পিঁপড়ের মতোই জীবন যেন!

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ১৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:০৮:০১ সকাল

আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটাকে শুন্য(শুরু) থেকে দাড় করিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন কামলা। প্রথম এক থেকে দেড় বছর একটা দিন ডে অফ অথবা ছুটি কাটাই নি। ইভেন ঈদ বা শুক্রবার বা যেকোন সরকারী ছুটি। কাজ করেছি সকাল ০৭.০০ থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত।

কিন্তু কয়কেজনের এই গল্পের পিঁপড়ের মতোই চাকরি চলে গেছে! আমিও মনে হয় বেশি দিন টিকতে পারব না!!!

আল্লাহ ভাল জানেন।

-

এক দেশে ছিলো এক পিপড়া। সে প্রতিদিন ৯টায় অফিসে ঢুকতো। তারপর কারো সঙ্গে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে কাজে বসে যেত।

সে যে পরিমাণ কাজ করত, তাতে কোম্পানির উৎপাদন হতো প্রচুর এবং এর ফলে সে আনন্দের সঙ্গেই জীবন নির্বাহ করত।

ওই অফিসের সিইও সিংহ অবাক হয়ে দেখত, এই পিঁপড়াটি কোনো ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই প্রচুর কাজ করছে। সিংহ ভাবল, পিঁপড়াকে যদি কারও সুপারভিশনে দেওয়া হয়, তাহলে সে আরও বেশি কাজ করতে পারবে।

কয়েক দিনের মধ্যেই সিংহ একটি তেলাপোকাকে পিঁপড়ার সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিল। সুপারভাইজার হিসেবে এই তেলাপোকাটির ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আর সে দুর্দান্ত রিপোর্ট লিখতে পারত।

তেলাপোকাটি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল, এই অফিসে একটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম থাকা উচিত।

কয়েক দিনের মধ্যেই তেলাপোকার মনে হলো, তার একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট লিখতে সাহায্য করবে। … সে একটা মাকড়সাকে নিয়োগ দিল এই কাজে যে সব ফোনকল মনিটর করবে, আর নথিপত্র রাখবে।

সিংহ খুব আনন্দ নিয়ে দেখল যে তেলাপোকা তাকে প্রতিদিনের কাজের হিসাব দিচ্ছে আর সেগুলো বিশ্লেষণ করছে গ্রাফের মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই উৎপাদনের ধারা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে এবং সিংহ সেগুলো বোর্ড মিটিংয়ে ‘প্রেজেন্টেশন’ আকারে পেশ করে বাহবা পাচ্ছে।

কিছুদিনের মধ্যেই তেলাপোকার একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার প্রয়োজন হলো এবং এগুলো দেখভালের জন্য আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল। আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেল মাছি।

আমাদের কর্মী পিঁপড়া, যে প্রতিদিন অফিসে এসে প্রচুর কাজ করে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে বাসায় ফিরত, তাকে এখন প্রচুর পেপার ওয়ার্ক করতে হয়, সপ্তাহের চার দিনই নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়।

নিত্যদিন এসব ঝামেলার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উৎপাদন কমতে লাগল, আর সে বিরক্ত হতে লাগল।

সিংহ সিদ্ধান্ত নিল, পিঁপড়া যে বিভাগে কাজ করে, সেটাকে একটা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে সেটার একজন ডিপার্টমেন্ট প্রধান নিয়োগ দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

সিংহ ঝিঁঝিপোকাকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিল। ঝিঁঝিপোকা প্রথম দিন এসেই তার রুমের জন্য একটা আরামদায়ক কার্পেট ও চেয়ারের অর্ডার দিল।

কয়েক দিনের মধ্যেই অফিসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে ঝিঁঝি পোকার একটি কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন হলো। কম্পিউটার নতুন কেনা হলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ঝিঁঝিপোকা নিয়োগ দিল তার পুরোনো অফিসের একজনকে।

পিঁপড়া যেখানে কাজ করে, সেখানে আগে ছিল চমৎকার একটা পরিবেশ। এখন সেখানে কেউ কথা বলে না, হাসে না। সবাই খুব মনমরা হয়ে কাজ করে।

ঝিঁঝিপোকা পরিস্থিতি উন্নয়নে সিংহকে বোঝাল, ‘অফিসে কাজের পরিবেশ’ শীর্ষক একটা স্টাডি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

পর্যালোচনা করে সিংহ দেখতে পেল, পিঁপড়ার বিভাগে উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

কাজেই সিংহ কয়েক দিনের মধ্যেই স্বনামখ্যাত কনসালট্যান্ট পেঁচাকে অডিট রিপোর্ট এবং উৎপাদন বাড়ানোর উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিল।

পেঁচা তিন মাস পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট মনিটর করল, সবার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলল। তারপর বেশ মোটাসোটা একটা রিপোর্ট পেশ করল সিংহের কাছে। ওই রিপোর্টের সারমর্ম হলো, এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি। কর্মী ছাঁটাই করা হোক।

পরের সপ্তাহেই বেশ কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হলো। বলুন তো, কে সর্বপ্রথম চাকরি হারাল?

ওই হতভাগ্য পিঁপড়া। কারণ, পেঁচার রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘এই কর্মীর মোটিভেশনের ব্যাপক অভাব রয়েছে এবং সর্বদাই নেতিবাচক আচরণ করছে, যা অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করছে।

এবার ভাবুন তো, আপনার পজিশানটা কী আপনার অর্গানাইজেশনে?

( সংগৃহিতঃ বিদেশি গল্পের অবলম্বনে )

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382691
১৫ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১০:৫২
হতভাগা লিখেছেন : এই কাহিনী আমাদের ডিপার্টমেন্টেও একজন শেয়ার করেছিলেন।

আসলে এরকমই হয়ে থাকে ।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা ও আশে পাশের লোকজনদের কথা শুনে এরকম একটা সিদ্ধান্ত আমার মনে প্রোথিত হয়ে গেছে যে -

একটা প্রতিষ্ঠানে মন দিয়ে কাজ করে ২/৩ % লোক । বাকীরা ওদের কাজের উপর চড়ে আরামসে চলে । এদের কাজই হল বসদের তেলানো এবং যারা কাজে মনোযোগী তাদের খুদ ধরা।

এরা অফিসে আসে দেরীতে , যায় তাড়াতাড়ি । যতক্ষণ থাকে বসদের রুমে গিয়ে খোশ গল্প করে । বসরা মনে করে যে , বাহ্‌ এরা তো ভালই আমাদের খোজ খবর নেয় ! (বসরা কিন্তু এরকমই চায় )

এদের ভাল ACR দেয় বসেরা । আর যারা কাজে নিমগ্ন থাকে তারা তো কাজের চাপে বসকে তাদের মুখ দর্শন করাতেই পারে না।

কাজ না করাদের তরতর করে প্রমোশনের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে দেখে কাজ করা লোকেদের মনে নিজেদের সততার প্রতি একটা ঘৃনা চলে আসে । এবং সেটাই ডিমোটিভেশনে রুপ নেয় এক সময়।
০৬ মে ২০১৭ সকাল ১১:৩৫
316333
নেহায়েৎ লিখেছেন : সেইম ঘটনা ঘটছে আমাদের অফিসে।
382692
১৫ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১০:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সাবেক ভারতিয় রাষ্ট্রপতি ডঃ আবদুল কালাম এর একটি উপদেশ আছে। তোমার কাজকে ভালবাস। চাকরি কে নয়। ছুটির দিন, ঈদের দিন কাজ করা টা কাজ ভালবেসে নয় মানুষ করে চাকরি ভালবেসে। নিজের সময় কোম্পানিকে দিলেও আসলে সেই মুল্যায়ন এর আশা করা ঠিক নয়।
০৬ মে ২০১৭ সকাল ১১:৩৬
316334
নেহায়েৎ লিখেছেন : সেই সময় আমরা বাধ্য ছিলাম।
382697
১৫ এপ্রিল ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আমি মনে করি ঐ পিপড়াই দায়ী, কারণ ঐ পিপড়া কেন অফিস টাইমের বাহিরে গিয়েও কাজ করে নিজের প্রতি জুলুম করলো! কেন অতিরিক্ত উৎপাদন দেখাতে গেল? সে যদি প্রথম থেকেই অফিস টাইমের মধ্যে যতটুকু সম্ভব উৎপাদনের কাজ করতো, তাহলে কোন সমস্যাই হতোনা। কারণ সে আগে নিজের প্রতি জুলুম করে অতিরিক্ত উৎপাদন দেখিয়েছে, কিন্তু বিবিধ কারণে সে এখন অপারগ, সেটা ম্যানেজমেন্ট বুঝবেনা।
ধন্যবাদ আপনাকে
০৬ মে ২০১৭ সকাল ১১:৩৬
316335
নেহায়েৎ লিখেছেন : বাধ্য না হলে কেউ এমন কাজ করে না। পরিস্থিতে পড়লে বুঝা যায়।
382703
১৫ এপ্রিল ২০১৭ বিকাল ০৪:৩৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি অনেক ভালো লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ অাপনাকে
০৬ মে ২০১৭ সকাল ১১:৩৬
316336
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File