বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বর্ডার হাট!
লিখেছেন লিখেছেন নেহায়েৎ ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:২৫:১৫ সকাল
বর্ডার হাট বা সীমান্ত হাট দুই দেশের মানুষের মিলন স্থল। দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা, সুখদুঃখ বিনিময়ের পাশাপাশি বেঁচাকেনা হয় এখানে। বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সমঝোতায় সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য কয়েকটি সীমান্ত হাট চালু করা হয়েছে এবয় আরো কয়েকটি চালু হবে পর্যায়ক্রমে। মেঘালয় ও ত্রিপুরা সীমান্তে বেশিরভাগ হাট স্থাপন করা হবে। বর্তমান কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, ফেনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বর্ডার হাট চালু রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত মেঘালয় সীমান্তে ভারত সরকার সম্ভাব্য ২২ সীমান্ত হাটের তালিকা দিয়েছিল।
-
হাটের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষের ওই হাটে নিয়মিত কেনাকাটা করার অনুমতি রয়েছে। আশেপাশে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দাদের স্থায়ী পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে, যেটি দেখিয়ে তারা সহজেই হাটে যেতে পারেন। তবে অন্যদেরও সাময়িক পাস নিয়ে হাটে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বর্ডার হাটে বর্তমানে প্রত্যেক ক্রেতা ১০০ ডলারের পণ্য কিনতে পারেন। এটি ৩০০ ডলারে উন্নীত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত হাটে বর্তমানে প্রতি দেশের ২৫ জন বিক্রেতা পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
১। কুড়িগ্রাম বর্ডার হাটঃবাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ সিদ্ধান্তে ২০১১ সালের ১৬ জুলাই কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদর থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে ভারতের কালাইরচর সীমান্তের বিপরীতে বাংলাদেশের বালিয়ামারী সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে প্রথম বর্ডার হাটটি চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১০৭২-এর ৪ এবং ৫ নম্বর সাব পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে জিরোলাইনের উভয় দিকে বাংলাদেশ অংশে ৭৫ গজ এবং ভারত অংশে ৭৫ গজ জায়গা জুড়ে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে হাটটি বসে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এখানে হাট বসে। শীতকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩টা এবং গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাটে কেনা-বেচা চলে। হাটে উভয় দেশের ২৫জন করে বিক্রেতার জন্য ৫০টি কক্ষ রয়েছে। হাটে ক্রেতা বিক্রেতারা তাদের নিজ নিজ মুদ্রায় কেনাকাটার সুযোগ পেয়ে থাকে । সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুদেশের ৪৭টি করে পণ্য বেচাকেনার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনেও এই বর্ডার হাট কাক্ষিত সফলতা আসেনি। মাঝখানে হাটটি বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। ২০১৬ সালের ৬ই এপ্রিল ২ দেশের নতুনভাবে বৈঠকের মাধ্যমে হাটটি আবার চালু করা হয় । উভয় দেশের ২০টি করে স্থানীয় পণ্য সামগ্রী কেনাবেচার অনুমোদন ছিল। এ বৈঠকে আরো ১০টি পণ্য বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে একজন ক্রেতা আগে কিনতে পারত একশ’ ডলারের মধ্যে। এখন সেটা বাড়িয়ে দেড়শ’ ডলার করা হয়েছে। হাটের আশপাশ ৫ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী হাটে বেচাকেনা করা যেত। এখন সেটা বাড়িয়ে ১০ কিলোমিটার করা হয়েছে।
কিভাবে যাবেনঃ মহাখালী থেকে রৌমারির বাস ছাড়ে, ভাড়া ৪৫০ টাকা , সেখান থেকে আপনি যে কোন গাড়িতে যেতে পারবেন ।
২। সুনামগঞ্জ বর্ডার হাটঃ২০১২ সালের ১লা মে বাংলাদেশের ২য় বর্ডার হাট সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা ও ভারতের মেঘালয়ের রাজ্যের শিলং সাব ডিভিশনের বালাটের লালপানি এলাকার জিরো পয়েন্টে উদ্বোধন হয়। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার (৮ টা থেকে ৩ টা ৩০ পর্যন্ত) বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকার লোকজন বর্ডার হাটে পণ্য বেচাকেনা করে । সুনামগঞ্জ জেলা শহর হতে এই হাটে যেতে এক ঘণ্টার মত সময় লাগে। সাধারনত মটরসাইকেল যোগে এই হাটে যেতে হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের অনেক পণ্য এই হাটে কেনা বেচা হয়।
কিভাবে যাবেন ঃ ঢাকা থেকে যে কোন বাসে (হানীফ, শ্যামলী, এনা) সুনামগঞ্জ যাবেন। ভাড়া ৫৫০ টাকা, সুনামগঞ্জ থেকে অটোতে হালুয়ার ঘাট, ১০ টাকা, সুরমা নদী পার হয়ে বাইকে (৮০/=) বা অটোতে বর্ডার হাট। ।সুনামগঞ্জ থেকে যেতে আনুমানিক সময় ১ঃ৩০ ঘন্টা লাগে ।
টাকা থেকে রুপি করার জন্য জনতা ব্যাংকের একটি বুথও রয়েছে বর্ডার হাটে।
৩। ফেনীর ছাগলনাইয়া বর্ডার হাটঃ২০১৫ সালের ১৩ ই জানুয়ারী থেকে চালু হয়েছে ফেনী আর ত্রিপুরার সীমান্তের এই হাট।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় চার ঘণ্টার গাড়ি পথের দূরত্ব পার হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া আর ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বসছে এরকম একটি সীমান্ত হাট।
দুই দেশের সীমান্তের ঠিক মাঝে তৈরি করা হয়েছে সীমান্ত হাটের কাঠামো। যদিও সপ্তাহে মাত্র একদিন এখানটা সরগরম হয়ে ওঠে।
কাছেই বাড়ি হওয়ায় প্রায়ই বাংলাদেশী পণ্য কিনতে হাটে আসেন এই ক্রেতা চারদিকে ধানক্ষেত, তার মাঝে কয়েকটি আধাপাকা ঘর। একপাশে বাংলাদেশী বিক্রেতারা বসেছেন, অন্যপাশে ভারতীয় বিক্রেতারা। বিজিবি বা বিএসএফকে পাস বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাজারে প্রবেশ করছেন ক্রেতারা।
সীমান্ত হাটে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা চানাচুর, চিপস, আলু, তৈরি পোশাক, মাছ, শুঁটকি, মুরগি, ডিম, সাবান, শিম, সবজি, গামছা ও তোয়ালে, কাঠের টেবিল-চেয়ার, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত লোহার তৈরি পণ্য বিক্রি করে। আর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ফল, সবজি, মসলা, মরিচ, হুলুদ, পান, সুপারি, আলু, মধু, বাঁশ ইত্যাদি বিক্রির সুযোগ পান।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে স্টার লাইন বাসে করে ফেনী ছাগলনাইয়া যাওয়া যাবে। ভাড়া এসি ৩৭০ নন এসি ২৯০। আর ফেনী মহিপাল থেকে গেলে টাউন সার্ভিস অথবা রিকশা করে ডাইরেক্ট শহিদ মার্কেটের সামনে চলে যাবেন, সিএনজিতে গেলে আপনাকে ট্রাংক রোড নেমে আবার রিকশা করে শহিদ মার্কেটের সামনে যেতে হবে, কারণ সিএনজি এখান পর্যন্ত খুব কমই আসে।
আপনি যদি ট্রেনে আসেন তাহলে একদম সহজ স্টেশনে নেমে এক দেড় মিনিট হাঁটলেই শহিদ মার্কেট সেখান থেকে একটু পরপর সিএনজি ছাড়ে, ডাইরেক্ট ছাগলনাইয়া, ছাগলনাইয়া থেকে আবার সিএনজিতে বর্ডার হাট।
হাট বসে প্রতি মঙ্গলবার দুপুর থেকে, যাওয়ার সময় আইডি কার্ড নিয়ে যাবেন, কারণ টিকেট কিনতে আইডি কার্ড লাগে, না নিয়ে গেলে ব্ল্যাকে চড়া দামে কিনতে হবে, সর্বোচ্চ ৭ কেজি মাল কিনতে পারবেন।
৪। ব্রান্মণবাড়িয়ার কসবা বর্ডার হাটঃ১১ই জুন ২০১৫ তারিখে ব্রান্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তের ২০৩৯ নং পীলার সংলগ্ন তারাপুর-কমলাসাগর সীমান্ত সংলগ্ন এই হাটের উদবোধন হয়। আখাউড়ার কসবায় অবস্থিত বডার হাট,এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত প্রতি মঙ্গলবার আর অক্টোবর থেকে মার্চ প্রতি রবিবার হাট বসে। পাস অবশ্যই সকাল ১০:৪৫ এর ভিতর নিতে হবে।
কি দেখবেন আর পাবেন: ভারতীয় অংশে ত্রিপুরার পাহাড়ি কলা, ভারতীয় কসমেটিকস শাড়ী, থ্রি পিস,চকলেট
বিস্কিট ক্রোকারীজ, বাংলাদেশী অংশে প্রায় ফাকা কয়েকটি দোকানে বিস্কুট, শুটকি, নোনা মাছ, টিশার্ট, জামদানী শাড়ী বিক্রি হচ্ছে।বিকেলবেলা আখাউড়া বর্ডারে দুই দেশের প্যারেড এর মাধ্যমে বডার বন্ধ করা হয়,এই প্যারেড দেখতে অনেক লোকজন যায় সেখানে।যাওয়া বা আসার পথে আখাউড়া বাজারে বা কসবা পৌর মার্কেট এলাকায় খাওয়া দাওয়া করতে পারেন।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার কমলাপুর থেকে চিটাগাং, সিলেট বা কুমিল্লার যে কোন ট্রেনে আখাউড়া বা ব্রান্মণবাড়িয়ার বাসে কসবা আসতে পারেন। বিশেষ করে মহানগর প্রভাতী ট্রেনযোগে সকাল ৭:৪৫ এ আখাউড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে ভাল। প্রায় তিন ঘন্টার জার্নি শেষে ১০:৪৫ এ আখাউড়া জাংশনে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে সিএনজি যোগে কসবাতে। প্রায় ৪০ মিনিট জার্নি করে উপজেলা অফিসে পৌঁছে পাস সংগ্রহ করে পাঁচ মিনিট হেঁটে কসবা বর্ডার হাট ।
-
৫। বিছানাকান্দি বর্ডার হাটঃবিছানাকান্দি বর্ডারে প্রতি ৪ দিন পর পর এই হাট বসে। নির্দিষ্ট কোন বার নাই।৪ দিন পর পর যে বার হয়। কোন টিকেট লাগে না।
-
ভবিষ্যতে নতুন করে যেসব এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতের বর্ডার স্থাপিত হতে পারে তা হচ্ছেÑ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘোলাশালা ইউনিয়নের জগমোহনপুর গ্রাম, কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষ্ণপুর গ্রামের দক্ষিণ অংশ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সীমানা পিলারের মধ্যবর্তী স্থান, নওগাঁর সাপাহার শিরন্টি মৌজার খঞ্জন সীমান্ত, নওগাঁর ধামইরহাট কালুপাড়া মৌজার কালুপাড়া সীমান্ত, নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার শীতলবাজার সীমান্ত, রাধানগর মৌজার সীমান্ত, শাওলি সীমান্ত, তালতলা পাড়া, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট গাজীর ভিটা ইউনিয়নের উত্তর নলকুড়া সীমান্ত, ঝিনাইদহের মহেশপুর যাদবপুর ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজা, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর বিজয়পুর সীমান্তে।
গোপন তথ্য-
বর্ডার হাটের কারণে ২ দেশের পণ্য ক্রয় বিক্রয় সহজলভ্য ও ২ দেশের মানূষের মিলনমেলা হলে ও মুলত এটা এখন চোরাকারবারীদের মিলনমেলাতে পরিণত হয়েছে । ২ দেশের চোরাকারবারীরা এই হাটে এসে পরিকল্পণা করে, টাকার লেনদেন করে, তাদের কোন পণ্য কোন পথ দিয়ে কোথায় যাবে সব প্ল্যান প্রোগ্রাম এই হাটের কারণে সহজ হয়ে গেছে ।
http://bangla.bdnews24.com/business/article1221417.bdnews
বিষয়: বিবিধ
২৭৫৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ত্রিপুরা,মেঘালয়ে বাংলাদেশি তৈরি পন্যের অনেক চাহিদা আছে দেখেছি।
ভাবনার বিষয়! বাজারের অভ্যন্তরে অন্য কিছুর মতলব মনে হচ্ছে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন