পিতা-মাতার অধিকার
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ০৪ জুলাই, ২০১৪, ০৮:২৯:৩৫ রাত
ঘটনা-১
গ্রাম্য সালিশে দিন মজুর আক্কাসের বিচার হবে। কঠিন শাস্তি হবে সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। তা না হলে অন্তত ধিক্কার, কান মলা কিংবা জুতার বাড়ি তো হবেই। মাতবর সাহেব এখনও আসেন নি। তিনি আসলেই শুরু হবে বিচার।
সবাই বলাবলি করছে, আক্কাস তো খারাপ মানুষ নয়, কেন সে এমনটি করলো। এর পিছনে কি কারন আছে।
আক্কাস- খুবই গো-বেচারা টাইপের মানুষ। দিনমজুরি করে দৈনিক ২০০/২৫০ টাকা আয়ে চলে সংসার। বাবা-মা, বৌ, ছেলে, মেয়ে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। এর মধ্যে বউটা একটু আত্মকেন্দ্রিক। শশুর-শাশুড়ীকে নিজের সংসারে বোঝা মনে করে।
যদিও আক্কাস বাবা মায়ের চাহিদার ব্যাপারে সচেতন। কিন্তু বউয়ের অব্যাহত অসহযোগীতা আর সংসারে টানাটানিতে কতটা পারা যায়।
এক সময় আক্কাস বাবা মায়ের দায়িত্ব বৌ-য়ের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকেই বউ শশুর-শাশুড়ীর প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্যই দেখাশুনা করে। বাবা-মা তার সংসারে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে। আশপাশের লোকজন এ বিষয়ে অনেক বলাবলি করলেও বউয়ের সে দিকে খেয়াল নেই।
একদিন খাবার নিয়ে কি যেন ঝামেলা হয়। তাতেই বউ তাদের দুজনে ৩ বেলা খাবারের পরিবর্তে দুইবার দেয়া শুরু করে। এবং বেশি খাই খাই করলে ভবিষ্যতে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।
তার দু’দিন পরেই আবার ঝামেলা হয়। ছেলের অবর্তমানে এবার শুধু খাবার দেওয়া বন্ধ নয়, ঘর থেকে বের করে দেয় নিজের পছন্দে দেখে আনা অতি আদরের বৌমা (বোমা)। এ অপরাধেই বিচার হচ্ছে আক্কাসের। মাতবর সাহেব আসলে বিচার হবে। শাস্তি যাই হোক না কেন বিচার তো হচ্ছে।
ঘটনা-২
জামিল সাহেব। সমাজের উঁচু তলার একজন মানুষ। পরিবারে সদস্য সংখ্যা এবং বাবা-মায়ের অধিকারের ব্যাপারে আক্কাসের সঙ্গে মিল রয়েছে জামিল সাহেবের। কিন্তু আক্কাস এবং জামিল সাহেবের আয়ের মধ্যে রয়েছে বিস্তর তফাৎ।
জামিল সাহেবের প্রতি ঘন্টার আয় আক্কাসের দৈনিক আয়ের ৫ গুন। বৈধভাবেই করেছেন অঢেল সম্পদ। করেছেন বাড়ি, গাড়ি।
স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় থাকেন। যেখানে দারোয়ানের চোখ রাঙ্গানীর ফলে ফকির পর্যন্ত যেতে পারেন না। বউ নামক দানবের ভয়ে কুঁকড়ে থাকেন স্বয়ং জামিল সাহেব তাই পরিবারের অন্য সদস্যরা ও পথ মাড়ান না।
গ্রামে বাবা-মা’কে মাঝে মাঝে দেখতে যান, কিনে দেন ঔষধপথ্য। দিয়ে আসেন সামান্য অর্থ। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নিদারুন অর্থ কষ্টে ধুকে ধুকে চলে তাদের জীবনযাত্রা।
মাঝে মাঝে অতিরিক্ত অর্থ চাইলে যাচ্ছে তাই বলে বকাঝকা করেন। জামিল সাহেব ভুলে যান, যাদেরকে বকাঝকা করছেন তারাই তার জন্মদাতা পিতা-মাতা।
বৃদ্ধ বাবা-মা দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের বোঝা বইতে পারেন না। সন্তান অনেক উঁচু মাপের হওয়ায় কারো কাছে হাত পাততে পারেন না। শুধু গোপনে চোখের পানি ফেলেন। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে বলেন, জীবনে অনেক দেখেছি আর না, এবার তুমি আমাদের নিয়ে যাও প্রভূ।
উপরের দুটি ঘটনা আমাদের সমাজের উঁচু কিংবা নিচু তলায় আমরা প্রায়সই দেখে থাকি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমাদের সমাজ আক্কাসের বিচার করলেও জামিল সাহেবদের টিকিটিও ছু’তে পারে না।
জামিল সাহেবদের বাবা-মায়েরা শুধু গোপনে চোখের পানি ফেলেন আর সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চান।
আক্কাস চেষ্টা করেও পারেন না তার প্রাণপ্রিয় বাবা-মা’কে সুখী রাখতে অন্যদিকে জামিল সাহেব অধিক সম্পদের লোভে এবং বউয়ের ভয়ে তাদের চিন্তা মাথায় আনতে পারেন না। হায় সেলুকাস...
আসুন আমরা পিতা-মাতার অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হই। মনে রাখবেন এক সময় আমাদেরকেও বৃদ্ধ হতে হবে। আমরা আমাদের পিতা-মাতার অধিকার নিশ্চিত করলে আমাদের সন্তানও আমাদের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এম.এস.নাঈম
সন্ধ্যা-৬.৪৮
০৪/০৭/১৪
বিষয়: বিবিধ
১২৯৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন