শুরুতেই শেষ
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ০৪ জুলাই, ২০১৩, ০১:০৫:৩৯ রাত
হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে জীবনের ২৫ টি বসন্ত পার করলাম একাই। জীবন নামের গাড়ীর জানালায় অনেকেই উঁকি ঝুঁকি মারলেও প্রবেশ করার সাহস কেউই পায়নি বা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ফেইসবুক হাঁ এই ফেইসবুকের মাধ্যমেই মমের সাথে পরিচয়, দেখা, ঘুরে বেড়ানো। সবশেষে একসাথে বাকী জীবন পাড়ি দেওয়ার নানা জল্পনা-কল্পনা।
হাসিখুশিতে চলে যাচ্ছিল সময়, অফিস থেকে বের হয়েই দুজনেরই দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ। মাঝে মাঝেই দেখা হতো দজনের। এক্ষেত্রে মম অনেক কষ্ট স্বীকার করতো। আবার অনেক সময় আমি ফ্রি থাকলেও মমর সময় হতো না কিংবা তার হলে আমার হতো না। তারপরও দুজন সমস্যার কথা বিবেচনা করে মেনে নিতাম। এভাবেই চলছিল আমাদের খুনসুটি পূর্ণ ভালোবাসা।
ভালোবাসার সময় নাকি খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। আমাদের জীবন নামক পৃথিবীর আকাশেও কালো মেঘ জমে। যা অল্প কিছুদিনের মাঝেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। সাথে ঝরে পরে আমার মমও।
ঘটনার শুরু হলো অফিসের ট্যুর, যেতে হবে সিলেট, চলে গেলাম। বিশাল এই রাজধানীতে একাকি রইলো আমার প্রিয়তমা। সবসময় তাকে ভাবতে থাকি। পাগলের মত হয়ে যাই। ছুটে আসতে চাই তার কাছে। কিন্তু আসলেই তো আর তার কাছে যাওয়া যাবে না। দুর থেকেই দেখতে হবে।
তার বিরহে ছটপট করতে থাকি। চিন্তায় কাজে মন বসাতে পারলাম না। একদিকে কাজ অন্যদিকে মম। বাজে পারফর্ম করায় যথারীতি অফিসে ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম উঠলো।
পরিস্থিতি যখন এমন অবস্থায় তখনই বসের বাঁজখাই হুংকার, ‘কাজ করতে না পারলে ঢাকা ফিরে আসেন, এখানে অনেক কাজ আছে।’
তারপরও অনেক কষ্ট করে ব্যর্থ মনোরথে কাজ শেষে ফিরে আসলাম ঢাকাতে। আসার পথে নানান ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। সে কথা আরেকদিন বলা যাবে।
ঢাকা ফিরে মম’র সাথে দেখা হলো, অনেক দিন না দেখার ফলে দুজনই আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম।
একথা সেকথার মাঝে কখন যে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল খেয়ালই করিনি। ওমা বাসায় যেতে হবে মম আর্তচিৎকার করে উঠে। তাড়াতাড়ি তাকে বাসে উঠিয়ে দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। সে বাসায় ফিরে গেল।
হায় তখনও জানতাম না এটাই মম’র সাথে আমার শেষ দেখা। জানলে কি তাকে যেতে দিতাম?
সে ফিরে গেল তার বাসায়, আমি আসলাম আমার বাসায়। তারপর আরো দুদিন ভালোই চললো। মম আমারই হবে, তাই সকল বিষয়েই তার সাথে শেয়ার করতাম।
সেদিন একটি নিউজ এর হেড লাইন দেখে চোখ আটকে গেল। কিন্তু ব্যস্ত থাকায় নিউজটা পড়তে পারলাম না। সাথে সাথেই তাকে শেয়ার করলাম।
এদিকে একই দিন শনিবার বনানীতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের একটি জনসভা কাভারের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। শুক্রবার থেকেই ঢাকাতে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও এরশাদ সভায় না আসায় বিরক্ত হয়ে পাশে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। চিন্তা করলাম কাছেই তো, এরশাদ আসলেই চলে আসবো।
কিন্তু মিস করলাম এসাইনমেন্ট। আবারও বসের বকুনি, ‘বাংলা নিউজ দেখেন এরশাদ এসেছে এবং নিউজ ও চলে এসেছে।’
ল্যাপটপ খুলে নিউজ দেখে একটা নিউজ করলাম। এরপর ফেইসবুক খুলে তো চক্ষু ছড়কগাছ। সামনে সব অন্ধকার দেখতে লাগলাম। একি হলো কি করলাম আমি। কি ভুল করেছি। এমন তো হওয়ার কথা না। কেন এমন হলো?
মম’কে ফোন দেই সে রিসিভ করে না। উল্টো আমাকে ফেইসবুক এবং স্কাইপি থেকে ব্লক করে ভয় দেখায়। অনেকবার বলি এটি আমি নাদেখে করেছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
তার একটাই কথা, ‘আর না এখানেই সম্পর্ক শেষ।’
সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যার চিন্তায় থেকে এতটা অপমান সহ্য করেও কাজ করে যাচ্ছি সেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে চায় না।
বাহ বাহ নিয়তির কি নির্মম পরিহাস!!! ছেড়েই দিলাম চাকুরী।
এখন অবসর সময় বসে আকাশ দেখি আর ভাবি, এমন সময় কেন আমার আগে আসলো না? তাহলে তাকে নিয়ে আরো অনেক ভাবতে পারতাম।
মম, যেখানেই থাকো ভালো থেকো, সুখেই থেকো। চলেই যদি যাবে তাহলে আসলে কেন আমার জীবনে। কেন ছিন্ন ভিন্ন করে দিলে আমার সাজানো সুন্দর এই জীবনকে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন