এ জার্নি ফর ফ্রেস মাইন্ড-৩
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১৭:১৫ দুপুর
শুক্রবার: সকালের আযান হতেই দুই ভাই নামাজ পড়ে মসজিদে কিছুটা সময় ব্যয় করে বের হলাম। সেখান থেকে রিক্সায় সাত নাম্বার ঘাট এ গেলাম। ঘাট থেকে স্প্রীড বোট এ চড়ে বসলাম।
ভোরের মিষ্টি রোদ আর সাগরের নোনা জলের ছটায় স্প্রীড বোট যাত্রা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল। সামনে বসাতে আমার এতটাই ভালো লাগছিল যে, মনে পড়ে গেল টাইটানিক ছবির সেই দৃশ্যের কথা।
যেখানে নায়ক-নায়িকা দুজন জাহাজের একেবারে সামনে দাড়িয়ে বাতাসের ঝাপটা নিজেদের গায়ে লাগাচ্ছিল আর ভালোবাসার বর্হি:প্রকাশ ঘটাচ্ছিল।
এদিকে আমার মনে হচ্ছিল আমরা যেন উড়ছি। বোটের সবাই চুপচাপ। দেখতে দেখতে মাত্র ১৫ মিনিটে চলে আসলাম মহেশখালী।
মহেশখালী নেমেই আমরা স্থানীয় কয়েকজনের কাছে এখানকার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সবাই আমাদেরকে জানালো এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা। এরপর আমরা হেটে মহেশখালী বাজারে গেলাম।
বাজারে যাওয়ার পরই মনে হলো এবার আর যাই করি না কেন আগে খেতে হবে আমাদেরকে।
অবাক ব্যাপার এখানে প্রায় সকল হোটেলেই পরটার বদলে লুচি বিক্রি করা হয়। অবশ্য যা আমার একেবারেই অপছ্ন্দ। অনেক খোজাখুজি করে অবশেষে পেলাম একটি হোটেল যেখানে তৈল ছাড়া পরটা পাওয়া যায়।
হোটেলে ঢুকে বয়কে খাবারের অর্ডার দিয়ে বললাম, যা যা আছে নিয়ে এসো। এর মধ্যে ভাইয়া কয়েকবারই সামুদ্রিক চিংড়ি মাছ খাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোথাও ভালো চিংড়ি না পাওয়ায় হতাশ হতে হয়। বয় জানালো যে এখানে পাওয়া যায় চিংড়ি মাছ। খুব খুশি হলো ভাইয়া চিংড়ি খেতে পারবে বলে।
কিন্তু চিংড়ি মাছ দেখেই ভাইয়া আর খেতে চাইলো না। কারণ তা খাওয়ার মত নয়। এগুলো নাকি শুটকি, যা মাছ বলে চালিয়ে দেয় হোটেল মালিকরা।
বয়কে বললাম এই ছাড়া আর সামুদ্রিক ভালো কি মাছ আছে? বয় জানালো ‘বালা’ নামে একটি মাছ আছে যা খুবই জনপ্রিয় এখানে। খেতে পারেন। বললাম নিয়ে আসো।
(বলে রাখা ভালো ভাইয়া কিন্তু খাবারের ব্যাপারে উস্তাদ। খাবার দেখলে না করতে পারেন না ভাবটা এমন আরকি।)
বয় নিয়ে এলো বালা মাছ। খেলাম সেই মাছ। দেখতে অনেকটা আমাদের আঞ্চলিক আঁইড় মাছের মতই। তবে বেসম্ভব মজা পেলাম খেয়ে। কতটা খেয়েছি বলতে পারবো না। কারণ বিলের ব্যাপারটি ভাইয়াই দেখছিল তো তাই। তবে অনেক খেয়েছি।
সেখান থেকে গেলাম আদিনাথ মন্দিরএ। যা মাটি থেকে অনেকটা উপরে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম সারাটা মন্দির। এই মন্দিরের থেকেও অনেক উপরে বৌদ্ধদের একটি মন্দির সেখানেও গেলাম।
কিন্তু বিধি বাম। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হলো। আর পাহাড়ের উপর বৃষ্টি হওয়া মানেই বিপদ। দু’ভাই মন্দিরের ছোট্ট একটি ফাঁকার মধ্যে বসে পড়লাম বৃষ্টি থেকে বাঁচতে।
এসময় পাহাড়ের উপর মাটির পথ একেবারে পিচ্চিল হয়ে গিয়েছিল। খুব সাবধানে প্রায় আধা ঘন্টা পর বৃষ্টি থামলে দু’জন নেমে এলাম নিচে।
আরও কিছুক্ষণ মহেশখালীর সুন্দর দৃশ্য দেখে সোজা চলে আসলাম ঘাট এলাকায়। আবারও স্প্রীড বোট এ চড়ে চলে এলাম কক্সবাজার ৭ নাম্বার জেটিতে।
এখান থেকে গেলাম বিমান বন্দরে। ভিতরে ঢুকলাম, দেখি ৩টা উড়োজাহাজ দাড়িয়ে আছে। আরও কিছুটা সময় থেকে চলে আসলাম কলাতলী বিচএ।
কলাতলী থেকে অটোতে করে চলে আসলাম হীমছড়ি। ততক্ষনে আমাদের শরীরের অবস্থা একেবারে খারাপ। গোসল করতে না পারায়। হীম ছড়ি মসজিদের ইমামকে বলে ভাইয়া মসজিদের পুকুরেই গোসল করতে নেমে গেলো। গোসল করতে পেরে ভাইয়া অনেক মজা পেলো বলে মনে হলো।
আমাকেও নামতে বলল। কিন্তু আমি বললাম এখানে নয়, আগে সাগরের পানিতে নামবো, তারপর মিঠা পানিতে গোসল করবো।
গোসল শেষে আমরা উঠলাম হীমছড়ির পাহাড়ে ঝর্ণা দেখতে। কিন্তু কই সেই ঝর্ণা? আমরা তা দেখতে পেলাম না। ঝর্ণার পাশের পাহাড় নাকি ভেঙ্গে পড়েছে তাই সেদিকটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তারপর ও পাহাড়ে উঠে অনেকটা মজা পেলাম। সাগরের মন মাতানো, পাগল করা শীতল বাতাস বয়ে আসছিল। মনে হলো এই বাতাসে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু তা সম্ভব নয়। এরপর নিচে নেমে ডাব খেলাম। কিছু আচার কিনলাম।
এখানে অনেক সময় থেকে ফিরে আসলাম কক্সবাজার এ।
কক্সবাজার এসেই ভাইয়া বলল চলো এবার ফিরে যাই। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো এই ভেবে যে তাহলে কি আমি সাগরের পানিতে গোসল করতে পারবো না?
আমি বললাম না ভাইয়া আমি ১০ মিনিটের জন্য হলেও পানিতে নামবো। এবার দেখি ভাইয়া হাসছে, আসলে ভাইয়া আমার মন দেখলো। আমি পানিতে নামবো কিনা।
ভাইয়া বলল, আমিও তো নামবো, কিন্তু আমি কি পরে নামবো? কি আর করা ভাইয়ার জন্য একটা থ্রী-কোয়ার্টার প্যান্ট কিনে আনলাম। তারপর দু’ভাই একসাথে নেমে পড়লাম সাগরের পানিতে।
সাগরের পানিতে নামতে পেরে আমি যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৬০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন