাল- যাত্রাবাড়ি থেকে বাসে করে মিরপুর যাচ্ছিলাম। আমার সামনের সিটে এক ভদ্রমহিলা অনেকক্ষন ধরে ফোনে কার সঙ্গে যেন বকবক করে যাচ্ছিলেন। মোবাইলে কিভাবে এত কথা বলেন, বাসের সবাই অবাক হয়ে তাই দেখছিল। এক সময় ভদ্রমহিলার ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। এবার তিনি তার ব্যাগ থেকে ৩০০ টাকার একটি কার্ড বের করেন রিচার্জ করার জন্য। আমার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল। উনি কার্ড বের করতেই আমি আমার ফোনের বাটন প্রেস করা শুরু করলাম। কার্ড ঘর্ষণের কাজ শেষ হলে উনি নাম্বার চেপে শেষ করার আগেই আমি রিচার্জ করে ফেললাম এবং মোবাইলটি পকেটে ঢুকিয়ে চুপচাপ (আমি কিস্যু জানি না স্টাইলে) বসে রইলাম। ভদ্রমহিলা রাগে গরগর করতে লাগলেন। আর গ্রামীনফোনের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করলেন।

ঘটনা-২

২০০৬ সাল- সেজ আপুর বর জসিম ভাই। হাসি খুশি আর দুষ্টুমিতে যিনি সর্বদা আমাদেরকে মাতিয়ে রাখতেন। দেশের বাইরে থাকলেও তিনি এত খোঁজ খবর নিতেন যে কখনও মনে হয়নি তিনি দেশের বাইরে আছেন। যতটা সময় তিনি দেশে থাকতেন খুবই আনন্দেই কাটত সময়। একবার দেশে এসে নতুন নাম্বার নিয়ে আমাকে ফোন করে বললেন, আমি রমনা থানার ওসি জসিম বলছি- আপনার নামে রমনা থানায় একটা কমপ্লেইন আছে। থানায় এসে দেখা করে যাবেন। এ কথা শুনে ভয়ে আমার আত্মারাম খাচা ছেড়ে যাওয়ার উপায়। আমি কোন রকমে আমতা আমতা করে বললাম, ‘জি স্যার, আমি আসব।’ কিন্তু লাইন কাটার পর পর সোজা মোবাইল ফোন অফ করে দিলাম। এক সপ্তাহ পর ফোন অন করতেই ম্যাসেজ পেলাম। জসিম ভাই লিখেছেন- ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার সঙ্গে দুষ্টুমি করেছি। তুমি এত ভয় পাবে জানলে এমন করতাম না।

ঘটনা-৩

২০০৬ সাল- ডিজুস জ্বরে ভুগছে সারাদেশ। এর বাইরে ছিলাম না আমিও। সারারাতের ফ্রি-কলের জন্য অনেকদিন ঠিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে সে কলগুলো ছিল একেবারেই বেহুদা। কারণ আত্মীয়-স্বজন কাউকেই অধিকরাতে কল দিয়ে জাগানোর মত সাহস হয়নি। এমন হয়েছে যে ফ্রি-তে কথা বলার সুযোগ কাজে লাগাতে অনেক প্রবীণ কিংবা মধ্য বয়সীদের মধ্যরাতে গুম ভাঙ্গিয়েছে অনেকেই। একদিন আন্দাজে একটি নাম্বারে ডায়াল করে ওপাশের রাশভারি কণ্ঠ শুনে থমকে যাই, পরে তিনি নিজেকে পুলিশের কর্তা বলে পরিচয় দেওয়ায় ভয়ে ফোন রেখে দেই, কিন্তু তিনি আবার ফোন দিয়ে আমাকে এতরাতে ফোন করার কারণ জানতে চান। আমি তাকে সত্যি কথা বলায় তিনি আমাকে কিছু উপদেশ দিয়ে ফোন রেখে দেন। গ্রামীনের এ সেবায় সাধারণ গ্রাহকদের কতটা উপকার হয়েছে তা জানি না, তবে মোবাইল ফোনে অত্যাধিক কথা বলার অভ্যাসটা সে সময় থেকে গড়ে উঠে এ দেশের মানুষের মধ্যে। তবে একটু দেরি করে হলেও ডিজুস-জ্বর থেকে মুক্তি পায় দেশের মানুষ।

ঘটনা-৪

২০০৮ সাল- দক্ষিণাঞ্চলের একটি মেয়ে, যার কোন কাজই ছিল না শুধু আমাকে মিসডকল দেয়া ছাড়া। সকাল, দুপুর, রাত শুধু মিসডকল আর মিসডকল। ধমক কিংবা বকাবকিতেও কাজ হত না। ওতে মিসডকলের পরিমান আরো বেড়েই যেত। পরবর্তীতে তাকে নিয়ে একটি মাসিক পত্রিকায় ‘মিসড কলের জের’ শিরোনামে একটি গল্প লিখেছিলাম। সে গল্প পাবলিশ হওয়ার পর ১ বছর পর্যন্ত পাঠকদের মিসড কলের জ্বালা পোহাতে হয়েছে আমাকে।

ঘটনা-৫

২০১১ সাল- বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ আশপাশের সবাই ওয়ারিদ সিম ব্যবহার করা শুরু করল। বাধ্য হয়ে আমিও একখান ওয়ারিদ সিম খরিদ করিলাম। কিন্তু তাতে কল খুব একটা আসত না। হঠাৎ মোবাইলে একটি ম্যাসেজ আসলো। ওপেন করে দেখি রিচার্জের ম্যাসেজ। মাত্র ১০ টাকা। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। অপেক্ষায় আছি কোন কামিনে এই কাম করল দেখার জন্য। ঘন্টা খানেক পর এক কোকিলকণ্ঠী ফোন করে বলল- ভাইয়া, ভুল করে আপনার নাম্বারে টাকা চলে গেছে, প্লীজ টাকাটা পাঠিয়ে দিবেন। একজন সন্মানিত ব্যক্তির সামনে থাকায় তাকে তাৎক্ষনিক কিছু না বলে একটু পাশে গিয়ে বললাম, আপনি আমার মোবাইল ফোনটাকে অপবিত্র করে দিয়েছেন। আমার এমন জবাব শুনে কোকিলকণ্ঠী যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি বললেন, আমি কি করে আপনার ফোন অপবিত্র করলাম। আমি বললাম, আমি ৩০ টাকার নিচে কোনদিন মোবাইলে ব্যালেঞ্চ রিচার্জ করিনি, আর আপনি মাত্র ১০ টাকা পাঠিয়ে আমার ফোন অপবিত্র করে দিয়েছেন। এ কথার পর তিনি অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে টাকা ফেরত চেয়েছেন। এজন্য তিনি কল করে ৫০/৬০ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। পরে অবশ্য তাকে ৩০ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি মাত্র ১০ টাকার জন্য এত্তগুলা টাকা খরচ করলেন দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম।

ঘটনা-৬

২০১১ সাল- ‘মিসড কলের জের’ শিরোনামে লেখার পর গাজীপুরের ক্লাস এইট পড়ুয়া এক ছোট্ট বালিকা প্রায়ই আমাকে কল দিতেন। তিনি জানতে চাইতেন- তিনি কিভাবে লিখবেন, তার লেখা ছাপা হবে কিনা, কোথায়/কিভাবে লেখা পাঠাতে হবে এসব বিষয়ে। এভাবে কিছু দিন কথা বলার পর এক সময় তিনি বলেই ফেললেন . .... ...? তাকে বললাম, বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনা কর। আমি বয়সে তোমার অনেক বড় হব। অবশ্য মাস দু’য়েক আগে ফোন করে তিনি জানালেন- ভাইয়া, আমার বিয়ে হয়ে গেছে মধ্য বয়সী এক প্রবাসীর সঙ্গে।

ঘটনা-৭

২০১৪ সাল- কাল (সোমবার) সকাল থেকেই ফোনে ব্যালেঞ্চ ছিল না। রিচার্জের জন্য দোকানিকে দ্রুত নাম্বার বলায় উল্টাপাল্টা করে আমার ব্যালেঞ্চ (৭০ টাকা) চলে যায় অন্য একজনের কাছে। তাকে ফোন করে বলতেই তিনি আমাকে বললেন- ওকে আমি আমার পিএসকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি বললাম, ভাই পারলে খুব দ্রুত পাঠিয়ে দিবেন, খুব প্রয়োজন। তিনি কেমন যেন একটু ধমকে উঠে বললেন- এ ক’টাকার জন্য এমন করছেন যেন কয়েক কোটি টাকা। মনে পড়ে গেল ১০ টাকার জন্য মেয়েটিকে বলা কথাগুলো।

