আমার শৈশব
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:২০:৫২ রাত
পর্ব-১
পড়াশুনার হাতে খড়ি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার মন্দবাগে। বাবার সরকারী চাকুরীর সুবাদে সেখানে থাকা। সবে ক,খ,গ,ঘ পড়তে শুরু করেছি। বাসার সবাই এবং বড় আপুদের সে কি আনন্দ। আপুরা বলত ‘ঙ’ পর্যন্ত শিখতে পারলে কাল স্কুল থেকে তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসব। তারপর দিন ‘ঞ’ পর্যন্ত, তারপর দিন ‘ণ’ এভাবেই চলছিল হাতেখড়ি।
মাঝে মাঝে আপুরা আমাকে স্কুলে নিয়ে যেত তাদের সাথে করে। তবে পড়তে নয়, স্কুলের পরিবেশ বুঝাতে। আপুদের বান্ধবীরা আমাকে অনেক আদর করতো। অনেক চকলেটসহ মজার মজার খাবার কিনে দিত। আর ক্লাসে আমাকে কার পাশে বসাবে এনিয়ে তাদের মাঝে কাড়াকাড়ি চলতো। কখনই আমি আমার আপুদের পাশে বসতে পারতাম না। তাদের বান্ধবীদের পাশেই বসতে হত।
আমাকে নিয়ে তারা অনেক মজা করত। অনেকে আমাকে মজা করে বলত, ‘তুমি আমার স্বপ্নের রাজকুমার, এই রাজপুত্র আমাকে বিয়ে করবে?’ আমি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে গিয়ে আপুর কাছে নালিশ করতাম। পরে আপুরা বকে দিত তাদের বান্ধবীদের। তাদের কথা এখন খুব মনে পড়ে।
এর ক‘দিন পর আমরা স‘পরিবারে গ্রামের বাড়ীতে চলে আসলাম। ক‘দিন পর আব্বু আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন মনিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিছুই বুঝলাম না শুধু জানলাম আমি এখন এই স্কুলের ছাত্র।
একটুপর জহির মামা (যিনি এই স্কুলের শিক্ষক এবং আম্মুর খালাতো ভাই) আমাকে সাথে করে সবগুলো ক্লাস ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন আর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন এ হলো আমার ভাগ্নে বলে। সাথে বললেন, ও আজ থেকে এই স্কুলে পড়বে।
বলা বাহুল্য সব ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা আমার দিকে কেমন যেন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আর আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
এক ক্লাসে যাওয়ার পর একটি মেয়ে বলল, ‘স্যার ও তো আমার চাচাতো ভাই, ও আমার পাশে বসবে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।তাছাড়া ওকে আমি আগে দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। মেয়েটি জানালো তুমি আমার জ্যাঠাতো ভাই। জ্যাঠিমা আমাকে বলে দিয়েছেন বাড়ি যাওয়ার সময় যেন আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাই।
এরমধ্যে আব্বু যে কখন চলে গেছে আমি টের পাইনি। যখনই টের পেলাম আব্বু নেই অমনি ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলাম। কান্না থামাতে চাচাতো বোন আমার জন্য কাশেম ভাইয়ের দোকান থেকে চকলেট (১ টাকায় ৪টা পাওয়া যেত) নিয়ে আসল।
কিন্তু আমার কান্না থামছে না। অগত্যা স্যার মনি আপুকে ছুটি দিয়ে দিলেন আমাকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য।
পরদিন যথারীতি মনি আপু এসে হাজির, আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে বলে। প্রথমে যেতে চাইলাম না, পরে মনি আপু গ্রামীন অনেক প্রকার খেলার লোভ দেখিয়ে আমাকে নিয়ে গেল।
এদিন স্কুলে খুব একটা খারাপ লাগলো না, কেন জানি সবাই আমার সাথে খুবই বন্ধুত্ত্বপূর্ণ আচরণ করলো। সবাই আমাকে তাদের খেলার সাথী হতে আহবান করলো। কাকে রেখে কার সাথে খেলবো তাই ঠিক করতে পারছিলাম না। অনেক ধরণের খেলেই খেলেছি। এবং সব খেলাই আমি তাদের সাথে তালমিলিয়ে খেলেছি। তবে সবমিলিয়ে ভালই লাগলো।
এরপর থেকে ক্লাসে আসা শুরু করলাম নিয়মিত। তবে মাঝে মাঝেই স্কুল ফাঁকি দিতাম। অনেক সময় পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা বলে ছুটি নিয়ে চলে আসতাম।
আপুদের তত্ত্বাবধানে থাকার কারনে ক্লাসের পড়া ঠিক ভাবেই শিখে যেতাম। ক্লাসে ভাল অবস্থানের জন্য স্যাররাও অনেক ভালবাসতেন আমাকে। যার ফল স্বরূপ ওয়ান থেকে সরাসরি ক্লাস-টু এর পরিক্ষা দিয়ে থ্রি-তে উঠে গেলাম।
ক্লাসের ফাস্টবয়ের খেতাবটি যথারীতি আমার আওতায়ই ছিল সবসময়। অল্পদিনের ভিতর স্কুলের সবার বন্ধুরূপে পরিচিত হলাম। ছোটবড় সবার সাথেই বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতাম।
আমার দুই বছরের সিনিয়র এক চাচাতো ভাই ও এখানে পড়তো। গ্রামীন এমন কোন দুষ্টুমি নেই যে সে জানে না এবং করতো না। প্রথম প্রথম তাকে এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো। এরপর থেকে পাল্টে যেতে থাকলো আমার চলাফেরা। চলবে...
বিষয়: বিবিধ
২৫৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন