বাংলাদেশী আলেম বনাম সৌদী আলেম।

লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ২৩ মার্চ, ২০১৭, ০২:২১:২১ দুপুর

বাংলাদেশে বেড়ে উঠা এবং ভারতে তিন বছরের পড়াশোনার বদৌলতে এ দেশীয় আলেমগণের অবস্থা যেমন হাড়ে হাড়ে জানি তেমনি সৌদীতে আড়াই বছর থাকার সুবাদে এ দেশের আলেমগণের অবস্থাও কিছুটা আঁচ করতে পারি। সৌদী আরবের আলেমগণ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তারা।

শায়খ আখতার মাাদানী গল্পে গল্পে বলেছিলেন দীর্ঘ এক যুগ পার হয়ে গেল সৌদীতে থাকা। রাস্তায় কোনদিন কোন চেক পোস্টে পুলিশ আমাকে আটকায়নি। মুখে দাড়ি এবং মাথায় রুমাল দেখে। আমিও বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় বুঝতে পারি স্বদেশী অফিসাররা আমাদের পোশাকের দিকে কি রকম দৃষ্টিতে তাকান আর সৌদীরা কি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকায়।

সৌদী আরবের ভিতরেও যে কোন প্রান্তে যদি বলা হয় মদীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এক আলাদা সম্মান, অন্যরকম গ্রহণযোগ্যতা। এইটা আমরা বিদেশী হওয়ার পরেও পাই যা এই দেশের আলেমগণের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একটি নমুনা মাত্র।

এদেশের আলেমগণ অর্থনৈতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত। গড়ে শতকরা হিসেবে করলে দেখা যাবে সাধারণ জনগণেরর চেয়ে আলেমগণের ধনী হওয়ার হার বেশী। এখানকার অধিকাংশ আলেমরই কোন না কোন বিজনেস আছে। বড় বড় কম্পানী আছে।

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উস্তাদগণের উন্নতমানের গাড়ীগুলো তাদের অর্থ নৈতিক ভিত্তির কিছুটা নমুনা বহন করে। উস্তাদেরা ছাত্রদের দানও করেন প্রচুর ও সীমাহীন। এক কথায় বলা যায় এদেশের এলিট শ্রেণীর নাগরিক হচ্ছে মসজিদের ইমাম ও খত্বীবগণ। ঠিক তার বিপরীত হচ্ছে আমাদের দেশে। এর কয়েকটা কারণ হতে পারে-

আমাদের দেশে মাদরাসা গুলোতে ভর্তির পর থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় সরকারী চাকরী করা হবেনা, ব্যাবসা বাণিজ্য করা হবেনা । এগুলো করলে ইলমে বরকত থাকবেনা... ইত্যাদী ইত্যাদী। ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর (রহঃ), ডঃ আবু বকর যাকারিয়া (হাফিঃ), ডঃ মানজুরে ইলাহী (হাফিঃ), ডঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব (হাফিঃ) সহ আরো অনেকের সরকারী চাকরী যে এনাদের দ্বীনী কাজ পালনে কতটা সহায়ক তা ভূক্তোভূগীরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবেনা। ভার্সিটি গুলোতে সহ শিক্ষা আছে এই কারণে পরহেযগারিতার খাতিরে যদি কেউ সরকারি চাকরী না করতে চায় তাহলে সেটা ভাল চিন্তা। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য কেন নয়? ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর জীবনী ঘেটে যা বুঝলাম তার অর্থনৈতিক উৎস তার নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য যা অন্যরা দেখাশোনা করত।

অর্থ ছাড়া দ্বীনের কাজ মন মত করা যায়না। রাসূল (ছাঃ) ধনাঢ্য মহিলা খাদীজা (রাঃ)-কে পেয়েছিলেন। ইমাম ইয়াহিয়া বিন মাঈন (রহঃ)-এর পিতা অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার সকল সম্পত্তি তিনি তার ছেলের জন্য ছেড়ে যান। প্রায় তৎকালীন ১০ লক্ষ দিনারের সকল সম্পত্তি ইমাম ইয়াহিয়া বিন মাঈন ইলম হাসিলের পিছনে ব্যয় করেন। বই ক্রয় করা, সফর করা সব তার জন্য সহজ হয়ে যায়। ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর (রহঃ)-এর সুন্নাহ ট্রাস্ট কুষ্টিয়া মেইনরোডের পাশে তার ১৮ বিঘার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

আজ আমাদের দেশে কমিটির কাছে মাদরাসা শিক্ষকগণ ও ইমামগণ জিম্মী। কেন? তাদের না সামাজিক কোন ভিত্তি আছে না অর্থনৈতিক । যদি সৌদী আরবের মত আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরামগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকত। তাহলে মাদরাসাগুলোতে যাকাত-ফিতরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতে হতনা।

দেশে থাকতে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফিরছিলাম। ঈদের সময়। ঢাকার ভিতরেই বাস এক জায়গায় থামলে একটা মাদরাসা ছাত্র বাসে উঠে মাদরাসার জন্য টাকা উঠাচ্ছে। জিজ্ঞাস করলাম, ছুটিতে বাড়ী যাওনি? বলল, না। উস্তাদেরা কিছু ছাত্রকে রেখে দিয়েছে। তারা ভাগ ভাগ হয়ে মাদরাসার জন্য টাকা উঠাচ্ছে। ছেলেটাকে দেখে খুব মায়া হল। নিজে মাদরাসা ছাত্র হওয়াই একটু বেশীই হল। তার মাদরাসায় কিছু দান করার পর যখন তাকে কিছু দিলাম। তখন তার চেহারার হাসিটা এখনও দেখতে পাচ্ছি।

যদি এদেশের আলেম সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকত তাহলে এই ভাবে ভিক্ষা করার কোন দরকারই পড়ত না। আলেম যখন কারো করুণা নিয়ে চলে তখন বুক ফুলে কিছু বলতে পারেনা। আর যখন মানুষ তার করুণা নিয়ে চলবে তখন সে হবে বাতিলের জন্য মূর্তিমান আতংক।

লেখাটা ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহঃ)-এর একটি মন্তব্য দিয়ে শেষ করছি। একদা তার নিকটে একজন ব্যক্তি এসে বলল, আপনার হাতে দিনার কেন! তখন ইমাম সাওরী (রহঃ) বলেন,

اسكت ، لولا هذه الدنانير لتمندل بنا هؤلاء الملوك

চুপ কর! যদি এই দিনার গুলো না থাকত তাহলে বাদশাহগণ আমাদেরকে হাতের রুমাল হিসেবে ব্যবহার করত। (তাহযীবুল কামাল, ১১/১৬৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/২৪১)

এই মন্তব্য নকল করার পর ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, আলেম যখন অন্যের অর্থের মুখাপেক্ষী হয়ে যায় তখন তার ইলম মারা যায়। (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন, ৪/২০৪)

-

(আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক বিন ইউসূফের ফেসবুক হতে কপি)

বিষয়: বিবিধ

১৯৬৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382400
২৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০২:৪৭
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। বেশ বাস্তব অভিজ্ঞতা। যেহেতু আপনি আলেম তাই উচিৎ কওমী মাদ্রাসার আলেমদের এসব বিষয়ে বোঝানো। কিন্তু সমস্যা হবে, যখন বোঝাতে যাবেন, তখন তারা আপনাকে সালাফী, আহলে হাদিস ভেবে দূরে রাখাকেই কর্তব্য মনে করবে। এর জন্য একশ্রেণীর আহলে হাদিস মতদর্শের আলেমও কম দায়ীনা। তারা কওমী মতাদর্শের সাথে মিলেমিশে কাজ করার পরিবর্তে তাদেরকে অব্যাহতভাবে শিরকী, বেদাতি কত নামে যে অযথা ট্যাগ লাগিয়েছে তার হিসাব নেই অথচ কর্তব্য ছিল মিলিত হয়ে যৌথভাব কাজ করা। এব্যাপারে আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সুন্দর দৃষ্টান্ত স্হাপন করে গেছেন আর জন্য তিনি সব মহলেই এত শ্রদ্ধেয় ছিলেন।
382402
২৩ মার্চ ২০১৭ বিকাল ০৪:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ইদানিং মাদানী শেখরা রাজতন্ত্রের রক্ষকের ভুমিকায় অবতীর্ন আর আমাদের দেশের হুজুরগন আকাবিরদের রেখে যাওয়া সে পুরানো কাহানী নিয়েই ব্যস্ত আর মাজার পন্থিরা তাদের দান্দা নিয়ে ব্যস্ত। নবীজির রেখে যাওয়া আল্ কুরআর এবং সুন্নাহ নিয়ে কারো চিন্তা চেতনা নেই। মদিনা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়ে ছিল রেজাল আদদীন তৈরী করার জন্য। আল্লাহ আপনাকে সর্ব উত্তম প্রতিদান দিন অনেক ধন্যবাদ
382403
২৩ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : প্রত্যেকটি মানুষেরই অর্থনৈতিক স্বাধিনতা তাকে সাহসি করে। এখন আমাদের দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনি শুধু চাকরির জন্য উৎসাহি। সেই জন্য জাতিগত ভাবেই আমরা অপমানিত।
382411
২৫ মার্চ ২০১৭ রাত ০৩:৩০
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার বিশ্লেষন।
382419
২৫ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:১০
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশ ইসলামি শরিয়াহ অনুসারে চলে না । তাই এখানে ইসলামের সঠিক পালনকারীদেরও কোন মূল্যায়ন হয় না।
382426
২৫ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০৩:৪৩
মদীনার আলো লিখেছেন : । একদা তার নিকটে একজন ব্যক্তি এসে বলল, আপনার হাতে দিনার কেন! তখন ইমাম সাওরী (রহঃ) বলেন,

اسكت ، لولا هذه الدنانير لتمندل بنا هؤلاء الملوك

চুপ কর! যদি এই দিনার গুলো না থাকত তাহলে বাদশাহগণ আমাদেরকে হাতের রুমাল হিসেবে ব্যবহার করত। (তাহযীবুল কামাল, ১১/১৬৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/২৪১)

এই মন্তব্য নকল করার পর ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, আলেম যখন অন্যের অর্থের মুখাপেক্ষী হয়ে যায় তখন তার ইলম মারা যায়। (ইলামুল মুয়াক্কিয়িন, ৪/২০৪)
অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File