বাকি জীবনে মোবাইল ব্যবহারে আরো কত ঘটনা দেখতে হবে আল্লাহই ভাল জানেন, সে জন্য অপেক্ষা করছি। আরো ঘটনা জানতে পাঠক বন্ধুরা, আপনারাও অপেক্ষা করুন।

এম.এস.নাঈম

রাত-৩.০৪

০৪/১১/১৪

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৯ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

281051
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:০২
কাহাফ লিখেছেন :

অপেক্ষায় রইলাম বিষয়ে লেখা পড়ার জন্যে,তবে আপনার লেখা লেখা নয়,অন্ততঃ এ বিষয়ে! অন্য কারো লেখা !
(ফান করলাম)
ভালো লেগেছে আপনার লেখা! অনেক ধন্যবাদ.....
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
224644
মিকি মাউস লিখেছেন : ভাই, আহতবস্থায় বাসায় শুয়ে ছিলাম, ঘুম আসছে না। তাই মোবইল নিয়ে জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা রাতে বসে বসে লিখলাম। আর আপনি আমার লেখা না বলে ফান করলেন... দিলে বহুত চোট পাইলাম...
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২১
224646
কাহাফ লিখেছেন :
'দিলে বহুত চোট' ভালই তো হল! চোটের চাপে ভেতরের নান্দনিক সব লেখনী বেরিয়ে আসবে!আর আমরাও তা পড়তে পারবো!!Good Luck Good Luck Good Luck
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮
224651
মিকি মাউস লিখেছেন : কবি বলিয়াছেন- কারো ঘর পোড়া যায়, কেউ তাতে আলু পোড়া দিয়ে খায়... হাহ হাহ হা
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫২
224652
কাহাফ লিখেছেন :
'কারো সর্বনাশ আর কারো পৌষ মাস'এই তো দুনিয়ার রীতি........Praying Praying Praying
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
224653
মিকি মাউস লিখেছেন : দুনিয়ার এ ব্যবস্থাকে চেঞ্জ করতে হবে... দাদা
281057
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
মামুন লিখেছেন : লিখাটি পড়লাম। ভালো লেগেছে। ভালো লাগা রেখে গেলাম। ধন্যবাদ। Thumbs Up Bee Rose
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১৬
224661
মিকি মাউস লিখেছেন : আমার ব্লগবাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, সেই সঙ্গে পড়েছেন শুনে আরো ভাল লাগল...
281107
০৪ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দুই নম্বর ঘটনাটি ফেীজদারি অপরাধ!
আর আপনার অপরাধে গালি খাইলাম আমরা!!!
(আমি ওই সময় ওই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলাম)
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১৯
224921
মিকি মাউস লিখেছেন : দুই নাম্বার না এক নাম্বার ঘটনা? ক্লিয়ার করুন... ২ নাম্বার হলে আপনার গালি খাওয়ার কথা না...
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
224996
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ১নং
281123
০৪ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : মোবাইল নিয়ে সবারই কম বেশি অভিজ্ঞতা আছে ।আপনার অভিজ্ঞতা গুলি পড়ে অনেক মজা পেলাম ।
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:২০
224922
মিকি মাউস লিখেছেন : অভিজ্ঞতার ঝুলি বিশাল... তাই সেখান থেকে কিছুটা শেয়ার করলাম...
281318
০৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩২
আফরা লিখেছেন : সত্যি করে বলতেছি সব কয়টা আমার সত্য ঘটনা বলে বিস্বাস হয়নি । যেমন ১ নংটা । আর এটা যদি আপনি করেই থাকেন এটা কোন ভাল কাজ করেনি ।
০৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪২
225813
মিকি মাউস লিখেছেন : ১ নং টা বিশ্বাস না হওয়ার কারণ কি...?
281382
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : বদরে হাড্ডি সব পুলাপাইন।
০৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৩
225814
মিকি মাউস লিখেছেন : হ ঠিক বুইলছেন দাদা ভাই...
281425
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : ভালো লাগা রেখে গেলাম। Good Luck Good Luck
০৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৩
225815
মিকি মাউস লিখেছেন : বেড়াতে আসায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...
০৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৩
226033
এস এম আবু নাছের লিখেছেন : আমি তো মাঝে মাঝেই আপনার ব্লগে ঢুঁ মেরে যাই। ভালোই লিখেন। বেশ ভালো লাগে।
১৯ মে ২০১৫ রাত ০১:৩৪
262041
মিকি মাউস লিখেছেন : তাই বুঝি...? <:-P

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File